যুক্তরাষ্ট্রে দুই প্রধান দলের নজিরবিহীন ঐক্য

যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিদলীয় রাজনীতির প্রভাব এখন খুবই প্রবল। তাই কোনো বিষয়ে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মতৈক্যে আনা রীতিমতো কঠিন একটি কাজ। পরিস্থিতি এমন, এক দল যদি তাদের প্রচারসূচিতে ঘোষণা দেয় ‘বাচ্চাকুকুর আদরণীয়’, অন্য দলটি সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাকুকুরবিরোধী বিজ্ঞাপনের বন্যা বইয়ে দেবে। তবে হঠাত্ই একটি বিষয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের একমত হতে দেখা গেছে। সেটি হলো, সম্প্রতি নির্বাচনী ব্যয় নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া একটি রায়ের বিরোধিতা করা।
জানুয়ারিতে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট বিতর্কিত এক রায়ে জানান, এখন থেকে করপোরেশন, শ্রমিক সংঘ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নির্বাচনী প্রচারের সময় সরাসরি তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে অর্থ ব্যয় করতে পারবে। এ রায় নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রে হইচই পড়ে যায় এবং বিরোধিতা শুরু হয়। ২০০২ সালের এক আইনে এ ধরনের ব্যয়ের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত ও সীমারেখা আরোপ করা ছিল। কিন্তু মার্কিন আদালত ওই আইনকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে নতুন এই নির্দেশনা জারি করে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ ও প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট-এর সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, মার্কিনদের একটি বড় অংশ সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক এ আদেশের বিরোধী। জরিপের ফলে দেখা গেছে, প্রায় ৮০ শতাংশ মার্কিন নাগরিক রায়টির বিরোধিতা করেছেন। আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, ৮৫ শতাংশ ডেমোক্র্যাট, ৮১ শতাংশ স্বতন্ত্র ও ৭৬ শতাংশ রিপাবলিকান সুপ্রিম কোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান জানিয়েছেন। জরিপের এমন ফলকে অনেকে নজিরবিহীন বলেছেন।
এ রায়ের কার্যকারিতা ঠেকাতে মার্কিন কংগ্রেসে একটি আইন অনুমোদন করার ব্যাপারে ভালো সমর্থন পাওয়া যাবে, জরিপের ফল থেকে এখন এমন সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭২ শতাংশ জানিয়েছেন, আদালতের আদেশের বিপরীতে কংগ্রেসের নেওয়া পদক্ষেপের পক্ষে তাঁরা সমর্থন দেবেন।
মার্কিন সিনেটে নির্বাচনী ব্যয়বিষয়ক সংস্কার কার্যক্রমের নেতৃত্বে থাকা সিনেটর চার্লস শুমার বলেন, নির্বাচনে বিশেষ স্বার্থান্বেষী মহলের প্রভাব কমানোর ব্যাপারে আনা প্রস্তাবের পক্ষে দুই দলের সমর্থন পাওয়ার আশা করছেন তিনি।
এই জরিপের ফল কিছুটা অবাক করার মতো, কারণ সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পর ওয়াশিংটনে রিপাবলিকান-দলীয় সদস্যরা একে স্বাগত জানিয়েছিলেন। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ডেমোক্র্যাটিক-দলীয় অন্য সদস্যরা এর সমালোচনা করে রায় ঘোষণার দিনটিকে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য একটি কালো দিবস হিসেবে অভিহিত করেন।

No comments

Powered by Blogger.