বেসামরিক লোকজনকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে তালেবান

আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মারজাহতে তালেবান জঙ্গিরা বেসামরিক লোকজনকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে বলে গতকাল বুধবার অভিযোগ করেছেন একজন আফগান সেনা কর্মকর্তা। এদিকে শহরটিতে তালেবানের খোঁজে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি শুরু করেছেন ন্যাটো ও আফগান সেনারা।
মারজাহ ও এর আশপাশের এলাকায় পরিচালিত ওই অভিযানে অংশ নিয়েছেন প্রায় ১৫ হাজার ন্যাটো ও আফগান সেনা। মারজায় আফগান সেনাবাহিনীর ব্রিগেড কমান্ডার জেনারেল মহিউদিন ঘোরি বলেন, মনে হচ্ছে, তালেবান জঙ্গিরা নারী ও শিশুদের কিছু কিছু বাড়ির ছাদে অথবা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করছে। এবং ওই বাড়িগুলো থেকে কিংবা বাড়িগুলোর আশপাশ থেকে তারা আফগান সেনাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে।
তিনি বলেন, বিশেষ করে মারজাহর দক্ষিণে এ ঘটনা ঘটছে। সেনারা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছেন যে কিছু বাড়ির ছাদের নারী ও শিশুরা অবস্থান করছে। তৃতীয় ও চতুর্থ তলার জানালায়ও নারী ও শিশুদের দেখা যাচ্ছে। শত্রুরা ওই সব বাড়ি থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। জেনারেল ঘোরি আরও বলেন, তারা চাইছে, সেনারা যেন তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালান এবং এতে বেসামরিক লোকজন মারা যায়।
২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর অভিযানের পর এটাই সবচেয়ে বড় যৌথ অভিযান। এ অভিযানকে বেসামরিক লোকজনকে রক্ষায় ন্যাটোর কৌশলের বড় ধরনের পরীক্ষা হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে।
জেনারেল ঘোরি বলেন, জঙ্গি ও বেসামরিক লোকজনের পার্থক্য বোঝার জন্য সেনাদের আরও অনেক ধীরগতিতে এগোতে হবে। কিন্তু এসব সতর্কতা সত্ত্বেও অভিযানে বেসামরিক লোকজন মারা পড়ছে। ন্যাটো বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে এ অভিযানে এ পর্যন্ত ১৫ জন বেসামরিক লোক মারা গেছেন। কিন্তু আফগান মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, অভিযানে কমপক্ষে ১৯ জন বেসামরিক লোক প্রাণ হারিয়েছেন।
তালেবানের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার মোল্লা আবদুল রাজ্জাক আখন্দ এ অভিযানকে ন্যাটোর প্রোপাগান্ডা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তালেবানের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মারজাহ সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়।
আফগান কর্মকর্তারা জানান, মারজাহ অভিযানে এ পর্যন্ত ন্যাটোর চার সেনা নিহত হয়েছেন। গত শনিবার মারা যান এক মার্কিন ও এক ব্রিটিশ সেনা। গত মঙ্গলবার নিহত দুই সেনার জাতীয়তা প্রকাশ করা হয়নি। মঙ্গলবার এক আফগান সেনাও প্রাণ হারান।
গতকাল বুধবার ন্যাটোর এক বিবৃতিতে বলা হয়, অপারেশন মুশতারাকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক সেনা নিহত হয়েছেন। ন্যাটো জানায়, গত মঙ্গলবার ছোট আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে ওই সেনা প্রাণ হারান। তবে নিহত সেনার জাতীয়তা প্রকাশ করা হয়নি।
মার্কিন মেরিন কর্মকর্তারা বলেছেন, তালেবান এখন আগের চেয়ে অনেক বিশৃঙ্খল। জেনারেল ঘোরি বলেন, অভিযানের শুরুতে তালেবানরা যে হারে মর্টার ও রকেটচালিত গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল, এখন ওই হার অনেক কমে এসেছে। এতে ইঙ্গিত মিলছে যে তালেবানের মজুদ ফুরিয়ে গেছে কিংবা তাদের ভারী অস্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.