বাংলাদেশের বিপক্ষে চাপে থাইল্যান্ড

কোচ ও অধিনায়কদের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে সবার পরে এলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক সুইনু প্রু মারমা। খর্বাকৃতির পাহাড়ি তরুণীর জন্য এ এক নতুন অভিজ্ঞতা! দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকর্মীদের মুহুর্মুহু ক্যামেরার ফ্ল্যাশ, প্রথমবারের মতো হাজারো প্রশ্ন সামলানো। প্রথমবারের মতো কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেরও অধিনায়ক সুইনু। কিন্তু চেহারায় স্নায়ুচাপের বালাই নেই, চটপটে উত্তর, ‘কোনো চাপ নিচ্ছি না আমরা।’
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে আজ শুরু মহিলা এশিয়ান কাপ ফুটবল বাছাইপর্বের ‘বি’ গ্রুপের খেলা। এই প্রথম বড় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ মহিলা দল, স্বাগতিক দলটির তাই হারানোর কিছু নেই, কিন্তু পাওয়ার আছে অনেক কিছু। অংশগ্রহণকারী চার দলের মধ্যে বাংলাদেশের র‌্যাঙ্কিং সবার নিচে (১০৮), সবার ওপরে থাইল্যান্ডের (২৯)। এই ব্যবধানই ফেবারিট করে তোলে থাইল্যান্ডকে, তারওপর তারা টুর্নামেন্টের সাবেক চ্যাম্পিয়ন। শক্তিশালী থাইল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্বলতম বাংলাদেশ জয়ের আশা করতে পারছে না। তবে যেটি পারছে, তা হলো সর্বস্ব উজাড় করে থাই মেয়েদের রুখে দাঁড়ানোর। সুইনু দেশকে জয়ের স্বপ্ন না দেখিয়ে বলছেন, ‘ভালো খেলা উপহার দিতে চাই।’ কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানী আছেন অঘটনের আশায়। দেড় মাসের ক্যাম্প, সঙ্গে তিনটি প্রস্তুতি ম্যাচের ভালো ফল। সব মিলিয়ে আত্মবিশ্বাসী তিনি। কিন্তু থাইল্যান্ডকে দিচ্ছেন যোগ্য সম্মান, ‘ওরা র‌্যাঙ্কিংয়ে ২৯তম। এটাই আসলে পার্থক্য গড়ে দেবে।’ সাম্প্রতিক সময়ে থাইল্যান্ডের মেয়েদের পারফরম্যান্সও ঈর্ষণীয়। ইরানকে ১২-০ ও ফিলিপাইনকে ৫-১ গোলে হারিয়েছে। থাইল্যান্ডের বিপক্ষে জিলানী থাকতে চান সতর্ক, ‘আমরা প্রথম ১০ মিনিট থাইল্যান্ডের খেলাটা পর্যবেক্ষণ করব। এরপর ঠিক করব রক্ষণাত্মক, না আক্রমণাত্মক কৌশল নেব।’
কন্ডিশন নিজেদের অনুকূলে। র‌্যাঙ্কিং, ফিটনেস, ট্যাকটিকস, স্ট্যামিনা, গড় উচ্চতা—সব দিক দিয়েই এগিয়ে থাইল্যান্ডের মেয়েরা। এর পরও যেন একটু চাপেই থাইল্যান্ডের কোচ পিয়াকুল কেওনাম কাং, ‘আমরা মোটেই বাংলাদেশকে হালকাভাবে নিচ্ছি না।’ সংবাদ সম্মেলনের ভিড়ই যেন তাঁর চাপটা বাড়িয়ে দিয়েছে আরও, ‘এভাবে যদি কাল (আজ) মাঠেও দর্শক উপচে পড়ে তাহলে আমরাই চাপে থাকব।’
গ্রুপের অন্য দুই দল ইরান ও ফিলিপাইনেরও খেলা আজই। র‌্যাঙ্কিংয়ে ফিলিপাইনের (৮৩) চেয়ে ৩১ ধাপ এগিয়ে ইরান (৫২)। পেশাদার লিগে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়েও অবশ্য প্রথমবারের মতো তারাও অংশ নিচ্ছে এই টুর্নামেন্টে। দলের পর্তুগিজ কোচ হেলেনা ডি কস্তা ঢাকা থেকে চূড়ান্ত পর্বে খেলার টিকিটই কাটতে চান, ‘আমরা জানুয়ারিতে জর্ডানের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছি। পরে রাশিয়ায় একটি টুর্নামেন্টে খেলে চতুর্থ হয়েছি। র‌্যাঙ্কিং বিবেচনায় নিলে এখানে থাইল্যান্ডই ফেবারিট। কিন্তু আমরাও চূড়ান্ত পর্বে যেতে চাই।’ অভিন্ন লক্ষ্যের কথা বললেন ফিলিপাইনের কোচ লেতেসিয়া বাতিস্তাও, ‘আমাদের এই দলের বেশির ভাগ খেলোয়াড় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। এখানে খেলতে আসার আগে সবাই কঠোর অনুশীলন করেছে। আমরা তিনটি ট্রেনিং ক্যাম্পের দুটিই করেছি যুক্তরাষ্ট্রে। নভেম্বরে খেলেছি এলএ ভাইকিংস কাপে। কোনো প্রতিযোগীই হারতে চায় না। আমরাও এখানে জিততে এসেছি।’
মহিলা এশিয়ান কাপ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে সরাসরি উঠে গেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, জাপান, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া। আগামী বছর জাপানে অনুষ্ঠেয় চূড়ান্ত পর্বে এদের সঙ্গী হবে চার গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন চারটি দল। ‘বি’ গ্রুপ থেকে কারা যাবে জাপানে, সেটি জানতে কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতেই হচ্ছে। থাইল্যান্ড, ইরান, ফিলিপাইন—সবাই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে চায়। কিন্তু নিজেদের মাটিতে, নিজেদের দর্শকের সামনে বাংলাদেশ নিশ্চয়ই সবার নিচে পড়ে থাকতে চাইতে পারে না! সুইনু-সাবিনাদের সেটিই দেখানোর পালা আজ থেকে।
সূচি
২১ মে ইরান-ফিলিপাইন বিকেল ৪টা
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড সন্ধ্যা ৭টা
২৩ মে ফিলিপাইন-থাইল্যান্ড বিকেল ৪টা
বাংলাদেশ-ইরান সন্ধ্যা ৭টা
২৫ মে থাইল্যান্ড-ইরান বিকেল ৪টা
বাংলাদেশ-ফিলিপাইন সন্ধ্যা ৭টা
* সব ম্যাচ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে

No comments

Powered by Blogger.