নাইজেরিয়ায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত ৩০০

নাইজেরিয়ায় মুসলমান ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে তিন দিনে প্রায় ৩০০ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ৮০০ জন। গৃহহীন হয়েছে তিন হাজার মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি বিপুলসংখ্যক সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে সহিংসপূর্ণ এলাকায়। দেশটির সরকার দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে চলমান সহিংসতার স্থায়ী সমাধানের ঘোষণা দিয়েছে। খবর এএফপি ও বিবিসির।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, নাইজেরিয়ার মধ্যাঞ্চলে খিষ্টান অধ্যুষিত যশ শহরে গত রোববার সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে এ সংঘর্ষ আশপাশের শহরগুলোতেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, যশ শহরে একটি মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের সূচনা হয়।
নাইজেরিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট গুডলাক জোনাথন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করে সেখানে অতিরিক্ত সেনা পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সহিংসপূর্ণ এলাকার পরিস্থিতি বুঝে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বিমান কর্তৃপক্ষ জানান, সংঘর্ষের কারণে প্লেটিয়ু প্রদেশের রাজধানী যশের সব ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
খ্রিষ্টান ও মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা এবং হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত সংঘর্ষে প্রায় ৩০০ লোক মারা গেছে। তবে সরকারের তরফ থেকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো হিসাব জানানো হয়নি।
নাইজেরিয়ার খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সংগঠনের সেক্রেটারি রেভারেন্ড চাং ডাবো বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) পর্যন্ত যশ শহরে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ৫০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা গেছে। এ ছাড়া যশের পার্শ্ববর্তী শহর বুকুরুতে আরও ১৫ জন নিহত হয়েছে।
মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা বালারাবি দাউদ বলেন, মঙ্গলবার ১৯২টি মরদেহ যশ শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদে আনা হয়েছে। সোমবার আনা হয়েছে আরও ২৬টি মরদেহ। তিনি জানান, সংঘর্ষে প্রায় ৮০০ লোক আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত ৯০ জনকে সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
যশ শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ শিততু বলেন, আহত লোকজনে ভরে গেছে মসজিদ । আশপাশের হাসপাতালগুলোও ভর্তি হয়ে গেছে। অনেক হাসপাতালের চিকিত্সা সরঞ্জাম ফুরিয়ে গেছে।
একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিত্সক মরিয়ম মোহাম্মদ বলেন, বুকুরুতে মঙ্গলবার আরও পাঁচ ব্যক্তি মারা গেছে। তিনি বার্তা সংস্থা এএফপির সংবাদদাতাকে বলেন, ‘আমি যখন আপনার সঙ্গে কথা বলছি, তখনো সংঘর্ষ চলছে। যদিও সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত আমরা আহত ৫০ জনকে পেয়েছি। তাদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।’
রেডক্রস বলেছে, সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়েছে। ঘরছাড়া হয়েছে অন্তত তিন হাজার মানুষ। তারা সহিংসপূর্ণ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।
যশের প্রাদেশিক তথ্য কমিশনার গ্রেগরি ইয়েনলং বলেন, স্থিতিশীলতা ফিরে না আসা পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যশ শহরের বাসিন্দা ডেভিড মাইয়াকি বলেন, কারফিউ ঘোষণার পরও সংঘর্ষ চলছে। তিনি বলছিলেন, ‘আজ গুলির শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙেছে। আমাদের চারদিকে গোলাগুলি চলছে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ ইব্রাহিম মুদি বলেন, ‘এখান থেকেই গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। যশের উত্তরাঞ্চলে ঘরবাড়ি থেকে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।’
সহিংসপূর্ণ কুরু কারামা শহর থেকে যশে পালিয়ে এসেছেন ইদ্রিস কারকি। তিনি বলেন, ‘কুরু কারামা, বিসিজি ও সাবোনগিদান ও কানারে এখনো সংঘর্ষ চলছে। আমার মতো যারা ভাগ্যবান তারা পালিয়ে আসতে পেরেছে। সেখানে অনেককেই হত্যা করা হয়েছে।’
ভাইস প্রেসিডেন্ট জোনাথন এ সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, যশ সংকটের একটা চূড়ান্ত সমাধানে আসতে কেন্দ্রীয় সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
এর আগে ২০০৮ সালের নভেম্বরে যশ শহরে খ্রিষ্টান ও মুসলমানদের মধ্যে দুই দিনব্যাপী সংঘর্ষে কয়েক শ লোক নিহত হয়। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে প্লেটিয়ু প্রদেশের পার্শ্ববর্তী বরনো প্রদেশে সংঘর্ষে অন্তত ৮০০ লোক নিহত হয়। ডিসেম্বরে বাউচি প্রদেশে নিহত হয় ৭০ জন।

No comments

Powered by Blogger.