নাসফিয়ার আত্মহত্যা

বখাটে যুবকের নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে আরেকজন স্কুলছাত্রীকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হলো। নারীর অবমাননা, তাদের উত্ত্যক্ত করা ও যৌন হয়রানি গুরুতর অপরাধ। কিন্তু এ সমাজে নারী প্রায় ক্ষেত্রেই বিচার-বঞ্চনার শিকার। তাই হয়তো অপমানিত স্কুলছাত্রী নাসফিয়া আত্মহত্যার পথ বেছে নিল। রাজধানী ঢাকার শ্যামলী এলাকার এক যুবক প্রায়ই তাকে উত্ত্যক্ত করত বলে অভিযোগ রয়েছে। মঙ্গলবার সে তাকে মারধর করলে নাসফিয়া মৃত্যুর পথ অবলম্বন করে। এ জন্য দায়ী সেই অভিযুক্ত যুবক। তাকে এই মুহূর্তে গ্রেপ্তার করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোই এখন পুলিশের প্রধান দায়িত্ব।
নারীর ক্ষমতায়নের কথা সব সময় বলা হয়। কিন্তু কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে পথেঘাটে, এমনকি নিজ গৃহে নারী যৌন হয়রানির শিকার। কোনো সভ্য দেশে এ রকম চলতে পারে না। নারীর অবমাননার বিচার ও সমুচিত শাস্তি নিশ্চিত করা হয় না বলেই এই অসহনীয় অবস্থা। আমাদের দেশে নারীদের উত্ত্যক্ত করা এবং যৌন হয়রানির অধিকাংশ ঘটনাই ধামাচাপা দেওয়া হয়। তথাকথিত সমাজপতিদের দৌরাত্ম্যে নির্যাতিত নারীকে সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। নয়তো আত্মহত্যার পথে যেতে হয়।
অথচ নারীর যৌন হয়রানি রোধে আদালতের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। ২০০৯ সালের ১৪ মে হাইকোর্ট এ বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রদান করেন। সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে পালনীয় কিছু দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়। এর অন্যতম হলো যৌন হয়রানির শিকার কোনো নারীর তাঁর পরিচয় গোপন রেখেই অভিযোগ পেশ ও প্রতিকার দাবির সুব্যবস্থা করা। এ জন্য সব কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্তৃপক্ষ কমপক্ষে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করবে, যার অধিকাংশ সদস্য হবেন নারী এবং সম্ভব হলে কমিটির প্রধান হবেন নারী। এখন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্তব্য হলো, কমিটিগুলো গঠন এবং সেখানে সব অভিযোগের যথাযথ তদন্ত ও অপরাধ প্রমাণিত হলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সংবিধান অনুযায়ী, এ বিষয়ে আইন প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত আদালতের নির্দেশনাই আইন হিসেবে গণ্য হবে। তাই এই নির্দেশনার ব্যাপক প্রচার ও সর্বস্তরের নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার। নির্দেশনায় যৌন হয়রানির বিশদ সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। নারীর উদ্দেশে অশ্লীল মন্তব্য, অঙ্গভঙ্গি, মুঠোফোনে উত্ত্যক্ত করা থেকে শুরু করে শারীরিক ও মানসিক হয়রানি—সবই শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই নির্দেশনাগুলোর যথাযথ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হলে এ ধরনের অপরাধ কমে আসার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।
কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বিশ্ব পরিসরে ক্রমেই বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন কর্মজীবীদের অর্ধেক নারী। গবেষণাভিত্তিক এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে নারী কর্মজীবীদের সংখ্যা মোট কর্মজীবীদের অর্ধেকের বেশি হয়ে যাবে। আমাদের দেশেও এই ধারাই অনুসৃত হবে, তার লক্ষণ এখনই দৃশ্যমান। সংখ্যাগুরু অংশের অবমাননার ওপর কোনো ন্যায়ভিত্তিক সমাজ টিকে থাকতে পারে না। নারী-পুরুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমেই সমাজের এই অসংগতির অবসান সম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.