ম্যাসাচুসেটসে ৩৮ বছর পর রিপাবলিকান প্রার্থীর জয়

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে সিনেট উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হেরে গেছেন। সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির শূন্য আসনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর পরাজয়কে দলের জন্য অশনিসংকেত বলে মনে করা হচ্ছে। নির্বাচনে ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী স্কট ব্রাউন। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী মার্থা কোয়াকলি পেয়েছেন ৪৭ শতাংশ ভোট।
ডেমোক্রেটিক পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ম্যাসাচুসেটস। ১৯৭২ সালের পর ওই রাজ্য থেকে কোনো রিপাবলিকান প্রার্থী জয়ী হতে পারেননি। সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির মৃত্যুতে শূন্য হওয়া আসনে গত মঙ্গলবার ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী জয়ী হওয়ায় কংগ্রেসের উচ্চকক্ষে ৬০ ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাল ডেমোক্রেটিক পার্টি। ১০০ আসনের সিনেটে ৪১টি এখন রিপাবলিকানদের দখলে। ডেমোক্রেটিক পার্টির যেকোনো আইন প্রণয়নের উদ্যোগ এখন বিতর্ক দিয়ে বাধাগ্রস্ত করতে পারবেন রিপাবলিকানরা।
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বহুল আলোচিত স্বাস্থ্য সংস্কার কর্মসূচির বাস্তবায়নও এখন অনিশ্চয়তায় মুখে পড়েছে। গত মাসে সিনেটে পাস হওয়া স্বাস্থ্য সংস্কার প্রস্তাবটি আইনে পরিণত হওয়ার অপেক্ষায়। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে এর আগে অনুমোদিত হওয়া পৃথক একটি স্বাস্থ্য সংস্কার প্রস্তাবের সঙ্গে এর সমন্বয়ের কাজ চলছে। উপনির্বাচনের ফলাফলের পর প্রস্তাবিত স্বাস্থ্য সংস্কারের বাস্তবায়ন নিয়ে উদ্বিগ্ন ওয়াশিংটনের নীতিনির্ধারকেরা। সিনেটে অনুমোদন হওয়া প্রস্তাবে কোনো পরিবর্তন আনা হলে পুনরায় আস্থা ভোটের প্রয়োজন পড়বে। আস্থা ভোটের জন্য পর্যাপ্ত ৬০ ভোট এখন ডেমোক্র্যাটদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। রিপাবলিকান আইন প্রণেতারা এখন সহজেই আইন প্রস্তাবটি বাধাগ্রস্ত করতে পারবেন।
ক্ষমতা গ্রহণের এক বছরের মাথায় বড় ধরনের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট ওবামা। সম্প্রতি নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যে গভর্নর পদে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। অর্থনৈতিক মন্দা, বেকারত্ব, স্বাস্থ্যবিমা ও আবাসনসংকট নিয়ে দেশজুড়ে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। ম্যাসাচুসেটস উপনির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের হতাশার বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। নাটকীয় কোনো পরিবর্তন না ঘটলে আগামী নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির ভরাডুবি অবশ্যম্ভাবী বলে মনে করছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
উপনির্বাচনের ফলাফল আসার পর বিজয়ী স্কট ব্রাউন বলেছেন, ‘ম্যাসাচুসেটসের জনগণ স্পষ্টভাবে তাঁদের রায় দিয়েছেন। আমি কোনো দলের নয়, জনগণের প্রতিনিধি। কোনো বিলম্ব না করে আমি ওয়াশিংটনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।’
সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হ্যারি রিড বলেছেন, ‘স্কট ব্রাউনকে আমরা আইনসভায় স্বাগত জানাই। যথাযথ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর শিগগির ব্রাউন সিনেটের অধিবেশনে যোগ দেবেন।’
দলীয় প্রার্থী কোয়াকলির পরাজয়ে হতাশা ও ক্ষুব্ধ ডেমোক্র্যাট শিবির। সিনেটর টেড কেনেডির শূন্য আসনে রিপাবলিকান প্রার্থীর জয়কে দলের জন্য অশনিসংকেত বলে মনে করা হচ্ছে। ডেমোক্র্যাট সমর্থকদের অভিযোগ, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এবং দুর্বল প্রচারণাই মার্থা কোয়াকলির পরাজয়ের কারণ। মার্থা মূলত প্রচারণা চালিয়েছেন নগর এলাকায়। এর মধ্যে মার্থা নিজেই বড়দিন উপলক্ষে পুরো এক সপ্তাহ নির্বাচনী প্রচারণায় অনুপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে রিপাবলিকান প্রার্থী স্কট ব্রাউন টানা প্রচারণা চালিয়েছেন। শহরতলি ও প্রত্যন্ত জনপদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া প্রেসিডেন্ট ওবামার বিরোধী বিভিন্ন মহল এ উপনির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিল। টি-পার্টি আন্দোলনসহ রক্ষণশীল শিবিরের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল স্কট ব্রাউনের প্রচারণায়। স্বতন্ত্র ভোটারদেরও ব্যাপকভাবে কাছে টানতে সক্ষম হয়েছে রিপাবলিকান পার্টি। অর্থনৈতিক মন্দা, বেকারত্ব ও স্বাস্থ্য সংস্কার বিষয়ে বিভক্ত জনমতকে চাঙা করার সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন রক্ষণশীলেরা।

No comments

Powered by Blogger.