বিকল্প ভাবছে এইচঅ্যান্ডএম!

লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার দেশে পোশাক
উত্পাদন আকর্ষণীয় হতে পারে কার্ল জোয়ান
পিয়ারসন প্রধান নির্বাহী, এইচঅ্যান্ডএম
বাংলাদেশি পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএম লাতিন আমেরিকা ও আফ্রিকার দেশগুলোর দিকে ঝুঁকছে।
সুইডেনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি নতুনভাবে বিবেচনা করছে নিজেদের শোরুমগুলোতে যে পোশাক তারা বিক্রি করে, তা আমেরিকা ও আফ্রিকার দেশগুলোতে উৎপাদন করা যায় কি না। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে গতকাল সোমবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন তথ্যই দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কার্ল জোয়ান পিয়ারসন।
পিয়ারসন বলেছেন, ‘বিশ্বের ওই অংশটিও (লাতিন আমেরিকা) এগিয়ে যাচ্ছে। সে কারণেই দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার দেশগুলোতে পোশাক উৎপাদন কার্যক্রম আকর্ষণীয় হতে পারে। আমরা সেই সুযোগটি কাজে লাগাতে চাই। আমরা আফ্রিকার দিকেও নজর দিচ্ছি।’ বিশ্বের খ্যাতনামা সব গণমাধ্যমে এখন এই সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বড় বড় সব প্রতিবেদন তৈরি হচ্ছে।
এইচঅ্যান্ডএম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম খুচরা পোশাক বিক্রেতাপ্রতিষ্ঠান। বিশ্বব্যাপী প্রায় দুই হাজার ৬০০ শোরুম রয়েছে এদের।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে কার্ল জোয়ান পিয়ারসনের নেতৃত্বে এইচঅ্যান্ডএমের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে সফরে এসেছিল। ৩ সেপ্টেম্বর তৈরি পোশাকশিল্প মালিক সমিতি বিজিএমইএর সঙ্গে বৈঠক করে তারা। বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএর তৎকালীন সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ১০০ কোটি ডলারের পোশাক কেনে এইচঅ্যান্ডএম। প্রতিষ্ঠানটি আগামী পাঁচ বছরে তাদের ব্যবসার পরিধি দ্বিগুণ করতে চায়। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানিও দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা তাদের রয়েছে।
তবে নভেম্বরে সাভারে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। আর গত মাসে রানা প্লাজা ধসে এক হাজার ১২৭ জন নিহত হওয়ার পর অনেক ক্রেতা-প্রতিষ্ঠানই এ দেশের পোশাক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে। এরই মধ্যে কিছু দুঃসংবাদও এসেছে। আমেরিকার প্রতিষ্ঠান ডিজনি জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে তারা আর কোনো পোশাক কিনবে না। কয়েক দিন আগে ওয়াল-মার্ট বাংলাদেশের অনুমোদনহীন ২৫০টি পোশাক কারখানার তালিকা প্রকাশ করেছে। মানোন্নয়ন না করা পর্যন্ত ওই সব কারখানা থেকে পণ্য না কেনার ঘোষণাও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই বড় খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশের কারখানা ধসের পরিপ্রেক্ষিতে এইচঅ্যান্ডএম পোশাক কেনার বর্তমান কৌশল পরিবর্তন করছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে পিয়ারসন বলেন, ‘অবশ্যই। আমাদের বিষয়টি নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। কারণ, এটা (বাংলাদেশের ভবনধসের ঘটনা) মর্মান্তিক। কী ঘটছে ওই দেশটিতে!’
বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম অবশ্য এখনই এমনটি হবে না বলে মনে করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পোশাকের ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছি। তারা এখান থেকে পোশাক কেনা বন্ধ করবে না। তবে তারা দ্বিতীয় আরেকটি দেশ খুঁজছে, এটাও সত্য।’
এইচঅ্যান্ডএমের প্রধানের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, ‘এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। ২৫-৩০ বছর ধরে আমরা যে উন্নয়ন ঘটিয়েছি, চাইলেও রাতারাতি কোনো দেশ তা করতে পারবে না। অন্য দেশগুলো থেকে আমরা এ জায়গায় এগিয়ে আছি। হয়তো এখান থেকে পোশাক কেনা কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে তারা। কিন্তু একেবারে চলে যাবে না।’
তবে রানা প্লাজায় যেসব কারখানা ছিল, তার কোনোটিতেই এইচঅ্যান্ডএমের জন্য পোশাক তৈরি হতো না বলে মন্তব্য করেন পিয়ারসন। সাক্ষাৎকারে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব একটি নীতিমালা আছে। এতে আবাসিক ভবনে পোশাক কারখানা গড়ে তোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।’
এইচঅ্যান্ডএমের প্রধান পিয়ারসন জানান, এ বছরই চিলিতে পোশাক বিক্রির শোরুম খোলার মধ্য দিয়ে তাঁর প্রতিষ্ঠান লাতিন আমেরিকার বাজারে প্রবেশ করছে। মেক্সিকো ও ব্রাজিলের দিকেও নজর রয়েছে তাঁর প্রতিষ্ঠানের।
এদিকে এইচঅ্যান্ডএম, ইন্ডিটেক্স, প্রাইমার্ক ও সিঅ্যান্ডএ বাংলাদেশে পোশাক খাতে দক্ষতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিয়েছে। এরা এ খাতে ৫০ লাখ ডলার ব্যয় করবে। এ নিয়ে গতকাল সোমবার বাংলাদেশের এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠক করে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মনে হয় না, তারা রাতারাতি এ দেশ থেকে চলে যাবে। কারণ, তারা এ দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ পোশাক কেনে।’

No comments

Powered by Blogger.