অতিথি পাখি শিকার -‘অপনা মাঁসে হরিণা বৈরী...’

‘অপনা মাঁসে হরিণা বৈরী/ক্ষণহ ন ছাড়অ ভুসুকু অহেরী’—প্রাচীন বাংলা কাব্য চর্যাপদের এ পঙিক্তটি অবিস্মরণীয়। হরিণের শত্রু যেমন তার নিজের মাংসের স্বাদ, শিকারি ভুসুকু তা সামনে পেয়েও কি লোভ ছাড়তে পারে? সেকালে যেমন, একালেও এই কথা সমান সত্য। উষ্ণতার সন্ধানে বাংলাদেশের হাওর-বিল-জলাশয়ে আশ্রয় নিতে আসা অতিথি পাখিদেরও কাল হয়েছে তাদের শরীরের মাংস। এর লোভেই একশ্রেণীর রসনাকাতর মানুষের ভোগের জন্য অতিথি পাখিদের শিকার করে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এটা কেবল নিষ্ঠুরতাই নয়, বর্বরতারই নামান্তর।
অথচ পাখি হলো প্রকৃতির শিশু। পাখির স্বভাবের অমলিন উচ্ছলতা শিশুদের মতোই, তা হূদয়ে স্নেহবোধের জন্ম দেয়, মনকে দেয় সুন্দরের সাহচর্য। পাখির সৌন্দর্য আমাদের মধ্যে মমতার অনুভব জাগায়। অথচ হাজার হাজার পাখির কলকাকলিতে যখন কেউ দেখে প্রকৃতির অপরূপ লীলা, তখন অন্য কেউ হয়তো একগুচ্ছ স্বাদু মাংসের ওড়াউড়ি দেখে লোভী হয়ে ওঠে। গত বুধবারের প্রথম আলোয় পাশাপাশি প্রকাশিত দুটি ছবি পাখিদের প্রতি মানুষের নির্মমতা ও ভালোবাসার দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বিষটোপের শিকার হয়ে মরে পড়ে থাকা মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওরের অনেক অতিথি পাখি। শিকারিরা বিক্রির জন্য তাদের বিষটোপ দিয়ে হত্যা করেছে। পাশের ছবিটি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সেবায় সুস্থ হয়ে ওঠা একটি বিরল লক্ষ্মীপেঁচার। ওই শিক্ষার্থী আহত পাখিটিকে সেবা দিয়ে বাঁচিয়ে তুলে বনে ছেড়ে দিয়েছেন। দুটি চিত্র কত আলাদা। কবি রণজিত্ দাশগুপ্ত লিখেছিলেন, বৃক্ষে হাত দিয়ে ব্যবসায়ী দেখে কেবলই কাঠ আর কবি টের পায় প্রাণ। ওপরের দুটি ঘটনা প্রকৃতির শিশুদের প্রতি মানুষের অন্যায় আর ভালোবাসার দুটি বিপরীত নজির হয়ে আছে।এ দুয়ের সহাবস্থান সম্ভব নয়। আমরা চাই, পাখি হত্যা বন্ধ করায় বন বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রশাসন ও গণমাধ্যমে যার যার ভূমিকা পালন করবে।

No comments

Powered by Blogger.