যখন রাষ্ট্র গঠনের সময়, তখন ‘মব’ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে: ফরহাদ মজহার
আজ শনিবার ‘অভ্যুত্থান–পরবর্তী কেমন বাংলাদেশ চাই?’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় ফরহাদ মজহার কথাগুলো বলেন। ঢাকা কলেজ মিলনায়তনে ওই আলোচনার আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা কলেজ।
কলেজ মিলনায়তনভর্তি শ্রোতাদের উদ্দেশে ফরহাদ মজহার প্রশ্ন রাখেন, গণ–অভ্যুত্থানের বিজয় কি হয়েছে, না হয়নি? অনেকে তখন ‘না’ আবার অনেকে ‘হ্যাঁ’ বলে জবাব দেন। পরে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘না, আমরা জয়ী হইনি। আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ব্যর্থ হওয়ার কারণটা কী? কারণ, আমরা এখনো মব। কোনো একটা ঘটনা ঘটলে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি, আবেগের দ্বারা। আবেগের দ্বারা কখনো কোনো বড় কাজ করা যায় না।’
মাজার ভাঙার সমালোচনা করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘মাজার সম্পর্কে আপনি সমালোচনা করতে পারেন, আপনি ফতোয়া দিতে পারেন, নিন্দা করতে পারেন...। কিন্তু আপনাকে তো ফতোয়া বাস্তবায়িত করার অধিকার ইসলাম দেয়নি।’
ফরহাদ মজহার বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের অর্থ হলো পুরোনো ব্যবস্থাকে উৎখাত করে নতুন ব্যবস্থার পত্তন। রাষ্ট্র, রাজনীতি, আইন না বোঝার কারণে শত্রুপক্ষ সংবিধান ও আইনের নামে প্রতিবিপ্লব ঘটিয়েছে। বর্তমান সংবিধানে ফ্যাসিস্ট শক্তি নিজেকে হাজির রেখেছে। গণ–অভ্যুত্থানের পর সে সংবিধানের ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রপতির কাছে উপদেষ্টারা শপথ নিয়েছেন এই সংবিধান রক্ষা করার।
ফরহাদ মজহার বলেন, আয়নাঘর, গুম-খুনে জড়িত ব্যক্তিরা পালিয়ে গেছে। বিপ্লব কোনো ডিনার পার্টি নয়। এখন উল্লাস করার সময় নেই।
ব্যক্তিকে সরানো হলে ব্যবস্থা আপনা–আপনি বদলে যায় না—এমন মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলেন, বিজয়কে পূর্ণতার দিকে নিয়ে যেতে হলে অবশ্যই ‘আমাদের প্রেসিডেন্ট’ নিয়োগ করতে হবে। তিনি জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি হিসেবে হাজির হবেন। তাঁর প্রধান কাজ হবে জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করা।
নতুন যে সংবিধান হবে, সেখানে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে প্রধান তিনটি বিষয় থাকা জরুরি বলে মনে করেন ফরহাদ মজহার। সেগুলো হলো রাষ্ট্রের কোনো অধিকার থাকবে না ব্যক্তির স্বাধীনতা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার, রাষ্ট্রের ওপর থাকবে জনগণ। ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষা করা হবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্র প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য–সংশ্লিষ্ট জ্ঞান ও ঐতিহ্য ধ্বংস করতে পারবে না।
ফরহাদ মজহার বলেন, বর্তমান সরকারের প্রথম কাজ জনগণের অভিপ্রায় শোনা। তারা কি শুনছে, তাহলে গণতন্ত্র কোথায়—এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘কথা শোনা তো দূরের কথা, তারা তাদের পছন্দের লোক বিভিন্ন জায়গায় বসিয়ে দিচ্ছে। আপত্তি নেই, ভালো লোক থাকতে পারে, খারাপ লোক থাকতে পারে। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে, কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে এই লোকগুলো বসছে, সে ব্যাপারে স্বচ্ছতা নেই।’
এ মুহূর্তে নির্বাচন দাবির সমালোচনা করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র বলতে বুঝি নির্বাচন দাও, নির্বাচন দাও। যেন আমি আগামী ১৫ বছর লুটপাট করতে পারি।’
একই সঙ্গে যাঁরা বিএনপির বিরোধিতা করছেন, তাঁদেরও সমালোচনা করেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, বিএনপি ভুল করতে পারে। তার সমালোচনা করা যায়। বিএনপির কি কোনো অবদান নেই আন্দোলনে—এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যদি ফ্যাসিস্ট শক্তির সাজানো নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান না করতেন, তাহলে এই গণ–অভ্যুত্থান ঘটত না।
আমান আযমীর জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবিরও সমালোচনা করে ফরহাদ মজহার বলেন, জাতীয় সংগীত এখন সমস্যা নয়। রবীন্দ্রনাথ একটি ইতিহাসের অংশ। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ঐতিহ্যের অংশ। রবীন্দ্রনাথকে বাদ দেওয়া যাবে না। ঐতিহ্য ভুলে গেলে সমাজ ফ্যাসিস্ট হয়ে থাকে।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘কেমন বাংলাদেশ চাই, এটা নির্ভর করবে আপনি কেমন...। যেমন প্রজা, তেমন কিন্তু রাজা। ভাববেন না যে শেখ হাসিনা একমাত্র দায়ী, আপনারাও কিন্তু সমানভাবে দায়ী।’
অন্যদের মধ্যে আন্দোলনে নিহত সাব্বির হোসেনের বাবা মহিউদ্দীন, কবি আবদুল হাই শিকদার, ইসলামিক স্কলার মূসা আল হাফিজ, মানবাধিকারকর্মী সাইয়েদ আবদুল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য দেন। মুঈনুল ইসলাম ও নাহিয়ান রেহমান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
No comments