সিলেটে মাজারে রাতভর উত্তেজনা
মাজার কর্তৃপক্ষ। রোববার সকালে শুরু হওয়া ওরসের প্রথম দিন বেশ শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। রাতে আলেম-ওলামারা পাহারায় থাকায় কোনো ধরনের বেহায়াপনা হয়নি। একইভাবে সোমবার রাতেও আলেম-ওলামারা পাহারা দেয়া শুরু করেন। তারা মাজারের সিঁড়িতে অবস্থান নিয়ে বসে থাকেন। কিন্তু মাজার কম্পাউন্ডে ঢুকতে না পারায় ওরসে আসা ভণ্ডরা আলেম সমাজের ওপর ক্ষুব্ধ হয়।
রাত দুইটার দিকে ভক্ত ও আশেকানের নামে ভণ্ডরা হঠাৎ করে ক্ষুব্ধ হয়ে মাজার কম্পাউন্ডে ঢুকে পড়ে। এ সময় তাদের সঙ্গে খাদেম পরিবারের অনেক সদস্য ছিলেন বলে জানিয়েছেন আলেম-ওলামারা। হাতে লাঠিসোটা নিয়ে মাজার এলাকায় ঢুকে সিঁড়িতে বসা আলেম-ওলামাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় কয়েকজন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে তারা এলোপাতাড়ি মারধর করে। ভণ্ডদের হামলায় টিকতে না পেরে আলেম-ওলামারা মাজারের পাশে থাকা মসজিদে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে মাজারের চারপাশ থেকে মসজিদের দিকে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। আলেম-ওলামারা জানিয়েছেন, হঠাৎ হামলায় তারা প্রস্তুত ছিলেন না। এ কারণে প্রতিরোধ করতে পারেননি। এক পর্যায়ে তারা মসজিদে অবস্থান নিলে তাদের ওপর হামলা করা হয়। হামলার ঘটনার পরপরই কয়েকজন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলেম-ওলামা ও স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতা চেয়ে ফেসবুকে লাইভ করেন। এ সময় তারা দাবি করেন- সন্ধ্যা রাত থেকে মাজারের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের অবস্থান ছিল। কিন্তু হামলার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে পুলিশ চলে যাওয়ায় ভণ্ডরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসে তাদের ওপর হামলা করেছে। এতে ব্যবসায়ী, মাজার খাদেম পরিবার সহ সুবিধাভোগী অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। ফেসবুক লাইভের ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে সিলেটে। বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থীরা শাহপরান (রহ.) মাজার অভিমুখে রওনা দেন। সবার আগে গাড়ি রিজার্ভ করে আসেন জৈন্তাপুরের হরিপুর মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সহ স্থানীয় এলাকার মানুষ। এ সময় আলেম সহ স্থানীয় এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভণ্ডদের ওপর হামলা করলে তারা পিছু হটে। খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা আসেন। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর দিলোয়ার হোসেন নাদিম সহ আরও কয়েকটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা আসেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন- পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় এ সময় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫ জনকে রাতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সকালে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সহ জনপ্রতিনিধিরা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, রাতে প্রশাসন সহ তারা এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। যারা আহত হয়েছেন তাদেরকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। আলেম সমাজের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা এ সময় মাজার এলাকায় ছিলেন। মাজার এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মাজারের ওরসে গান-বাজনা সহ নানা আনুষঙ্গিকতা থাকে। এবারো গায়ক দল সহ নানা আসরের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু মাজার কর্তৃপক্ষের বিধিনিষেধ থাকার কারণে তারা মাজার এলাকায়ই ঢুকতে পারেননি। অবস্থান নিয়েছিলেন পুকুরের পাড়ে। সেখান থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাতে সিঁড়িতে পাহারায় থাকা মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। পাল্টা হামলার ঘটনার পর অনেকেই মাজার এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। শাহপরান (রহ.) থানার ওসি হারুনুর রশীদ জানিয়েছেন- ঘটনায় গুরুতর কেউ আহত হননি। কোনো পক্ষই বিকাল পর্যন্ত থানায় মামলা করেননি। এদিকে মাজার প্রাঙ্গণে আলেম-ওলামাদের ওপর হামলার ঘটনায় গতকাল দুপুরের পর থেকে মাজারের প্রধান গেটে অবস্থান নেন। বিকালে তারা সমাবেশ করেছেন। সমাবেশে ধনকান্দি মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মোস্তাক আহমদ খান, দাশপাড়া দক্ষিণকাছ মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস মাওলানা রশিদ মকবুল, সুবহানীঘাট মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা আহমদ সগীর, দারুল হুদা মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, শাহ সুন্দর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা নাইম আহমদ, এলাকাবাসীর পক্ষে ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন নাদিম ও ধনকান্দি সমাজকল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক রমিজ উদ্দিন বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে আলেম-ওলামা সমাজের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন- সিলেটের মাজারগুলোতে বেহায়াপনা চলছে। এরা শক্তি সঞ্চয় করে আলেমদের ওপর হামলা করছে। এসব ভণ্ডরা প্রতি সপ্তাহে মাজারে গান-বাজনার আয়োজন করে। সার্বিক এসব বিষয় নিয়ে ওলামা সমাজের নেতৃবৃন্দ আগামী বৃহস্পতিবার নগরের কাজিরবাজার মাদ্রাসায় বৈঠকে বসবেন। এ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা মাজারের গান-বাজনা ও বেহায়াপনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হবেন।
No comments