পুতিনের কঠিন শর্ত মানতে রাজি নয় তুরস্ক

তুরস্ক যাওয়াটা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য সময়ের ব্যাপার ছিল মাত্র। কিন্তু অজানা এক কারণে গেল বছর থেকে সেই সফর বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে। কর্মকর্তারা এজন্য বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন।

কেউ কেউ বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ছিল না এমন দেশ এড়িয়ে চলছেন পুতিন। আবার কারও কারও মতে, চলতি বছর নির্বাচনের কারণে পুতিনের তুরস্ক সফর হয়ে ওঠেনি।

রাশিয়ার কাছ থেকে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক খারাপ হয়। তবে ন্যাটো সদস্যভুক্ত তুরস্ক ওয়াশিংটন ও মস্কোর সঙ্গে সম্পর্কে ভারসাম্য বজায় রাখতে ঠিকই সক্ষম হয়েছে। এরইমধ্যে রাষ্ট্রীয় সফরে পুতিনের তুরস্ক যাওয়ার কথা থাকলেও তা বারবার পিছিয়ে গেছে। এবার ওই সফর পিছিয়ে যাওয়ার কারণ জানা গেল। মিডল ইস্ট আইকে ওই সফর সম্পর্কে অবগত সূত্রগুলো জানিয়েছে, পুতিনের শর্তের কারণেই বারবার পিছিয়েছে এ সফর।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, পুতিন চাইছেন রাশিয়ার যুদ্ধবিমানের পাহারা নিয়ে তুরস্কের আকাশে প্রবেশ করতে। ইউক্রেন পুতিনকে বহনকারী বিমানকে ভূপাতিত করতে পারে, এমন শঙ্কা থেকেই রুশ প্রেসিডেন্ট এমন শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। শুধু তুরস্কের আকাশে প্রবেশই নয়, দেশটির মাটিতে রুশ যুদ্ধবিমান অবতরণ করাতে চান পুতিন। আর এ নিয়েই যত জটিলতা। ন্যাটোভুক্ত হওয়ায় এ ধরনের যুদ্ধবিমান তুরস্কে প্রবেশ করলে তা শত্রু টার্গেট হিসেবে বিবেচিত হবে।

বিষয়টি সম্পর্কে অবগত একজন জানিয়েছেন, রাশিয়ার অনুরোধ রাখতে গিয়ে নিজ দেশে থাকা ন্যাটোর আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বন্ধ করতে চায় না তুরস্ক। যদিও অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে পুতিনের আঙ্কারা সফরের একটি সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করেছেন রুশ ও তুর্কি কর্মকর্তারা। তবে পুতিন যদি তার দাবি থেকে না সরে আসেন, তাহলে এই সফর নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। সবশেষ ২০১৪ সালে তুরস্ক গিয়েছিলেন পুতিন।

তুরস্কের সাবেক দুজন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, রাশিয়ার অনুরোধ খুবই অস্বাভাবিক। বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানকে পাহারা দিয়ে নিয়ে আসার জন্য তুরস্কের সরকার হয়তো যুদ্ধবিমান পাঠাতে পারে। তবে কোনো রাষ্ট্রপ্রধান তার দেশের যুদ্ধবিমান নিয়ে অন্য কোনো দেশে গেছে, এমনটা আমি মনে করতে পারছি না। তৃতীয় আরেকজন সাবেক তুর্কি রাষ্ট্রদূত বলেন, এ ধরনের দাবি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রটোকল নেই, বিতর্কের তৈরি হয়েছে।

অবশ্য যুদ্ধবিমান ছাড়াও অন্য দাবি আছে রাশিয়ার। আঙ্কারায় মার্কিন ব্যবসায়ীদের মালিকানাধীন দ্য হিলটন, শেরাটন ও জেডব্লিউ ম্যারিয়ট হোটেল নিয়েও আপত্তি আছে মস্কোর। তাদের দাবি, এসব হোটেলে থাকা পুতিনের জন্য অনিরাপদ। এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, তাহলে পুতিনকে কী সরকারি অতিথি ভবনে রাখবে তুরস্ক। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এমন কোনো কিছুর নজির নেই। শেষ পর্যন্ত, হয়তো নিরাপত্তার কারণেই বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে পুতিনের তুরস্ক সফর। 

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান  ছবি : সংগৃহীত

No comments

Powered by Blogger.