ইউপি চেয়ারম্যান সুরুদ্দীনের এত সম্পদ

একসময় ভারত থেকে অবৈধ পথে লবণ বহন করে সংসার চালাতেন সোহরাব উদ্দীন খান ওরফে সুরুদ্দীন। পিতা ছিলেন ঘোড়ার গাড়িচালক। তাদের ভিটেজমি ছাড়া তেমন কিছুই ছিল না। কিন্তু মনোহরপুর ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর পেয়ে যান আলাদীনের চেরাগ। বদলে যায় তার ভাগ্য। নামে-বেনামে গড়েন অঢেল সম্পদ। রয়েছে শত বিঘা জমি, ইটভাটা, দামি গাড়ি। গ্রামে করেছেন আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ি। স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা বেবির নামে রয়েছে বিপুল অঙ্কের সঞ্চয়পত্র। ঢাকার মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানে রয়েছে ২২০০ স্কয়ার ফুটের ফ্ল্যাট।

মাত্র দশ বছর ইউপি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে এই বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন এই চেয়ারম্যান। মানবজমিনের অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, সোহরাব নব্বইয়ের দশকে শ্বশুরবাড়ি এলাকা মনোহরপুর গ্রামে দুই শতক জমির উপরে টিনের তৈরি দুই কক্ষবিশিষ্ট বাড়িতে বসবাস করতেন। একপর্যায়ে তিনি ভারত থেকে অবৈধভাবে লবণও আনতেন। পরবর্তীতে জীবননগর উপজেলার উথুলী ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্য পদে নির্বাচিত হন। পাশাপাশি তিনি জীবননগর বাজারে একটি জুয়েলারি ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ওয়ার্ড সদস্য হওয়াতে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী আজগর টগরের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। শুরু হয় সংসদ সদস্যের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি আর ভূমি দখল। পরবর্তীতে এমপি টগরের সহযোগিতায় নৌকা প্রতীক নিয়ে বিনা ভোটের নির্বাচনে মনোহরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হন তিনি। এরপর তার ক্ষমতার দাপট আরও বেড়ে যায়। তিনি শুরু করেন মাদক ব্যবসা। এ ছাড়াও উপজেলার শিয়ালমারীর বিশাল গরু-ছাগল কেনাবেচার হাটটি নিয়ন্ত্রণ করে প্রতি মাসে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। অবৈধভাবে ভৈরব নদীর বালিও বিক্রি করেছে এই ইউপি চেয়ারম্যান। এদিকে সংসদ সদস্য টগরের ভাই দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আলী মুনসুর বাবুসহ তাদের রয়েছে স্বর্ণ চোরাচালানের সিন্ডিকেট। রয়েছে এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বাণিজ্য। অবৈধভাবে এত সম্পদের মালিক হলেও সংসদ সদস্য টগরের কাছের মানুষ হওয়ায় কেউ ভয়ে কিছু বলতে সাহস করতেন না, এমনকি প্রশাসনও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কিছুদিন আগেও নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ধামাচাপা দিতে গিয়ে জনগণের রোষানলে পড়েন সুরুদ্দীন। এ ছাড়া এলাকায় রয়েছে তার একটি সালিশ বাহিনী, যাদের মাধ্যমে সালিশ পরিচালনা করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
এদিকে মনোহরপুর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণের সময় টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ইউনিয়নে স্বজনপ্রীতি করে কয়েকজনকে চাকরিও দিয়েছেন তিনি। শ্যালক-শ্যালিকার নামেও কিনেছেন জমিজমা, আছে ছাদ খোলা প্রাইভেট কার। উপজেলার মহেশপুর একাশিপাড়ায় আসাদ ব্রিকস নামের প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের একটি ইটভাটা রয়েছে তার। ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তার বাড়িতে হামলা হয়। এরপর এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।
এদিকে ঢাকার মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানে রয়েছে একটি ২২০০ স্কয়ার ফুটের ফ্ল্যাট। ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত উক্ত বাড়ির ঠিকানা: রোড-৪, ব্লক-বি, হাউজ-৫, ঢাকা উদ্যান আবাসিক এলাকা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। এই ফ্ল্যাটটি তার নিজ নামেই কেনা। মোহাম্মদপুরে ঢাকা উদ্যানের রোড-৩, ব্লক-ই, বাড়ি-৬ ঠিকানায়ও তার আলাদা একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়াও তার কাছে রয়েছে লাইসেন্স করা দুটো আগ্নেয়াস্ত্র। মনোহরপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা বলেন, স্বর্ণ ও মাদক চোরাচালান, জমি দখল ও চাঁদা তুলে বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন সুরুদ্দীন চেয়ারম্যান। একসময় তার কিছুই ছিল না। শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। ১০-১২ বছরের ব্যবধানে একজন ইউপি চেয়ারম্যান কীভাবে এত সম্পদের মালিক হন। অবিলম্বে তাকে গ্রেপ্তার এবং তার বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পত্তি উদ্ধার করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নেয়া উচিত বলে মনে করেন এলাকাবাসী।
অঢেল সম্পদের বিষয়ে জানতে সোহরাব উদ্দীন খানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ঢাকাতে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছি। অঢেল সম্পদের তথ্য সঠিক নয় জানিয়ে তিনি ফোন রেখে দেন। এরপর আর ফোন ধরেননি তিনি।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.