‘দায়িত্ব যদি এখন না নিই, তাহলে আর কখন’

‘নিজের উইকেটের মূল্য বোঝেন না, দায়িত্ব নিতে পারেন না’, লিটন কুমার দাসের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শোনা যেতো কয়েকদিন আগেও। তবে সর্বশেষ পাকিস্তান সিরিজে তিনি দেখিয়েছেন, দায়িত্ব তিনিও নিতে পারেন। প্রথম টেস্টে দ্রুত ফিফটি, পরের টেস্টে দলের বিপর্যয়ে দারুণ এক সেঞ্চুরি আসে তার ব্যাট থেকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন প্রায় ১০ বছর। লিটনের মতে এখনই সময় দায়িত্ব নেয়ার।  

টেস্ট ক্রিকেটে অবশ্য লিটন দলের বিপর্যয়ে বেশির ভাগ সময়ে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ৪ টেস্ট সেঞ্চুরির ৩টিই এসেছে দলের বিপর্যয়ের সময়ে। সাদা বলের ক্রিকেটে অবশ্য এখনো ধারাবাহিক নন লিটন। এক ম্যাচে রান করলে পরের কয়েক ম্যাচ থাকেন ছায়া হয়ে। তবে লিটন এখন বুঝছেন দায়িত্ব নেয়ার সময় এসেছে তার। সম্প্রতি পাকিস্তানের মাটিতে স্বাগতিকদের ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে এসেছে বাংলাদেশ।

যেখানে দুই ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে এক ফিফটি ও এক সেঞ্চুরি করেন লিটন। সেঞ্চুরিটা আসে দ্বিতীয় টেস্টে দল যখন ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে। পাকিস্তান থেকে ফিরে আসন্ন ভারত সফরের জন্য অনুশীলন শুরু করেছে টাইগাররা। গতকাল অনুশীলনের আগে সংবাদ সম্মেলনে আসেন লিটন।
সেখানেই দায়িত্ব নেয়ার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি ৯-১০ বছর হয়ে গেছে ক্রিকেট খেলছি। ওরকম অভিজ্ঞতা হয়েছে। এখনই সময় দায়িত্ব নেয়ার। দায়িত্ব যদি এখন না নিই, তাহলে আর কখন। সুযোগ পেলেই, আমি বলছি দায়িত্ব নেয়ার কথা; কিন্তু তার মানে এই না যে প্রতি ম্যাচেই আমাকে দায়িত্ব নিতে হবে। আমি মানুষ, আমার ভুল হতেই পারে।’
সিরিজ জয়ের মিশনে নেমে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর পরিস্থিতি বুঝে কখনো বলের পর বল ডিফেন্ড করেছেন আবার কখনো আক্রমণাত্মক হয়েছেন লিটন। ওই ইনিংসের কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি যে খুব আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলেছি তা না। আমার কাছে যে বলগুলো মনে হয়েছে স্কোরিং, সেগুলোতে স্কোর চেষ্টা করেছি। অবশ্যই এখন যেকোনো ফরম্যাটে রানের প্রাধান্য অনেক বেশি থাকে। আমরা একটা জায়গায় গিয়ে রান করতে পারছিলাম না। আমি নামার পর রান অ্যা বলের খেলাতে কিন্তু একটা ফ্লো চলে আসে। আমি যে জায়গায় ব্যাট করি, সবাই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে। ’
পাকিস্তান সিরিজে উইকেটের পেছনেও ছিলেন দুর্দান্ত। দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে লিটনের ডিসমিসাল মোট ১২টি। এর মাঝে তিনি ৮টি ক্যাচ নেয়ার পাশাপাশি ৪টি স্টাম্পিং করেন। বাংলাদেশের হয়ে এক সিরিজে সর্বোচ্চ ডিসমিসালের রেকর্ড এটি। এর আগে এই রেকর্ড ছিল মুশফিকুর রহীমের। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজে মুশফিকুর রহীমের নামের পাশে ছিল ১১ ডিসমিসাল।
উইকেটকিপিং নিয়ে লিটন বলেন, ‘কিপিং ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে কোনো সাহায্য করে না। কিপিং একটা পার্ট। যখন ফিল্ডিং করা, তখন সেটা যেমন একটা পার্ট; কিপিংও তেমনই।
পাকিস্তানে সাফল্যের পেছনে ইতিবাচক ড্রেসিংরুমের কথাই বলেছেন লিটন। তিনি বলেন, ‘ড্রেসিংরুমে সব সময় পজেটিভ-নেগেটিভ দুই ধরনের কথা বার্তাই হয়। কীভাবে ক্যামব্যাক করতে পারি, কীভাবে গেম চালাতে পারি। সো সব সময় পজেটিভ ওয়েতে কথাবার্তা হয়। একটা জিনিস সবচেয়ে ভালো যে, ওখানে একটা ইমপ্রুভমেন্টের জায়গা আছে। চেষ্টা করবো জিনিসটা ভালো করার।’
পাকিস্তান সিরিজ অতীত, এখন সামনে তাকানো গুরুত্বপূর্ণ
চলতি মাসেই ভারত সফর করবে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ মানেই এখন বাড়তি উত্তেজনা। পাকিস্তানের বিপক্ষে এবারের সাফল্য ভারত সিরিজে প্রত্যাশা আরও বাড়াবে। এ প্রসঙ্গে লিটন বলেন, ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছি। তবে এটা এরইমধ্যে অতীত হয়ে গেছে। সামনে তাকানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনাদেরও একটু সাহায্য করতে হবে। আপনারা যদি পাকিস্তান সিরিজ নিয়ে বেশি কথা না বলেন, খুব ভালো হবে। খেলোয়াড় হিসেবে আমার কাছে ওটা অতীত হয়ে গেছে।’
তবে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ চাপ নয় বরং অনুপ্রেরণা হিসেবেই দেখেন লিটন। তিনি বলেন, ‘এটা আসলে অনুপ্রেরণাই দেয়। ভালো খেললে সুনাম হবে, দু’জন মানুষ চিনবে। এর চেয়ে বড় পাওয়া তো আর কিছু থাকতে পারে না! আমার মনে হয় না চাপের কিছু আছে। টেস্ট ক্রিকেটটা আমরা এখন মোটামুটি ভালো খেলছি। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে, এটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন।’

mzamin

No comments

Powered by Blogger.