ইমরান খানের তৃতীয় বিয়ে ও পাকিস্তানের নির্বাচন by মো: বজলুর রশীদ

‘শত চেষ্টা করেও নওয়াজের বিরুদ্ধে একটি দুর্নীতিও তুলে ধরা সম্ভব হয়নি অথচ নওয়াজ পাকিস্তানে পাঁচ ট্রিলিয়ন রুপির প্রজেক্ট সম্পন্ন করেছেন।’ তাকে আদালত ক্ষমতাচ্যুত করলেও তিনি আরো শক্তিশালী ও জনপ্রিয় হয়েছেন। পাকিস্তান পিপলস পার্টির কর্ণধার অবিবাহিত তরুণ বিলওয়াল ভুট্টো এ বিষয়ে মতপ্রকাশ করেছেন, ‘বিয়ে করলে একবারই করব।’ তবে রূপসী গুণবতী ও স্মার্ট পাকিস্তানের প্রাক্তন সবচেয়ে কম বয়সী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানির সাথে তার ‘লাভ এপিসোড’ মিডিয়ায় কম প্রকাশ হয়নি ইমরান খান ৪০ বছর বয়সী বুশরা মানেকাকে বিয়ে করেছেন। এটা তার তৃতীয় বিয়ে। বুশরা মানেকা ‘গুরু মা’ নামেও পরিচিত। ব্যক্তিগত সুখ শান্তি ও পারিবারিক জীবনের জন্য বিয়ে করা কারো জন্যই তেমন কোনো বিষয় নয়। কিন্তু ইমরানের বেলায় বিষয়টি ভিন্ন। পাকিস্তানে ও বহির্বিশ্বে হইচই পড়েছে বিয়ে ও নির্বাচন নিয়ে।
নির্বাচনের মাস চারেক আগে বিয়ে নিয়ে সবার নানা কৌতূহল। এই সেই সুশ্রী ‘ম্যানলি’ ইমরান খান- যিনি প্লেবয় হিসেবে অসংখ্য নারীর ‘হার্টথ্রব’ ছিলেন। জীবনের সেসব উজ্জ্বল দিন তিনি ফেলে এসেছেন। ক্রিকেটজীবনে দিয়েছেন পাকিস্তানকে অনন্য সম্মাননা। ক্যান্সারে মৃত মায়ের নামে বানিয়েছেন ক্যান্সার হাসপাতাল। সুখের জন্য বিয়ে করলেও তিনি কি সুখে আছেন? অনেক বয়সে তিনি বিয়ে করেছেন। বলা হয় মেয়েরা কুড়িতে বুড়ি। আর পুরুষের বেলায় ‘লাইফ বিগিনস অ্যাট ফোর্টি’। এই দু’টি প্রবাদ সত্য হয়েছে ইমরানের প্রথম বিয়েতে। মনসুর আলী খান টুইট করেছেন, ‘ইমরান এখন আবার একজন অফিসিয়ালি’ বিবাহিত মানুষ, এখানে খানকে সূক্ষ্মভাবে খোঁচা দেয়া হয়েছে। জানুয়ারির ১২ তারিখও খান বলেন যে, ‘বুশরার সাথে আমার শুধু আধ্যাত্মিক সম্পর্ক।’ দুই বছর আগেই গুঞ্জন বাতাসে ভাসতে থাকে। তখন অর্থাৎ ২০১৬ সালের জুনে বুশরার বোন মরিয়াম মানেকা বলেন, ‘ইমরান মানেকা পরিবারে কোনো বিয়ে করেননি।’ স্যার রবিন্দ্র জাদেজা বলেছেন, মানুষ যত তাড়াতাড়ি ফোন আপগ্রেড করে ইমরান তার চেয়ে তাড়াতাড়ি বউ আপগ্রেড করেন। জানা যায়, খান সাহেব ‘মুরুব্বি’ বুশরা বিবির সাথে দেখা করতেন। বুশরা বেগম ‘মিস পিঙ্কি’ নামে এবং পাকপাত্তান এলাকায় একজন সম্মানিত ‘পীর’ বা ‘পীরনি’ হিসেবেও পরিচিত। খাওয়ার ফরিদ মানেকা, বুশরার স্বামী যিনি ইসলামাবাদের একজন শুল্ক কর্মকর্তা তার বাবা গুলাম ফরিদ মানেকা একজন রাজনীতিবিদ ও ফেডারেল মন্ত্রী ছিলেন। গত বছর যখন কানাঘুষা শুরু হয় তখন ‘পীর’ বুশরার পরামর্শে বিষয়টি মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়। তিনি বিয়ের খবর অস্বীকার করে বুশরার সাথে ‘আধ্যাত্মিক যোগাযোগ’ রয়েছে বলে সবাইকে জানান। মানেকা পরিবারের এক সদস্যা মমতাজ হায়াত মানেকা বলেন, ‘পিটিআই নেতা পিঙ্কি বিবির একজন ‘নিষ্ঠাবান অনুগামী’ গুলালাকে নিয়ে যখন পাকিস্তানে হইচই শুরু হয় তখন এ ‘বুশরা বেগমই’ ইমরানকে ‘বাবার মাজার’ জিয়ারত করতে বলেছিলেন। পিটিআইয়ের সিনিয়র নেতা রাও নাসিম হাশমি রাগতস্বরে বলেন, ‘ যে লোক (ইমরান খান) ঘণ্টার পর ঘণ্টা পীর-ই কামেলের মাজারে বসে থাকেন তাকে নিয়ে কেন এত হয়রানি?’ বুশরা বয়স চল্লিশের কোঠায়। প্রথম স্বামীর সাথে তিন দশকের দাম্পত্য এবং পাঁচ সন্তানের জননী। ইমরানের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে তার ভবিষ্যদ্বাণী নাকি হুবহু মিলে যায়।
সেখান থেকেই নির্ভরতা, সেখান থেকেই সম্পর্ক। জ্যোতিষীরা অনেকে তাই বলছেন, এ বিয়ে নাকি ইমরানের ভাগ্য ফেরাবে! ইমরানকে বলতে হয়েছে, ‘বুশরাকে পর্দা ছাড়া কখনো দেখিনি। দয়া করে তার পরিবারকে অসম্মান করবেন না!’ ইমরানের অপর এক সহযোগী অবিবাহিতা সংসদ সদস্যা গুলালা গত ১ আগস্ট, ২০১৭ সালে খানের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ তুলে দল ছাড়েন। তিনি অভিযোগ করেন যে, মোবাইলে ইমরান খান অশোভন টেক্সট মেসেজ পাঠিয়েছেন। পাকিস্তান মুসিলিম লীগ-নেওয়াজ (পিএমএলএন) নেতা হানিফ আব্বাসী গুলালাকে সালাম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গুলালা ইমরানের মুখোশ উন্মোচিত করেছেন। ইমরানের ব্ল্যাকবেরি চেক করলেই সেই সব লুচ্চামি প্রকাশ পাবে। তিনি আরো বলেন, ‘আমি সবসময় লোকাজনকে উপদেশ দেই, তোমরা তোমাদের মা-বোন-মেয়েদের ইজ্জত বাঁচানোর জন্য ইমরানের মিছিলে ও জনসভায় পাঠিও না।’ ইতঃপূর্বে ‘পাকিস্তানের রাজনীতিতে গুলালা ঝড়’ কলাম লিখেছিলাম, ‘গুলালার বিষয় তো সিনেমার ট্রেলারমাত্র। আসল বিষয় আসছে।’ পাঠকেরা এখন বুঝতে পারছেন ‘খাইবার এক্সপ্রেস’ কোথায় গিয়ে থামছে! আরো আছে। পাকিস্তানের সেরা পাঁচ সুন্দরী রাজনীতিবিদের একজন আইলা মালিক। তাকে মূলত পাকিস্তানে সুন্দরীদের মধ্যে দ্বিতীয় ধরা হয়। তিনি পিটিআইএর সেন্ট্রাল মেম্বার এবং এ নির্বাচনে মিয়ানওয়ালে ইমরান খানের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন। তবে তাকে নিয়ে মিডিয়ায় কোনো গুঞ্জন এখনো শোনা যায়নি। তালাকপ্রাপ্তা দ্বিতীয় স্ত্রী রেহাম খান ইমরানের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, বিয়ে অবস্থায় তিনি বুশরাকে দেখতে ও আলাপ করতে যেতেন। রেহাম একজন সুন্দরী বিবিসির সাংবাদিক, ইমরানের সাথে ২০১৫ সালে বিয়ে হয়ে মাত্র দশ মাস সংসার টিকে। ‘তিন বছর ধরে বুশরার সাথে যোগাযোগ ছিল।
ইমরান সত্যপরায়ণ নয়। তখন আমি ইমরানের স্ত্রী।’ রেহাম বলেন, ‘ইমরান দুই মাস আগে বিয়ে করেও জনসমক্ষে মিথ্যা বলতে থাকেন। আমি জানি ১ জানুয়ারিতে তাদের বিয়ে হয়। ঠিক আমার সাথেও এমন হয়েছিল। দুই মাস পর বিয়ের খবর প্রচার হয়।’ টুইটে রেহাম জানান, দ্বিতীয় বিয়ে বলবৎ থাকাকালীন ইমরান বুশরাকে সময় দিয়েছে।’ পিটিআই মুখপাত্র ফাওয়াদ চৌধুরীও বলেন, ‘অনেক দিন ধরে এদের জানাশোনা।’ রেহাম খান ইমরানের নানা ঘটনা-রটনা করার কারণে পিটিআইয়ের লোকজন ‘ভয়ভীতি’ দেখিয়ে আসছেন। ফোন ও মেসেজের মাধ্যমে এসব মারাত্মক ভীতি ছড়ানো হয়েছে। এর মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় রেহাম খান লন্ডনে পাড়ি দিয়েছেন। ইন্ডিয়া টিভির সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি ইমরানের অনেক গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন এবং তাকে ‘শয়তান’ বলে ডেকেছেন। তিনি আরো জানান যে, ‘অনেক কথা বলার বাকি। আমি আবার মিডিয়ায় ফিরে আসব।’ নির্বাচনের আগে রেহাম-গুলালার অগ্নিবার্তা এবং বুশরা ইস্যু ইমরানের জন্য কাল হয়েও দাঁড়াতে পারে। পশ্চিমা বিশ্ব ইমরানকে ১৯৯২ সালের ওয়ার্ল্ড কাপ চ্যাম্পিয়ন টিমের দলনায়ক সেলিব্রেটি হিসেবে বেশি জানে। অনেকেই ইমরান খানকে তাৎক্ষণিক মতপ্রকাশ ও টুইটের কারণে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে এবং বার্নি সান্ডারস ও ব্রিটিশ বিরোধীদলীয় নেতা জেরিমি করবিনের সাথে তুলনা করেন। ট্রাম্পের সাথে খান সাহেবের তুলনার আরো একটি বিষয় হলো, নারী। তবে এ দিক দিয়ে ট্রাম্প ইমরানের চাইতে অনেক এগিয়ে। ক্রিকেটের ভাষায় বলা যায়, ইমরান বল মেরেছেন আর ট্রাম্প বাউন্ডারি মেরেছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ট্রাম্প চাইলে তিনি তার সাথে কাজ করতে প্রস্তুত। তিনি আরো বলেন, আফগানিস্তান বোমা ও যুদ্ধ দিয়ে কোনো সুরাহা হবে না। এখানে আলোচনা করতে হবে। রাজনীতির প্রথম ১৫ বছরে ইমরান দু-একটি সিট ছাড়া আর কিছু অর্জন করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘ক্রীড়া মানুষকে এ শিক্ষা দেয় যে, জীবন সরল রেখায় চলে না।’ তিনি আশাবাদী যে, ২০১৮ নির্বাচনে তার দল পিটিআই বিজয়ী হবে। তিনি ক্ষমতায় যাবেন।
তিনি বলেন, খাইবার পাখতুন প্রদেশে তাদের সরকার কাজ করছে। এটা কম কথা নয়। ইমরানের বিরোধীরা বলছেন, ইমরান তালেবান নেতা সামিউল হক, যাকে তালেবানদের বাবা বলা হয় তার সাথে ঘনঘন বৈঠক করেন, যার মাদরাসায় মোল্লা উমর ও জালালুদ্দিন হক্কানির মতো মশহুর তালেবান নেতার উদ্ভব হয়েছে। ইমরান খানের সাথে পাকিস্তান সেনাবাহিনীরও রয়েছে সখ্যতা। সেদিক দিয়েও তিনি নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেন। ইমরান-সেনাবাহিনী-আদালত পকিস্তানের রাজনীতিতে শক্তিশালী অবস্থান। শেষ এক বল বাকি। ২ রান বা ৩ রান না হলে নিশ্চিত পরাজয়। এমন অবস্থায় অনেকবার ইমরান খান বাউন্ডারি মেরে ক্রিকেট দলকে বিজয়ী করেছেন। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, ইমরান বলেছিলেন, ‘আমি ছুটন্ত বলের গতির সুতা ধরে আঘাত করি!’ এমন এক বিচক্ষণ খেলোয়াড় নারীর চোখ দেখেই বলতে পারেন কার সাথে কেমন আচরণ করতে হবে। শুধু গণ্ডগোল বেধেছে ‘গুলালা’র ব্যাপারে। ইমরানের অভিযোগ বিরোধী দল গুলালা এবং বুশরাকে নিয়ে রাজনীতির অঙ্গন উত্তপ্ত করছে। এই ইস্যুতে জিরগায় হয়নি গুলালার বিচার, না কোনো তদন্ত রিপোর্ট বেরিয়েছে ইমরানের বিরুদ্ধে। বুশরাকে বানি গালায় পর্দার সাথে রাখবেন বলে খান ঘোষণা দিয়েছেন। তবে, বানি গালায় বসবাস করা সম্ভব নাও হতে পারে। হাইকোর্ট এর মধ্যে বাড়ি বানানোর কাগজপত্র ও অনুমতিপত্র চেয়ে বসেছে। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি মিঞা সাকিব নিসার এ আদেশ জারি করেছেন। আদেশে আরো বলা হয়, রাওয়াল বাঁধের আশপাশে অনুমতি না নিয়ে কোনো স্থাপনা করা যাবে না। এর ওপর যোগ হয়েছে দুর্নীতি ব্যুরোর কপ্টার তদন্ত। যেখানে বলা হয়েছে ইমরান খান খাইবার পাখতুনের সরকারি হেলিকপ্টার বেসরকারি কাজে ব্যবহার করে আসছেন, ৭৩ ঘণ্টা আকাশে উড়েছেন, সরকারের খরচ করেছেন ১.৭ মিলিয়ন রুপি। নির্বাচনের আগে বানি গালা ও হেলিকপ্টার তদন্ত, গুলালা ঘটনার নিষ্পত্তি না হওয়া, গুরু মা বুশরা মানেকা ইস্যু, রেহাম খানের পারিবারিক গোপনীয়তা ফাঁস এসব কিছু ইমরানকে ঘিরে ধরেছে। পাকিস্তানে জনপ্রিয় দল হলো নওয়াজ শরিফের পিএমএল, ভুট্টো পরিবারের পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই)। মানেকা পরিবার প্রথমে নওয়াজের পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এন) করত, পরে পিএমএল (কিউ) দলে যোগ দেয়, এরপর আবার পিএমএল(এন) দলে যোগ দেয়। সবশেষে মানেকা পরিবার ইমরানের পিটিআই দলে ভিড়ে।
পাকিস্তানে ‘পানামা গেট কেলেঙ্কারি’ নিয়ে নওয়াজ শরিফ ধরাশায়ী। তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন এবং দলীয় প্রধানের পদও হারিয়েছেন। এর চালক ছিলেন ইমরান খান। এবারের নির্বাচনে ইমরান যদি হারেন তবে তা হবে ২০১৩ সালের নির্বাচনের পর টানা তৃতীয় পরাজয়। আর শরিফ যদি হারেন, তবে তা কেবল তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকেই ঝুঁকিতে ফেলবে না, তার পরিবারের মর্যাদাকেও ভূলুণ্ঠিত করবে। তার মেয়ে এবং উত্তরসূরি বিবেচিত মরিয়মের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে এবং ইতোমধ্যেই নানা বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তানের রাজনীতিতে সুফিবাদ এক বিশেষ ভূমিকা রাখে। এখনো বিশাল বড় মাহফিল হয় মাজারভিত্তিক। সুফি বু আলী কলন্দর, ইসলামাবাদের সুফি বড়ি ঈমাম আবদুল লতিফ, সুফি বুল্লা শাহ, পাঞ্জাবের সুফি মোহর আলী, লাহোরের সুফি দাতা গঞ্জে বখসসহ অনেক প্রসিদ্ধ সুফির প্রভাব রেয়েছে সাধারণের ওপর। বর্তমানে সুফি ডা: তাহিরুল কাদরি একজন রাজনীতিবিদ। তার অসংখ্য ভক্ত রয়েছে পকিস্তানে। নির্বাচনে তারা তাহিরুল কাদরির কথাই শুনবেন। তা ছাড়া, সুফি মোহাম্মদ, সুফি বরকত আলী, কলন্দর সুফি গোষ্ঠী, হক্কানি সুফি, জামিয়া সুফিয়া কাদরি এদের সমর্থক রয়েছে পুরো পাকিস্তানে। পাকিস্তানের সাধারণ লোকজন মনে করেন যে, তালেবান উৎখাতের জন্য সুফিবাদের প্রসার দরকার। এ ধারায় খুন হয়েছে সুফি গায়ক আমজাদ শাবরি। বলা হয় তালেবানরা মাজারে বোমা মেরে ১০০ জনকে মেরেছে। ইমরান সুফি গোষ্ঠীর সমর্থন আদায়ের জন্য ‘গুরু মা’ কে বিয়ে করেছেন কি না তা সময়ই বলে দেবে। পাঞ্জাবের আইনমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ বলেছেন নির্বাচনে ইমরানের ভরাডুবি হবে। ইমরান পাঁচ সন্তানের জননীর ঘর ভেঙেছেন। তিনি কি আর ‘সাদিক’ আছেন! ‘ইমরানের আচরণ দেখে কেউ তাকে সিকিউরিটি গার্ডের জন্যও রাখবে না।’ তার বিরুদ্ধে আদালতের ‘সুয়োমটো’ মামলা নেয়া উচিত। ‘জাতির কাছে তার কৃতকর্মের কৈফিয়ত দেয়া দরকার।’ ‘শত চেষ্টা করেও নওয়াজের বিরুদ্ধে একটি দুর্নীতিও তুলে ধরা সম্ভব হয়নি অথচ নওয়াজ পাকিস্তানে পাঁচ ট্রিলিয়ন রুপির প্রজেক্ট সম্পন্ন করেছেন।’ তাকে আদালত ক্ষমতাচ্যুত করলেও তিনি আরো শক্তিশালী ও জনপ্রিয় হয়েছেন।
পাকিস্তান পিপলস পার্টির কর্ণধার অবিবাহিত তরুণ বিলওয়াল ভুট্টো এ বিষয়ে মতপ্রকাশ করেছেন, ‘বিয়ে করলে একবারই করব।’ তবে রূপসী গুণবতী ও স্মার্ট পাকিস্তানের প্রাক্তন সবচেয়ে কম বয়সী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানির সাথে তার ‘লাভ এপিসোড’ মিডিয়ায় কম প্রকাশ হয়নি। তৃতীয় বিয়ের প্রচারণা চালানোর জন্য প্রাইভেট টিভি চ্যানেলের বিরুদ্ধে ইমরান রিগুলেটরি অথরিটির কাছে অভিযোগ পেশ করেছিলেন। তখন তিনি টুইটে লিখেছিলেন, ‘যে মেয়ের ছবি দেখানো হয়েছে তাকে আমি জানিও না, দেখিওনি। কত নৈতিক অবক্ষয় হলে মানুষ এমন প্রচারণা চালাতে পারে। এত সবের পর সব যখন সাঙ্গ হলো, তখন তিনি বলছেন, ‘আমি কী অপরাধ করেছি? আমি কি ব্যাংক লুট করেছি? নাকি জাতীয় সম্পদ পাচার করেছি, নাকি মডেল টাউনে সিরিয়াল কিলিং করেছি? নাকি ভারতের কাছে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য পাচার করেছি? মনে হয় বিয়ে করে বড় অপরাধ করেছি!’ তিনি জানান, এসবের পেছনে নওয়াজ শরিফের লোকজন এবং মীর সাকিলুর রহমান উত্তাপ ছড়াচ্ছে। আমি এসবের পরোয়া করি না। আমার সন্তানদের জন্য আমার করণীয় রয়েছে। বুশরা বেগম রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে। ৪০ বছর ধরে শরিফ পরিবারের অনেক নোংরামি আমি জানি। তবে এসব আমি প্রকাশ করব না।’ ‘ব্যক্তিগত সুখের জন্য আমি করেছি, যা বিগত কয়েক বছরে আমি পাইনি।’ তবে একথাও সত্য যে, তালাকপ্রাপ্ত প্রথম স্ত্রী ধনকুবের জেমিমা গোল্ডস্মিথ পাকিস্তানে আসেন, ছেলেদের দেখেন। ইমরানের সাথে কোনো বৈঠক না হলেও ইমরান-জেমিমার সন্তান সুলেমান ঈসা খান ও কাসিম খানের জন্য তার দরদি হাতের ছোঁয়ার অন্ত নেই। রাজনৈতিক ঘোরশত্রু নওয়াজ ও ইমরান উভয়েরই একটি জায়গায় মিল। উভয়েই তিনটি শপথ নিয়েছেন। নওয়াজ শরিফ শপথ নিয়েছেন ‘তিনবার’ প্রধানমন্ত্রীর, ইমরান শপথ নিয়েছেন ‘তিনবার’ বিয়ের।
লেখক: অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব, বাংলাদেশ সরকার ও গ্রন্থকার

No comments

Powered by Blogger.