নথির অপেক্ষায় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা

বিচারিক আদালতের নথি হাইকোর্টে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। নথি এলেই খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে তৎপর হবেন তারা। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, সপ্তাহেই তারা আশা করেছিলেন বিচারিক আদালতের নথি হাইকোর্টে এসে পৌঁছাবে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন তারা।  খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিচারিক আদালত থেকে এই মামলার নথি এখনও হাইকোর্টে এসে পোঁছায়নি। ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী (পেশকার) বিকালে মানবজমিনকে বলেন, নথি এখনো হাইকোর্টে পাঠানো যায়নি। আগামী সপ্তাহে তা পাঠানো হবে। হাইকোর্টের দেয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তা পাঠানো হবে। 
গত ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে ৫ বছর এবং অন্য আসামিদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান। কারাদণ্ডের পাশাপাশি আসামিদের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা অর্থদণ্ডও দেয়া হয়। রায় ঘোষণার ১১দিন পর ১৯শে ফেব্রুয়ারি রায়ের অনুলিপি হাতে পান খালেদার আইনজীবীরা। ২০শে ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আপিল করেন তারা। পরে ২২শে ফেব্রুয়ারি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আপিল গ্রহণ করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বিচারিক আদালতের দেয়া অর্থদণ্ডের আদেশ স্থগিত করেন। পাশাপাশি খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদনের শুনানির দিন (২৫শে ফেব্রুয়ারি) ধার্য করে হাইকোর্ট এ মামলার বিচারিক আদালতের নথি তলব করেন যা ১৫ দিনের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয় আদেশে। খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি হয় গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি। ওইদিন শুনানি শেষে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ উভয়পক্ষের আইনজীবীদের জানান, বিচারিক আদালতের নথি আসার পর জামিন প্রশ্নে আদেশ দেয়া হবে।
এদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আলাপকালে জানান, হাইকোর্টের ওই আদেশের পরপরই বিচারিক আদালতের নথি দ্রুতই হাইকোর্টে চলে যাবে- এ  ব্যাপারে তারা আশাবাদী ছিলেন। বিশেষ করে গত সপ্তাহেই নথি হাইকোর্টে এসে যাবে বলে আশাবাদী ছিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের আইনজীবীরা। খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন মানবজমিনকে বলেন, যেখান থেকে (বিচারিক আদালত) নথি আসবে সেখান থেকে হাইকোর্টের দূরত্ব তিন কিলোমিটারের বেশি নয়। কিন্তু আদেশের ৮ দিনেও নথি এসে পৌঁছায়নি। আমরাতো ভেবেছিলাম বৃহস্পতিবার নথি হাইকোর্টে চলে আসবে। তবে, আশা করি আগামী সপ্তাহেই তা চলে আসবে। তিনি বলেন, সরকারের যদি সদিচ্ছা থাকে তাহলে দ্রুতই রেকর্ড এসে যাওয়ার কথা। আর যদি সরকারের সদিচ্ছার অভাব থাকে এবং খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘায়িত করার অশুভ চেষ্টা থাকে তাহলে নথি আসতে দেরি হবে। আর নথি আসতে যত বিলম্ব হবে আমাদের জন্য খালেদা জিয়ার জামিন প্রক্রিয়া তত বিলম্ব হবে এবং এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ন্যায়বিচারের স্বার্থে এবং দেশে যদি আইনের শাসন বলে কিছু থাকে তাহলে ৫ বছরের সাজা, তিনি (খালেদা জিয়া) তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, একজন বয়স্ক মহিলা তার জামিন দীর্ঘায়িত করার কোন যৌক্তিক কারণ নেই। খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমি আগেও বলেছি, জামিনের শুনানির পরে রেকর্ড আসা সাপেক্ষে জামিনের আদেশ দেয়া হবে- এ ধরনেই নজির হাইকোর্টে নেই। তবে, আদালতের প্রতি আমাদের সম্মান ও শ্রদ্ধা রয়েছে। আমরা আশাবাদী আগামী সপ্তাহেই নথি হাইকোর্টে আসবে।  
খালেদা জিয়ার আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, এই মামলার রায়ের সার্টিফায়েড কপি পেতে যে সময়ক্ষেপণ করা হয়েছিল আমরা আশা করছি বিচারিক আদালতের নথি হাইকোর্টে আসতে কালবিলম্ব হবে না। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বিচারিক আদালত নথি পাঠাবেন। খালেদা জিয়ার অন্য আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, নথি হাইকোর্টে না এলে আমরা মেনশন করতে পারছি না। তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহেও যদি বিচারিক আদালতের নথি হাইকোর্টে না আসে তাহলে সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.