হাসপাতালেই রাখা হলো ফয়জুরকে ট্রাইব্যুনালে বিচার দাবি by ওয়েছ খছরু

হাসপাতালেই রাখা হলো ফয়জুরকে। গতকাল সকালে ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছাড়পত্র দিতে চেয়েছিল। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তাকে হাসপাতালেই রাখা হয়। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে- ফয়জুরকে গতকাল ছেড়ে দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। এ কারণে দাপ্তরিক কাজ সেরেও ফেলা হয়। কিন্তু সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আবার সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকে হাসপাতালের ২৭ নম্বর কেবিনে রেখে দেয়া হয়। সূত্র জানায়- ফয়জুরকে নিয়ে সবার আতঙ্ক রয়েছে। যেমনি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মীরা তাকে নিয়ে সতর্ক তেমনি ওই নামটি এখন আতঙ্কের নাম। সিলেট মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান- ফয়জুরের জঙ্গি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে একটু একটু করে তথ্য মিলছে। তবে- এখনো পুরোপুরি মিলেনি। ফয়জুর অ্যাপস ব্যবহার করতো। তার পিতা একজন মাদ্‌রাসা শিক্ষক হলে তার এটিএম কার্ড রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকে তার একাউন্টের ওই এটিএম কার্ড ঘটনার পরদিন সকালে বাড়ির পাশের ড্রেনে পাওয়া গিয়েছিল। পরবর্তীতে স্থানীয় শেখপাড়া গ্রামের মেম্বার গিয়াসউদ্দিন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন। জালালাবাদ থানা পুলিশ জানায়- ফয়জুরকে ঘিরে সব তদন্ত চলছে। এখনই পরিষ্কার কিছু বলা যাচ্ছে না। ফয়জুরের পিতা হাফিজ আতিকুর রহমান ও মা আমেনা বেগম এখনো পুলিশের জিম্মায়। তাদের জালালাবাদ থানায় রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে তার মামা কৃষকলীগ নেতা ফয়জুলকেও আটক রাখা হয়েছে। ফয়জুরের মতো মামা ফয়জুলকে ঘিরেও বিশাল রহস্য দেখা দিয়েছে। শেখপাড়া গ্রামে ফয়জুরদের পাশেই তার মামা ফয়জুলের বাসা। ওই বাসার ভেতরে একটি টিনশেডের ঘর। খুপড়ি ঘরের মতো। আর ওই ঘরেই স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বাস করতেন ফয়জুল ইসলাম। তিনি নিজে চালাতেন দামি মোটরসাইকেল। সম্প্রতি তিনি প্রাইভেটকারও ব্যবহার করতেন। ফয়জুলের ফেসবুক ঘেঁটে দেখা গেছে- প্রফেসর ড. জাফর ইকবালের সঙ্গে তার ছবি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে ফয়জুল ওই ছবি তুলে আনেন। ফয়জুলের ছেলেরও একটি ছবি রয়েছে জাফর ইকবালের সঙ্গে। সেই ছবিও ফেসবুকে রয়েছে। পাশাপাশি সিলেটে শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে তার ছবি রয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- ফয়জুরের মতো ফয়জুলও এলাকায় খুব বেশি মিশতো না। সে সন্তানদের নিয়ে স্কুলে যেতো। মাঝে-মধ্যে ফয়জুল তার ভাগিনা ফয়জুরের বাড়িতে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেই পুলিশ ফয়জুলকে আটক করে।
শাবি শিক্ষকদের র‌্যালি, শিক্ষার্থীদের মৌন মিছিল: জনপ্রিয় লেখক ও শিক্ষাবিদ এবং শাহ্‌জালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপর হামলার প্রতিবাদে ও দ্রুত বিচারের দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। সোমবার সকাল ১০টায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে একটি মৌনমিছিল আইআইসিটি ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবন-২ এর সামনে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট বরাবর তিন দাবি সংবলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন। এদিকে সকাল সাড়ে ১১টায় শাবি শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে থেকে শিক্ষকদের একটি র‌্যালি শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে আবার একই স্থানে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ হাসানুজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন আহমেদ এর সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। ভিসি বলেন, ‘দ্রুত ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এই হামলার বিচার করতে হবে। এর পেছনের অপশক্তিকে খুঁজে বের করতে হবে। কঠোর শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’ তিনি আরো জানান, ‘ড. জাফর ইকবাল এখন সুস্থ আছেন। সিএমএইচ-এ নিজকক্ষে হাঁটা-চলা করতে পারছেন। আমরা আশা করছি তিনি অচিরেই আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।’ সমাবেশ শেষে সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন আহমেদ জানান, বুধবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা হবে এবং বুধ ও বৃহস্পতিবার কালোব্যাজ ধারণ করে শিক্ষকরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য সংগঠন ‘দিক থিয়েটার’ এর উদ্যোগে পথনাট্য ‘ওয়ারিস’ এবং সন্ধ্যায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে প্রতিবাদী মৌনমিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে- সামপ্রতিক সময়ের জঙ্গি তৎপরতা, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপর হামলা ও প্রাণনাশের চেষ্টার প্রতিবাদে গতকাল সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেট এর উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ড. জাফর ইকবালের উপর হামলা মুক্ত বুদ্ধি চর্চার উপর আঘাত, এ ঘটনা রীতিমতো উদ্বেগজনক। এ হামলাকে সহজভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। বিগত দিনে মুক্তবুদ্ধির মানুষের উপর জঙ্গিগোষ্ঠী যেভাবে হামলে পড়েছিল, এ ঘটনা সে ধারাবাহিকতারই অংশ। জোট সভাপতি জয়নাল আবেদীন জুয়েলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জামাল আহম্মদের পরিচালনায় মানববন্ধন পরবর্তী সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদী সমাবেশে বক্তারা বলেন, এ হামলার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো জঙ্গিগোষ্ঠী এখনও সক্রিয়। অবিলম্বে এর পেছনের নেপথ্য শক্তিদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করে এদের কালো হাত ভেঙে দিতে হবে। প্রতিবাদী কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য গবেষণা সম্পাদক তপন মিত্র, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক প্রিন্স সদরুজ্জামান, অজিত রায় ভজন, মুহিব আলী, বাউল বিরহী কালা মিয়া, বেলাল আহমদ, সুকোমল সেন, বিরহী লাল মিয়া, সিরাজ আনোয়ার, শ্যামল কান্তি সোম আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, ফকির মাহবুব মোর্শেদ, সুনির্মল সেন, ডি কে জয়ন্ত, এমএইচ নিজাম, এমএম শরীফুল আলম তুহিন, বাবুল বৈদ্য, সৈয়দ মুত্তাকিম আলী, অজয় বৈদ্য অন্তর প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.