সংসদ ভেঙ্গে অবিলম্বে সুষ্ঠু নির্বাচন দিন : মির্জা ফখরুল

সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশকে সম্পূর্ণভাবে অকার্যর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য চক্রান্ত হচ্ছে। দেশের জনপ্রিয় লেখক ও বিজ্ঞানী ড. জাফর ইকবালকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত করা হলো। আর কোনো তদন্ত না করে বলে দেয়া হলো বিএনপি এর জন্য দায়ী। অথচ দেখা যাচ্ছে যাদেরকে আটক করা হয়েছে তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোকজন। এখন স্বভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে যায়, তাহলে আওয়ামী লীগ কি শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দেশকে অকার্যর ও জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। একটি নতজানু রাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্ত করছে এ সরকার। আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি আয়োজিত একঘণ্টার মানববন্ধন শেষে সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব বলেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন বানোয়াট মামলায় সাজা প্রদানের প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশে মানববন্ধন কর্মসূচি দিয়েছিল বিএনপি। সে মোতাবেক আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকাসহ সারাদেশে মানববন্ধন করেন দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মী। প্রেসক্লাবের সামনের মানববন্ধনে নামে নেতাকর্মীদের ঢল।
প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে সচিবালয়ের মোড় এবং কদম ফোয়ারে মোড় পর্যন্ত কয়েক লাইনে বিভক্ত হয়ে নেতাকর্মীরা সারিবদ্ধভাবে মানববন্ধনে দাঁড়ান। তবে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচির নির্ধারিত সময়ের আগেই সকাল ১০টা থেকে মানববন্ধনে দলটির নেতাকর্মীরা অবস্থান নিতে শুরু করেন। বেলা ১১টার দিকে প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে হাজার হাজার নেতাকর্মী জড়ো হন। নেতাকর্মীরা ‘বন্দি আছে আমার মা, ঘরে ফিরে যাবো না’, ‘হামলা করে আন্দোলন- বন্ধ করা যাবে না’, ‘জেল জুলুম টিয়ার গ্যাস, জবাব দেবে বাংলাদেশ’- ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। নেতকর্মীদের স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে প্রেসক্লাব চত্বর। মানববন্ধনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বরকতুল্লাহ বুলু, ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, জয়নুল আবদীন ফারুক, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির বজলুল বাসিত আঞ্জু, মহানগর দক্ষিণের কাজী আবুল বাশার, ২০ দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম প্রমুখ। বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানীর পরিচালনায় মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, আতাউর রহমান ঢালী, অধ্যাপক ড. তাজমেরী এস ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, সরফত আলী সপু, কামরুজ্জামান রতন, নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, আমিনুল হক, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল খান, ডা. রফিকুল কবির লাবু, আফরোজা আব্বাস, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, মফিকুল আহসান তৃপ্তি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল, ঢাকা মহানগর দক্ষিলে তানভীর আহমেদ রবিন,
যুবদলের মোরতাজুল করিম বাদরু, মামুন হাসান, আ ক ম মোজাম্মেল হক, ছাত্রদলের আসাদুজ্জামান আসাদ, আলমগীর হাসান সোহান, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু, জহিরুল ইসলাম বিপ্লব, মফিজুর রহমান আশিক, জিয়া পরিষদের মহাসচিব ড. এমতাজ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আবদুল্লাহিল মাসুদ, প্রকৌশলী শরীফ, ড. রকনুজ্জামান, ২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এলডিপির শাহাদাৎ হোসেন সেলিম, জাগপার লুৎফর রহমান, জাতীয় পার্টির (জাফর) আহসান হাবিব লিঙ্কন, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, এনপিপি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, ডিএল’র সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা আজকে এমন একটি জায়গায় পৌঁছেছি যেখানে গণতন্ত্র প্রায় মৃত। এদেশে এখন কোনো গণতন্ত্র নেই। বিএনপির আজকের আন্দোলন শুধু খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য নয়। এ আন্দোলন গণতন্ত্রের জন্য, দেশের মানুষের মুক্তির জন্য। দেশেকে অশক্তি ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য আজকের আন্দোলন। তিনি বলেন, বিভিন্ন চলছাতুরী ও কলাকৌশল করে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিলম্বিত করছে এই অবৈধ সরকার। সম্পূর্ণ মিথ্য মামলা দিয়ে তাকে আটকে রাখা হয়েছে। সাংবিধানিকভাবে তার যে আইনী অধিকার তা থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাকে জামিন পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না। মির্জা ফখরুল সরকারকে অনির্বাচিত অভিহিত করে বলেন, যারা নির্বাচিত নয় তাদের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। তাই পরিষ্কার করে বলছি, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করে তারপর নির্বাচন দিতে হবে। সেই নির্বাচনে বিএনপি সহ সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে। সেই নির্বাচনে এ ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায় হবে বলে আমরা আশা করছি। তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা তাই দেশের মানুষকে আহ্বান জানিয়েছি আসুন ঐক্যবদ্ধ হই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলি। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবী আদায় করি।
জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি। ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে একটি জালিয়াতির কাগজ দিয়ে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে রাখা হয়েছে। তাকে একটি পরিত্যক্ত কারাগারে রেখে তিন দিন পর্যন্ত ডিভিশন দেয়নি। যার মাধ্যমে সরকার চেয়েছে তার মনোবল দুর্বল করতে। এখন তার জামিন দিতেও সরকার গড়িমসি করছে।তিনি বলেন, সরকার ইচ্ছে করেই খালেদা জিয়ার কারাবাস দীর্ঘ করতে চায়। যাতে তারা নিজেদের অধীনে একদলীয় নির্বাচন করে আবারো ক্ষমতায় থাকতে। কিন্তু আমরা সরকারকে বলতে চাই আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে। মোশাররফ হোসেন বলেন, আপনারা চান খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচন করতে। কিন্তু আপনাদের সে স্বপ্ন কখনো পূরণ হবে না। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবো। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আপানরা যত ষড়যন্ত্র করেন না কেনো খালেদা জিয়া আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। আমরা নেত্রীর নির্দেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। আর এ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধনে জনগণের সরকারী প্রতিষ্ঠা করবো। মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ একটি পাতানো নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু আমরা দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে সরকারের ষড়যন্ত্র রুখে দিব। সরকার আবারো একদলীয় শাসন ধরে রাখতে চায়। কিন্তু মনে রাখবেন বেশি লোভ করবেন না। লোভে পাপ পাপে কিন্তু মৃত্যু।
পাকিস্তানিরাও নির্যাতন করেছিলো তারাও টিকতে পারেনি। তিনি বলেন, আজ খালেদা জিয়াকে নয় দেশের গণতন্ত্রকে বন্দী করেছেন। আপনারা চাইছেন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে আবারো একক নির্বাচন করতে কিন্তু আপনাদের সে স্বপ্ন পূরণ হয় না। মনে রাখবেন এক মাঘে শীত যায় না। এরআগেও একটানা ২১ বছর ক্ষমতার বাহিরে ছিলেন মানুষ ক্ষমতায় আসতে দেননি। মির্জা আব্বাস বলেন, দেশের মানুষকে অনেক কষ্ট দিয়েছেন এখনো সময় আছে শান্তির পথে আসুন। কারণ বাংলাদেশের মানুষ আঘাত পেলে তা কখনো ভুলে না। তাই অনুরোধ করবো মানুষের ভাষা বুঝার চেষ্টা করুন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। মানুষের ভোটের ও নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিন। নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচন নামে একটা প্রহসন করে ক্ষমতায় আসা সরকার খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। তারা চেয়েছিলো খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে হেয় প্রতিপন্ন করতে চেয়েছিলো। কিন্তু তাদের সে আশা দেশের মানুষ শেষ করে দিয়েছে। খালেদা জিয়া এখন আপসহীন নেত্রী থেকে দেশের মানুষের মা হয়েছেন। তিনি বলেন, খালদে জিয়াকে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করে আনবো। তিনি আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু অনেক উস্কানি দেয়। হচ্ছে তাতে কেউ পা দিবেন না। আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই আগামী নির্বাচনে যাবো। তাকে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।

No comments

Powered by Blogger.