সিলেটে সংঘর্ষ, গুলিতে যুব ও শ্রমিক লীগের দুই নেতা নিহত by ওয়েছ খছরু

সিলেটে দু’পক্ষের সংঘর্ষের সময় প্রকাশ্য গুলি করে দুজনকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতদের একজন সদর উপজেলা শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি ও অপরজন যুবলীগ কর্মী। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি এলাকায় গতকাল দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় অর্ধশতাধিক রাউন্ড গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকায়। বিরাজ করছে টান টান উত্তেজনা। কোম্পানীগঞ্জের তেলিখাল ইউনিয়নের আলোচিত ইউপি চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগ নেতা, বরইকান্দি এলাকার বাসিন্দা আব্দুল লতিফ আলফু মিয়া ও বরইকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি গৌছ মিয়ার গ্রুপের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আহত ২৫ জনকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সংঘর্ষের সময় গুলির শব্দে প্রকম্পিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। এ কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা নিজ বাসাতেই বন্দি ছিলেন বরইকান্দির তিনটি রুটের বাসিন্দারা। নিহত দুজনই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পক্ষের লোক। ঘটনার সূত্রপাত সোমবার রাতে। রাত ৮টার দিকে আলফু মিয়া চেয়ারম্যানের ছেলে কাজী মুহিত তার বোনকে নিয়ে মোটরসাইকেলে বাড়িতে আসছিলেন। পথিমধ্যে বরইকান্দি ৩ নং রোডে তার গাড়িটি গতিরোধ করে কয়েকজন যুবক। এ সময় যুবকরা তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরে মুহিত তার বাড়িতে গিয়ে বোনকে পৌঁছে দিয়ে সেও তার ছোট ভাই কাজী বায়োজিতকে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে। তখন ওই যুবকরা তাদের ওপর হামলা চালায়। যুবকরা সংখ্যায় বেশি থাকায় তারা শেষ মুহূর্তে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। এ সময় ওই যুবকরা আলফু মিয়ার বাড়িতে গিয়েও হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এ সময় স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে তাদের ওপরও হামলা চালালে প্রতিবেশী আফতাব উদ্দিন আহত হন। চেয়ারম্যান আলফু মিয়ার বাড়িতে হামলা করে দুর্বৃত্তরা ফেরার সময় বাড়ির গেট ও বরইকান্দি ১০ নং রোডের বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। রাতে এলাকার মানুষ ও দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি খায়রুল ফজল এ নিয়ে দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। সকাল ১০টার পর তারা বসে বিষয়টি দেখবেন বলেও জানান। এদিকে সকালে চেয়ারম্যান আলফু মিয়া তার বাড়িতে শতাধিক লোকজন নিয়ে আসেন। এ খবরে আত্মীয়স্বজন ও এলাকার মানুষকে নিয়ে জড়ো হন গৌছ মিয়াও। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গৌছ মিয়া ও তার লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে বাসা থেকে রাস্তায় চলে আসে। এ সময় আলফু মিয়ার লোকজনও তাদের প্রতিরোধে নামে। ৩ নম্বর রুটে তারা উভয়পক্ষ মুখোমুখি হয়। এক পর্যায়ে আলফু মিয়ার পক্ষের লোকজন কাটা রাইফেল দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করে। তাদের ছোড়া গুলিতে ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন সিলেট সদর শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি মাসুক মিয়া ও স্থানীয় যুবলীগ নেতা বাবুল মিয়া। স্থানীয় লোকজন তাৎক্ষণিক তাদের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে ডাক্তার তাদের দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। দুইজনের শরীরে অসংখ্য বুলেটের চিহ্ন রয়েছে বলে ডাক্তাররা জানিয়েছেন। এদিকে দুইজন মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পরই তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ছাড়াও গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, উভয়পক্ষ এ সময় অর্ধশতাধিক রাউন্ড গুলিবিনিময় করে। গুলিবিনিময়ের সময় এলাকায় পুলিশের টহল দল উপস্থিত থাকলেও তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। সকাল ১০টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত থেমে থেমে কয়েক ঘণ্টা গুলিবিনিময় হয়। ৫-৬টি আগ্নেয়াস্ত্র সংঘর্ষে ব্যবহার হয় বলে স্থানীয়রা জানান। এ সময় গুলির শব্দে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। খবর পেয়ে দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি খায়রুল ফজল সহ পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে। এদিকে সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গৌছ মিয়া, সুজেল আহমদ, রহিম মিয়া, সলিমউদ্দিন, তৈয়ব আলী, আবুল কাহের, নজিমউদ্দিন, আহমদ হোসেন, তাজুল ইসলাম, ইলিয়াস আলী, দুলাল আহমদ সহ ১৭ জনকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মাহবুবুল হক জানিয়েছেন, তারা দুইজনের মৃতদেহ পেয়েছেন। আর আহতদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এদিকে ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অস্ত্রধারীদের আটক করতে অভিযান চালায়। কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি খায়রুল ফজল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, সংঘর্ষের সময় পুলিশ ওখানে ছিল। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছে। অস্ত্র এবং অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযানে রয়েছে বলে জানান তিনি। ঘটনার পর থেকে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এদিকে নিহত মাসুক মিয়া সিলেটের ছাত্রলীগ নেতা ফারুকের বড় ভাই। মাসুক দীর্ঘ দিন ধরে শ্রমিক লীগের সঙ্গে জড়িত। শ্রমিক লীগ নেতা এজাজুল ইসলাম এজাজের অনুসারী তিনি। মাসুক মিয়ার নানার বাড়ি বরইকান্দিতে। বাসা দরগাহ গেট হলেও তিনি নানার বাড়িতে বসবাস করতেন। আর বাবুল মিয়া নম্বর রুটের একজন সবজি বিক্রেতা। স্থানীয় যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেও জানায় এলাকাবাসী। এদিকে সিলেট সদর উপজেলা শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি শ্রমিক নেতা মাসুক আহমদকে নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি প্রকৌশলী এজাজুল হক এজাজ, সাধারণ সম্পাদক শামীম রশিদ চৌধুরী, জাতীয় শ্রমিক লীগ সিলেট মহানগর শাখার সভাপতি এম. শাহরিয়ার কবির সেলিম, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম রোমেন, সিলেট সদর উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মকবুল হোসেন খান ও সাধারণ সম্পাদক ফয়ছল মাহমুদ। মঙ্গলবার এক বার্তায় নেতৃবৃন্দ মাসুক আহমদকে নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন এবং আসামিদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান। পাশাপাশি নিহত মাসুক আহমদের রুহের মাগফেরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

No comments

Powered by Blogger.