ইস্টার্ন ঘৌটায় এক দিনে নিহত ৭০ বাধাগ্রস্ত ত্রাণ কার্যক্রম

সাময়িক বিরতি দিয়ে নতুন উদ্যোমে আবারে ইস্টার্ন ঘৌটায় বিমান হামলা শুরু করেছে সরকারি বাহিনী। এতে শুধু মঙ্গলবারেই নিহত হয়েছে অন্তত ৭০ জন বেসামরিক নাগরিক। এদিকে, সোমবার অল্প সময়ের জন্য হামলা বন্ধ হওয়ায় ত্রাণবাহী গাড়ি বহর ইস্টার্ন ঘৌটায় প্রবেশ করে। কিন্তু দুর্গত মানুষদের মধ্যে এসব ত্রাণ সরবরাহ করার আগেই আবারো হামলা শুরু করে সরকারি বাহিনী। এ খবর দিয়েছে আল-জাজিরা।
খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার দফায় দফায় সরকারি বাহিনীর চালানো হামলায় ইস্টার্ন ঘৌটা কেঁপে উঠে। রাশিয়ার দৈনিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান ও জাতিসংঘে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব পাসের পর এটিই ছিল ইস্টার্ন ঘৌটার সবচেয়ে প্রাণঘাতি দিন। সেখানে টানা ১৬ দিন ধরে হামলা চালাচ্ছে সরকারি বাহিনী। পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) বলেছে, সোমবার বিকাল থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৭০ জনেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। গত মঙ্গলবার ইস্টার্ন ঘৌটায় দৈনিক ৫ ঘণ্টা যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিল রাশিয়া। মূলত এর মাধ্যমে বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদে সরে পড়া ও আটকে পড়া মানুষদের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি বাহিনী এসব কিছু আমলে না নিয়ে বেসামরিক নাগরিক ও আবাসিক ভবনগুলোতে হামলা অব্যাহত রেখেছে। 
এর আগে সোমবার সীমিত সময়ের জন্য ইস্টার্ন ঘৌটায় হামলা বন্ধ ছিল। এ সময় সেখানে এক মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো ত্রাণ পাঠাতে সক্ষম হয় মানবাধিকার সংস্থাগুলো। ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি), দ্য সিরিয়ান আরব রেড ক্রিসেন্ট ও জাতিসংঘ সমন্বিতভাবে সেখানে ৪৬ ট্রাক ত্রাণ পাঠায়। সরকার নিয়ন্ত্রিত ‘চেক-পয়েন্ট’ দিয়েই এগুলো ইস্টার্ন ঘৌটায় প্রবেশ করে। তবে, ত্রাণকর্মীরা বলছে, ‘চেক-পয়েন্টে’ সিরিয়ার সেনাবাহিনী বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী আটকে রেখেছে।
সিরিয়ার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হোয়াইট হেলমেটের মুখপাত্র মাহমুদ আদম বলেন, অতি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রী ও খাদ্যবাহী ট্রাকগুলো সরকারি বাহিনীর হামলার মুখে দ্রুত  ইস্টার্ন ঘৌটা ছাড়তে বাধ্য হয়। ফলে ৯টি ট্রাকে বহনকৃত ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। এসব ত্রাণ দিয়ে প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করা যেত। ত্রাণ সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা বলেছেন, সরকারি বাহিনী ইস্টার্ন ঘৌটায় প্রায় ৭০ শতাংশ চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণে বাধা দিয়েছে। তারা সেখানে ইনসুলিনসহ অন্যান্য অতীব জরুরি চিকিৎসা সামগ্রী  সরবরাহ করতে বাধা দিয়েছে।
এদিকে, হোয়াইট হেলমেট ও সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, সোমবার রাতে চালানো হামলার পর থেকে প্রায় ৩০ জন শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তারা বিষাক্ত ক্লোরিন গ্যাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আর সোমবার রাতে সরকারি বাহিনীর হামলার মূল লক্ষ্য ছিল আবাসিক ভবনগুলো। এসওএইচআর বলেছে, হামলায় নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। কেননা এখনো অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে।
এদিকে, সরকারি বাহিনী দাবি করেছে, তারা ইস্টার্ন ঘৌটার ৪০ শতাংশ অঞ্চল নিজেদের দখলে নিয়েছে। তবে, স্থানীয় মানবাধিকার কর্মীরা সরকারি বাহিনীর এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।

No comments

Powered by Blogger.