ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টের সফর

ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং তিনদিনের বাংলাদেশ সফর শেষে গতকাল ঢাকা ত্যাগ করেছেন। তার এ সফর আমাদের জন্য বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এমন এক সময় এ সফরে এসেছিলেন, যখন মিয়ানমার থেকে আসা দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার ভার মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ। এ সংকট নিরসনে নানামুখী কূটনৈতিক প্রয়াস চলছে। এ পটভূমিতে ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের যে একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে, তা অস্বীকার করা যায় না। স্বভাবতই তার এ সফরে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন ইস্যুর পাশাপাশি প্রাধান্য পেয়েছে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি। রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। আসিয়ানভুক্ত দেশ হিসেবে ভিয়েতনাম এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে আমরা মনে করি। ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টের এ সফরে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, যন্ত্র প্রকৌশল এবং সাংস্কৃতিক খাতে সহযোগিতামূলক তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দু’পক্ষের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াংয়ের উপস্থিতিতে এসব সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ভিয়েতনামের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক সম্প্রসারণেরও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ত্রান দাই কুয়াংয়ের এ সফরের মধ্য দিয়ে এ ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হল। ভিয়েতনামের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতে ভিয়েতনাম যথেষ্ট উন্নত।
এ দুই খাতে দেশটির অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাতে পারি। এর বাইরে আরও কোন্ কোন্ খাতে ভিয়েতনামের সঙ্গে বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা দরকার। এছাড়া শিক্ষা, ক্রীড়া, পর্যটন ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে গড়ে উঠতে পারে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যে নানা বিষয়ে সাযুজ্য রয়েছে। দুই দেশের জনগণই লড়াকু। যে সময় বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের নাগপাশ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল, তার আগে থেকেই ভিয়েতনামের জনগণও দখলদার সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিয়োজিত ছিল এবং পরে বিজয়ী হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছেন, নিপীড়ক বাহিনীর বিরুদ্ধে ভিয়েতনামের জনগণের লড়াই আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছে। তাছাড়া দুই দেশের পরিবেশ ও সংস্কৃতিতেও মিল রয়েছে। দুই দেশেরই জনসংখ্যা অধিক এবং রয়েছে বিশাল বাজার। বাংলাদেশ সফরকালে ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টও এ কথা উল্লেখ করেছেন। দেশটি অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করেছে। ভিয়েতনাম উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশগুলোর একটি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। কাজেই পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে দুই দেশই আগ্রহী হবে এটাই স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে কূটনীতি অনুঘটকের ভূমিকা পালন করতে পারে। আজকের বিশ্বে কূটনীতি অর্থনৈতিক স্বার্থকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। পারস্পরিক আদান-প্রদানের মধ্য দিয়েই সম্পর্কের উন্নতি ঘটে এবং তা থেকে লাভবান হতে পারে উভয় দেশই। আমরা আশা করব, ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াংয়ের এ সফরের মধ্য দিয়ে দু’দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে।

No comments

Powered by Blogger.