‘প্রশ্ন ফাঁসকারীদের ফায়ারিং স্কোয়াডে দেয়া উচিত’

প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ধারাবাহিক ব্যর্থতার মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া এসেছে খোদ প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের কাছ থেকে। তিনি বলেছেন, দেশের আগামী প্রজন্মকে ধ্বংসের এই প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত, তাদের ‘ফায়ারিং স্কোয়াডে’ দেওয়া উচিত। সন্তানের সাফল্যের প্রত্যাশায় অভিভাবকদের নৈতিকতা বিসর্জন কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। মঙ্গলবার ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তৃতায় তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে শিক্ষক-ছাত্র-অভিভাবকদের সংশ্লিষ্টতা নিয়েও বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বক্তৃতার একপর্যায়ে লিখিত বক্তব্যের বাইরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট বলতে থাকেন, সব বাবা-মাই চায়, তার সন্তান ফার্স্ট-সেকেন্ড হোক, গোল্ডেন এ প্লাস পাক। কিন্তু যখন শোনা যায় যে বাবা-মাই ছেলেকে নকল সরবরাহ করছে- তা কী করে সম্ভব। এর চেয়ে লজ্জাজনক-জঘন্য কাজ আর কি হতে পারে! এই বাপ আর মা তার ছেলেমেয়েকে কী শিখাইতাছে? তারে কী বানাইতে চাইতাছে? ভবিষ্যতে তারে দিয়া কী হবে? দেশের কী হবে? টিউশনি আর কোচিং ব্যবসার প্রসারের জন্য শিক্ষকদের নৈতিকতা বিসর্জন নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি বলেন, ‘যেসব শিক্ষক ছেলেমেয়েদের শিখাইবো, তারা নিজেরাই... তার মার্কেট ভালা করার জন্য, প্রাইভেট পড়াইবার মার্কেট ভালা করার জন্য সে যদি প্রশ্ন কইয়া দেয়- ‘এই প্রশ্ন আইতাছে লেখ’- মার্কেট ভালো হবে, বেশি বেশি (শিক্ষার্থী) পড়তে আইব, এসব চিন্তা থেকে তারা এইগুলি করতেছে। তারা দেশটাকে কী দিচ্ছে? এখন কথা কইলেতো খারাপ কথা- দেশ ও জাতির স্বার্থে ‘দে শুড গো টু ফায়ারিং স্কোয়াড। ফায়ারিং স্কোয়াডে দেওয়া উচিত।’
উনিশশ পঞ্চাশের দশকে মেট্রিক পাস করা আবদুল হামিদ সেই সময়ের সঙ্গে আজকের পরিস্থিতির তুলনা করে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহের অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমাদের তো বাপ-মা খবরই নিছে না। স্কুলে গেছে নি? অহনতো পাছার মইধ্যে লাইগা থাকে। লাইগা থাকে ভালা কথা, অসুবিধা নাই। ভালা জিনিস শিখাক। ফার্স্ট-সেকেন্ড হইলে কী হয়? আমিতো খুব খারাপ ছাত্র আছিলাম। আমার মতো খারাপ ছাত্র যদি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হইতে পারে, তাহলে অত ভালা ছাত্র হওয়ার দরকারটা কী? তার এই বক্তব্যের সময় পুরো মিলনায়তন তুমুল হাততালিতে ফেটে পড়ে।
এমসিকিউ প্রশ্ন পদ্ধতি বদলানোর পক্ষে মত দিয়ে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমার মনে হয় এখন যে টিক মার্ক দিয়া দেয়। ইট শুড বি স্টপড। এমন সিস্টম করা দরকার প্রশ্ন আগেই চলে আসবে। এই প্রশ্ন আইব, এখন তুমি লেখ। মিনিস্ট্রি থেকে বইলা দেন- এই প্রশ্ন আইব। সব কোর্স-সিলেবাস মিলাইয়া ২০-২৫টা প্রশ্ন করেন। সব প্রশ্ন ওয়েবসাইটে দিয়া দেন। ২৫টা প্রশ্ন থাকলে পুরো সিলেবাস কাভার করবে। কিন্তু কুনডা আইবো হেইডা কইতে পারত না- এই সিস্টেম যদি হয়, তাহলে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে দুশ্চিন্তা করা লাগবে না। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট শিক্ষা পদকের জন্য মনোনীত শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান ও আন্তঃপ্রাথমিক বিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পদক বিতরণ করেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়েরে সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. মোতাহার হোসেন বক্তব্য দেন।

No comments

Powered by Blogger.