স্মরণ : প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম

জন্ম ছেবন্দী গ্রাম, চট্টগ্রাম, ২৮.৬.১৯২০। ভাষা আন্দোলনের জনক, শিক্ষাবিদ ও লেখক। স্থানীয় বরমা হাইস্কুল থেকে ১৯৩৯ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক ও চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ১৯৪১ সালে প্রথম বিভাগে আইএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদে ভর্তি হন। এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে দ্বিতীয় শ্রেণীতে বিএসসি অনার্স ও ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীতে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার নিযুক্ত হন। প্রায় আট বছর এ পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ‘তমদ্দুন মজলিস’ নামে একটি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করেন। মজলিসের পক্ষ থেকে ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা, না উর্দু’ নামে একখানি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। এতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপন করেছিলেন। তমদ্দুন মজলিসের মুখপত্র হিসেবে সাপ্তাহিক সৈনিক পত্রিকা প্রকাশ (১৪ নভেম্বর ১৯৪৮) ও পরিচালনা (১৯৪৮-১৯৬১) করেছেন।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকাসহ সারা পূর্ববাংলায় যে ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয় এবং ১৫ মার্চ (১৯৪৮) পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন ও রাষ্ট্রভাষা সংগ্রামীদের মধ্যে যে ৮ দফা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তার অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের (৩০ জানুয়ারি ১৯৫২) অন্যতম সদস্য হিসেবে বায়ান্নর ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।‘ খেলাফতে রব্বানী পার্টি’র (১৯৫২) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ১৯৫৪ সালের মার্চে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া-বোয়ালখালী নির্বাচনী এলাকা থেকে পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার মাধ্যমে শিক্ষাদানের গুরুত্ব অনুধাবন করে ঢাকায় ‘বাঙলা কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল (১৯৬২-১৯৮১) ছিলেন। সমকালীন ঐতিহাসিক ঘটনাবলি, ইসলামি আদর্শ ও জীবনব্যবস্থার ওপর বহু গ্রন্থের প্রণেতা। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা (১৯৪৭), একমাত্র পথ (১৯৪৯), মুক্তি কোন পথে (১৯৫২), ঘোষণা (১৯৫২), ইসলাম কি দিয়েছে এবং কি দিতে পারে (১৯৫২), বিবর্তনবাদ (১৯৫২), শ্রেণীসংগ্রাম (১৯৫৩), দু’টি প্রশ্ন (১৯৫৫), শাসনতান্ত্রিক মূলনীতি (১৯৫৫), একুশ দফার রূপায়ণ (১৯৫৫), আধুনিক চিন্তাধারা (১৯৬৪), সংগঠন (১৯৬৪), ইসলামি রাষ্ট্রনীতি, কোরানিক অর্থনীতি ইত্যাদি তার রচিত গ্রন্থ। কলেজপর্যায়ের বিজ্ঞান পাঠ্যপুস্তক বাংলায় লেখায় অগ্রণী ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে তার অবদান অবিস্মরণীয়। মৃত্যু ঢাকা, ১১.৩.১৯৯১।

No comments

Powered by Blogger.