জাতিগত নিধনের প্রমাণ চায় মিয়ানমার

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন ও গণহত্যার অভিযোগ ‘ভয়াবহ’ উল্লেখ করে এর সপক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ চেয়েছে মিয়ানমার সরকার। বৃহস্পতিবার জেনেভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউং তুন এ প্রমাণ চান। খবর রয়টার্সের। সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, রাখাইনে মুসলিম সম্প্রদায়ের বেশিভাগ এখনও সেখানেই বসবাস করছে। যদি সেখানে গণহত্যাই চালানো হতো তবে তারা সবাই পালিয়ে যেত। তিনি আরও বলেন, জাতিগত নিধন ও গণহত্যার অভিযোগ খুবই গুরুতর এবং এটা হাল্কাভাবে নেয়া উচিত নয়। সেখানে জাতিগত নিধন ও গণহত্যা হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে রায় দেয়ার আগে আমাদের উচিত আসলেই সেখানে কি হয়েছে সেটা দেখে নেয়া। যদিও এই দেখে নেয়ার সুযোগ মিয়ানমার সরকারই দিচ্ছে না। এমনকি তারা জাতিসংঘের তদন্ত দলকেও এখনও রাখাইনে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি। তুন আরও বলেন, রাখাইন থেকে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীদের মিয়ানমার সরকার ফেরত নিতে চায় এবং তাদের যথাযথ নিরাপত্তা ও সম্মান দেয়া হবে। সরকার চায় না তারা দেশের বাইরে থাকুক। রাখাইনের ৩০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে খুব কম সংখ্যকই দেশত্যাগ করেছে। তুন বলেন, পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীদের মধ্যে যারা মিয়ানমারের নাগরিকত্ব চাইবে আমরা তাদের খুশি মনে স্বাগত জানাব। কিন্তু তাদের একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
তারা এমনি এমনিই নাগরিকত্ব পাবে না। গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে রাখাইনে পুলিশ পোস্ট ও সেনাঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলার পর সেখানে সেনা অভিযান শুরু হয়। গত ছয় মাসে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। অতীতে বিভিন্ন সময় আরও প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করে। মিয়ানমারের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন বলছে, রাখাইনের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৯০ শতাংশই পালিয়ে গেছে। বুধবার জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান জেইদ রাদ আল-হুসাইন বলেন, রাখাইনে সেনা অভিযান নিয়ে বিশ্বজুড়ে অভিযোগ ওঠার পরও মিয়ানমার সেনাবাহিনী তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশে গড়িমসি করেছে। আমার দৃঢ় সন্দেহ সেখানে গণহত্যা চালানো হয়েছে। অন্যদিকে রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানে জনশূন্য হয়ে পড়া রোহিঙ্গা গ্রামগুলো বুলডোজার দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। তবে মিয়ানমার সরকার দাবি করেছে, পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তারা গ্রামগুলোতে বুলডোজার চালিয়েছে। মিয়ানমারের উপদেষ্টার দাবি, মুসলমানদের বড় একটি অংশ পালিয়েছিল। কারণ, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সশস্ত্র গ্রুপ তাদের ভয় দেখিয়েছিল। আরসা সদস্যরা গ্রামবাসীকে জোর খাটিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর জন্য দলে টেনে নেয় বলে অভিযোগ করেন থাউং তুন। তার অভিযোগ, আরসা পোড়ামাটি নীতি নিয়ে গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে পালিয়ে গেছে।

No comments

Powered by Blogger.