রাজাকারের তালিকা

খুব দ্রুতই রাজাকারদের নামের তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে যারা সহযোগিতা করেছিল, তারা সাধারণভাবে রাজাকার নামে কুখ্যাত হয়ে আছে। পাকিস্তানিদের সহযোগী আরও দুটি সংস্থার নাম ছিল আলবদর ও আলশামস। রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি নানা অপকর্মে সহযোগিতা প্রদান করলেও দীর্ঘ ৪৭ বছর তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ফলে দেশদ্রোহী ও মানবতাবিরোধী এসব অপরাধীর অনেকেই বিচার প্রক্রিয়ার বাইরে থেকে গেছে, কেউ বা আবার কিছুদিন আÍগোপন করে থাকার পর নানা কৌশলে সমাজে পুনর্বাসিতও হয়েছে। এমনকি রাজাকার-আলবদর বাহিনীর শিরোমণিদের কেউ কেউ মন্ত্রিত্বও লাভ করেছিল। দীর্ঘ প্রায় অর্ধশতাব্দীকাল পর রাজাকারদের তালিকা তৈরির যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তাকে সাধুবাদ জানাতে হবে।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) তদন্ত সংস্থা জরুরি ভিত্তিতে রাজাকারদের তালিকা তৈরি করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে চিঠি দিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সব জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্টদের কাছে তালিকা চাওয়া হয়েছে। সারা দেশের তালিকা হাতে পাওয়ার পর তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে মেট্রোপলিটন এলাকাগুলোয় কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, অচিরেই সেসব এলাকার তালিকাও তৈরি করা সম্ভব হবে। রাজাকারদের তালিকা তৈরি করে তা প্রকাশ করার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেই উদ্যোগ যাতে বিতর্কমুক্ত অবস্থায় বাস্তবায়িত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে দেশে প্রচুর বিতর্ক হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও তালিকাভুক্ত হয়ে সরকারি ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন, এমন লোকের সংখ্যা কম নয়। এমনকি সরকারি উচ্চপর্যায়ের অনেকেই চাকরিতে বাড়তি সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সেজেছেন। আমরা মনে করি, রাজাকারের তালিকা তৈরিতে যাতে কোনো গলদ না থাকে, সেদিকে সংশ্লিষ্টরা সচেতন থাকবেন। প্রকৃতই যারা পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করেছে অথবা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল, তারাই যেন শুধু তালিকাভুক্ত হয়। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে কিংবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যাতে তালিকা তৈরি না হয়, সে ব্যাপারে শতভাগ সততার পরিচয় দিতে হবে। জাতি প্রকৃত অপরাধীদের পরিচয় ও তাদের শাস্তি দেখতে চায়। অন্যকিছু নয়।

No comments

Powered by Blogger.