পণ্যজট লেগেই আছে

দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল। বছরে এখান থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সরকার প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করলেও বন্দর অবকাঠামোর উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন হয়নি। বন্দরটিতে আধুনিকতার কোনো ছোঁয়া না লাগায় ব্যবসায়ীরা হতাশা প্রকাশ করছেন। এখানে সার্বক্ষণিক পণ্য ও যানজট লেগেই থাকে। অভ্যন্তরে জায়গা না থাকায় বন্দর এলাকায় পণ্য খালাসের জন্য কয়েক হাজার ভারতীয় ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকছে দিনের পর দিন। আর বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল ও কালিতলা ট্রাক পার্কিংয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৫ হাজারেরও বেশি পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোলে প্রবেশের অপেক্ষায়। এ বন্দরের গুরুত্ব বাড়লেও অবকাঠামোর কোনো পরিবর্তন হয়নি। বহাল রয়েছে পুরনো আমলের কার্যব্যবস্থা। নানা অনিয়মের মধ্যে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। দিন দিন সমস্যা বাড়ছে বন্দরের। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আর কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। কাগজ-কলমে উন্নয়নের কথা বলা হলেও বাস্তবে এ বন্দরে কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। এই বন্দর দিয়ে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি-রফতানি হয়।
এছাড়া বছরে প্রায় ১৩ লাখ যাত্রী যাতায়াত করে থাকে। সম্প্রতি এ বন্দরে ৮৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। উন্নয়ন কাজে ব্যবহার হচ্ছে পুরাতন আধলা ইট, খোয়া এবং নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী। এডিবির অর্থায়নে (এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) এ বন্দরে নির্মাণ কাজ করছেন ঢাকার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মনিকো লিমিটেড। দুই বছরের মধ্যে তাদের এই কাজ সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। এসব উন্নয়ন কাজের মধ্যে রয়েছে- নতুন দুটি আমদানি পণ্য রাখার গুদাম, চারটি ওপেন শেড, পানি নিষ্কাশনের ড্রেন, বন্দরের অভ্যন্তরের সড়ক ও ইয়ার্ড নির্মাণ। তবে বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক মানের কাজে এমন দশা অবাক করেছে তাদের। ৪৫ বছরের পুরনো বিল্ডিং ভেঙে সেখান থেকে ইট নিয়ে নতুন করে শেড তৈরি করলে ধসে যেতে পারে যে কোনো সময়। এদিকে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, এতে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, প্রতিবছর এই বন্দর থেকে সরকার প্রায় চার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে। কিন্তু এখানে দীর্ঘদিন ধরে অবকাঠামোর চিত্র বেহাল। এতে পণ্য খালাসে বিলম্ব ও অর্থনৈতিক ক্ষতিতে ব্যবসায়ীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আজ ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে কিছু কাজ শুরু হলেও সেখানে পুরনো আধলা ইট খোয়ার ব্যবহার দুঃখজনক। তিনি বলেন, বেনাপোল স্থলবন্দর এ দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। স্থলবন্দরটি খুবই অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। ৫০ হাজার টন ধারণক্ষমতার বন্দরে প্রতিদিন ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টন পণ্য ওঠানো-নামানো হয়ে থাকে। প্রতিদিন পণ্য বোঝাই অন্তত ৩৫০ ট্রাক লোড-আনলোডের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। ধীরে ধীরে বন্দরটি ব্যবসায়িক কার্যক্রমের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এই বন্দরকে আরও গতিশীল করে তোলার জন্য প্রথমেই দূর করতে হবে জায়গার সংকট। জায়গা সংকটের কারণে অনেক পণ্য রাখা যাচ্ছে না।
শত শত কোটি টাকার পণ্য খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখা হয়েছে। ফলে ভারত থেকে পণ্য প্রবেশে বিলম্ব হচ্ছে। এ কারণে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে পণ্য বোঝাই ট্রাকগুলোকে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের জন্য ৮ থেকে ১০ দিন অপেক্ষায় থাকতে হয়। তিনি আরও বলেন, এ বন্দরকে ব্যবসা-বাণিজ্যের উপযোগী করে তুলতে এর ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণ করতে হবে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। বাড়াতে হবে বন্দরের অত্যাধুনিক নতুন ইকুইপমেন্ট। জরুরি ভিত্তিতে ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল রাখার জন্য একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গুদামসহ ১৫টি শেড নির্মাণের দাবি জানান তিনি। এ বিষয়ে সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তাহলে বন্দরটির কর্মচাঞ্চল্য কমে এটি খুব শিগগিরই অচল হয়ে পড়বে। বেনাপোল স্থলবন্দর উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) রেজাউল করিম জানান, বন্দরে ১০০ কোটি টাকার কাজ শুরু হয়েছে। বেনাপোল বন্দরে নতুন ২টি শেড, ফ্লোর পাকাকরণ, ড্রেন নির্মাণসহ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে। সাময়িক কিছু সমস্যা আছে কাজ শেষ হলে বন্দরে কোনো সমস্যা থাকবে না। বন্দরে পণ্যজটও কমে যাবে বলে আশা করছি।

No comments

Powered by Blogger.