‘আইন মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতায় বিচার বিভাগ অকেজো হয়ে যাচ্ছে’

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট) পরিচালনার বিধানকে অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে গঠিত সাত বিচারকের আপিল বিভাগ আগামী ২রা জুলাই পর্যন্ত এ স্থগিতাদেশ দেন। সর্বোচ্চ আদালতের এ আদেশের ফলে ওই সময় (২রা জুলাই) পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত চলবে বলে জানান আইনজীবীরা। দণ্ডবিধির অনেক আইন ভ্রাম্যমাণ  আদালত আইনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয়টি গতকাল শুনানিতে উল্লেখ করে সর্বোচ্চ আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশ্যে বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের অসহযোগিতার কারণে বিচার বিভাগ অকেজো হয়ে যাচ্ছে। এটি সরকারকে বলে দেবেন। আইন কমিশনের সুপারিশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনবিদ ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আইন করা উচিত বলে শুনানিতে মত দেন আপিল বিভাগ। 
এর আগে গত ১১ই মে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিধানকে অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। একই সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ১১টি বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে ঘোষণা করে আদালত। এ সংক্রান্ত পৃথক তিনটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ রায় দেন হাইকোর্ট। ঘোষিত রায়ে বলা হয়, ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ১১টি বিধান বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ-সংক্রান্ত সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরপন্থি। এ ছাড়া আদালতে চ্যালেঞ্জ হওয়া ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের অতীত সিদ্ধান্ত মার্জনা করা হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। পরে হাইকোর্টের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বার আদালতে আবেদন করে। শুনানি শেষে চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা ১৮ই মে পর্যন্ত স্থগিত করে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। গতকাল আদালতে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী হাসান এম এস আজিম। গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আসন্ন রমজান মাসসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে  শুনানি পেছানোর আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত ২রা জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। আপিল বিভাগের আদেশে বলা হয়, ওই সময় (২রা জুলাই) পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত থাকবে। একই সঙ্গে এই সময়ের মধ্যে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত আপিল করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.