সালমানের সামনে মাথা নোয়ালেন ট্রাম্প

পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সৌদি আরব সফরে দেশটির বাদশার সামনে মাথা নোয়ানোর ঘটনায় তীব্র কটাক্ষ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার তিনি নিজেও সেই একই কাণ্ড ঘটালেন। ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়, ২০০৯ সালে সৌদি সফরে বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজের সঙ্গে করমর্দন করার সময় কোমর বাঁকিয়েছিলেন ওবামা। কয়েক বছর পর নির্বাচনী প্রচারণায় এ নিয়ে তীব্র কটূক্তি করেন ট্রাম্প। তিনি বলেছিলেন, ‘ওবামা প্রার্থনা ও আবেদনের ধাঁচে মাথা নোয়ালেন।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রথম বিদেশ সফরের অংশ হিসেবে শনিবার সৌদি আরবে যান। সেখানে তিনি একই ঘটনার জন্ম দেন। শনিবার রাতে ট্রাম্পকে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদক পরিয়ে দেন সৌদি বাদশা। ‘মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য’ ট্রাম্পকে এ সম্মাননা দেয়া হয় বলে রিয়াদ দাবি করেছে। শনিবার রিয়াদের আল ইয়ামায়াহ প্রাসাদে ট্রাম্পকে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘অর্ডার অব আবদুল আজিজ আল-সৌদ মেডেল’ দেয়া হয়। তাকে স্বর্ণের মেডেলটি পরিয়ে দেন ৮১ বছর বয়সী বাদশা সালমান। এ সময় বাদশার সামনে মাথা নত করে মেডেল পরেন ট্রাম্প। তার এক ঘনিষ্ঠ বলছেন, ‘এটা মাথা নোয়ানো নয়। তিনি মাথা নিচু করেছেন মাত্র। কারণ এ সময় প্রেসিডেন্ট মেডেল গ্রহণ করছিলেন।’
ট্রাম্পের এ আচরণের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি হোয়াইট হাউস। ওবামার ওই ঘটনা সম্পর্কে ২০০৯ সালে পলিটিকো ম্যাগাজিনে প্রেসিডেন্টের এক ঘনিষ্ঠ জানান, এটা মাথা নোয়ানো ছিল না। ওবামা সৌদি বাদশার হাত ধরে করমর্দন করছিলেন এবং তিনি (ওবামা) ছিলেন একটু লম্বা। নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ জাপানের সম্রাটের সামনেও একই কাণ্ড করেছিলেন। এছাড়া সৌদি বাদশার হাত ধরে তাতে চুমু দিয়েছিলেন জর্জ বুশ। তবে ওবামার ওপর মাথা নোয়ানোর অভিযোগ উঠেছিল। উইকলি স্টান্ডার্ড জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট বিদেশি বিশিষ্টজনদের সামনে মাথা নোয়ান না, এমনকি তিনি বাদশা, সম্রাট বা প্রিন্স হলেও। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে বর্তমানে সৌদি আরবে রয়েছেন ট্রাম্প। সেখানে তাকে আধুনিক সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল আজিজ আল সৌদের নামে চালু করা সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা দেয়া হয়। পদকটি সৌদি আরবের সেবা করার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিদেশি নাগরিকদের দেয়া হয়। এর আগে যেসব বিদেশি ব্যক্তিত্ব এ পদক পেয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা ও ডব্লিউ বুশ, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। এরই মধ্যে রিয়াদের কাছে ১১,০০০ কোটি ডলারের সমরাস্ত্র বিক্রির চুক্তি সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্পের ‘তলোয়ার’ নাচ : প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সৌদি বাদশা সালমানের সঙ্গে ঐতিহাসিক এক নৃত্যে অংশ নিয়েছেন। শনিবার রাতে রিয়াদের মোরাব্বা প্যালেসে সৌদি আরবের ঐতিহ্যবাহী ‘আরধা নাচে’ অংশ নেন ট্রাম্প। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন এবং হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের প্রধান কৌশলগত উপদেষ্টা স্টিভ ব্যাননসহ অন্য কূটনীতিকরাও তাদের সঙ্গে এ নাচে অংশ নেন। এক লাইনের বিশেষ কবিতা পাঠের মাধ্যমে ‘আরধা নাচ’ হয়ে থাকে। এ সময় ঢোলের তালে তালে পুনরায় কবিতা পাঠ করা হয়। আর জাতীয় অনুষ্ঠান হিসেবে সবাই তরবারি প্রদর্শন করেন। ট্রাম্পকেও এ রীতি অনুসরণ করে উৎফুল্লচিত্তে নাচতে দেখা গেছে। এ সময় তার হাতেও তরবারি ছিল। সৌদি আরবে এ নাচের মাধ্যমে নৃত্যকারীরা তাদের আনন্দ ও গর্ব প্রকাশ করে থাকেন। একই সঙ্গে বাদশার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। সাধারণত সৌদি সেনাবাহিনীর কোনো অর্জন উদযাপনে ‘আরধা নাচ’ হয়ে থাকে। তবে ইদানীং দেশটির বিশেষ অনুষ্ঠান বা উৎসবেও এ নাচ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

No comments

Powered by Blogger.