সেনা অভিযানের প্রশংসায় ভারতের সেনা কর্মকর্তারা

সিলেটের আতিয়া মহলে জঙ্গি আস্তানায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম প্যারা-কমান্ডো ব্যাটালিয়নের ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’র প্রশংসা করেছে ভারতের প্রথিতযশা কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা। তারা বলছেন, অপারেশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা চৌকস ও সাহসী ভূমিকা পালন করেছে, যা প্রশংসার দাবিদার। এ অভিযান তাদের জন্য শিক্ষণীয়ও। ভারতের ইস্টার্ন আর্মি কমান্ডের সাবেক চিফ অব স্টাফ এবং কাশ্মীরে নেতৃত্ব দেয়া সেনা কর্মকর্তা লে. জেনারেল জন রঞ্জন মুখার্জি বলছেন, অপারেশনটিতে উচ্চপর্যায়ের ম্যাচিউরিটি এবং কৌশলপূর্ণ ধৈর্যের বিষয়টি বিদ্যমান ছিল। জঙ্গিদের ওপর বুলেট ব্যবহারের কৌশলও ছিল যুক্তিপূর্ণ। জঙ্গিরা সুইসাইড ভেস্ট ব্যবহারের কথা জানার পরও অভিযান সঠিক পথে এগিয়েছে। তিনি বলছেন, ওই অভিযানে আগুনের ঝুঁকির মধ্যে বেসামরিক লোকদের উদ্ধার, তাদের কাউকে ফেলে না আসা ইত্যাদি ছিল ব্যাপক সফলতা। হলি আর্টিজানের অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লেগেছে। তিনি অপারেশন টোয়াইলাইটে অংশ নেয়া ১৭ ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আনোয়ারুল মোমেন, প্রথম প্যারা-কমান্ডো ব্যাটালিয়নের সিও লে. কর্নেল ইমরুল হাসানসহ কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানান। রঞ্জন মুখার্জির একসময়ের সহকর্মী এবং আসাম রাইফেলসের সাবেক ডেপুটি চিফ মেজর জেনারেল অরুণ রায়। তিনি সিলেটে অভিযানে অংশ নেয়া প্রথম প্যারা-কমান্ডো ব্যাটালিয়নের সদস্যদের তিনটি বিষয়ের প্রশংসা করেছেন। সেগুলো হল- অপারেশন অঞ্চল থেকে গণমাধ্যম সরিয়ে দেয়া, লম্বা সময় নিয়ে বেসামরিক লোকজন উদ্ধার এবং কৌশলে আগুন নিয়ন্ত্রণ। এগুলো তাদের জন্য শিক্ষণীয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, অপারেশনে টিম স্পিরিটও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে। শ্রীলংকার জাফনায় অপারেশনে নেতৃত্ব দেয়া ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল কেকে গাঙ্গুলী বলছেন, সিলেটের অপারেশনে সেনাবাহিনীর বুদ্ধিমত্তা ও সুচিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে। অপারেশনটি সেনাবাহিনীর জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে কৌশলপূর্ণ চাতুর্যতার জন্য।
অপারেশনে ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যাপারটি ছিল বিস্ময়কর। ১৯৮৬ সালে চায়না সীমান্তে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা কর্নেল অশিস দাস বলছেন, কঠিন মুহূর্তে পরিস্থিতি সামাল দিতে কীভাবে চাতুর্যপূর্ণ কৌশল অবলম্বন করতে হয়, তা প্যারা কমান্ডোরা দেখিয়েছে। তিনি বলছেন, ভারতে এ ধরনের অভিযানের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিষ্প্রয়োজন। এ ধরনের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে ভারতের প্রশাসন দূরে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটা হয়নি। কাশ্মীরে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া কর্নেল পার্থ ভট্টাচার্য বলছেন, সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও প্রশিক্ষিত বাহিনী রয়েছে। তারা যে কোনো সময়েই সাড়া দিতে তৎপর। তিনি বলেন, সিলেট অপারেশনে কমান্ডোদের দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তার সঠিক প্রয়োগ সফলতা এনে দিয়েছে। পার্থ ভট্টাচার্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে কর্নেল সৌমিত্র রায় বলছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অনেক পথ পাড়ি দিয়েছে। তারা মিশন ও ভিশন নিয়ে কাজ করে। অপারেশন টোয়াইলাইট তার প্রমাণ। উল্লেখ্য, ২৩ মার্চ মধ্যরাতে সিলেটের আতিয়া মহলের নিচতলায় জঙ্গিরা অবস্থান করছে বলে জানতে পারে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। পরদিন সকাল ৮টার দিকে ওই বাড়ির ভেতর থেকে গ্রেনেড ছোড়া হয়। পরে ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াতকে পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সন্ধ্যা থেকে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দল। পরদিন তারা ওই ভবনের অন্যান্য বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে আনে। ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় অভিযান নিয়ে সেনাবাহিনীর সংবাদ সম্মেলন চলাকালে দুই দফা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয় জন নিহত হন। আহত হন র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানসহ অন্তত ৫০ জন।

No comments

Powered by Blogger.