পোশাক খাতের বাইরের শ্রমিকদের অধিকার কম গুরুত্ব পাচ্ছে

তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকদের অধিকার এবং কর্মপরিবেশ এ দেশে যতটা গুরুত্ব পায়, অন্য খাতের বেলায় তা ততটা গুরুত্ব পায় না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তাই শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে তৈরি পোশাক খাতের বাইরে অন্য খাতে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ‘প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক যোগসূত্র ও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গতকাল মঙ্গলবার এসব কথা বলেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স (বিআইজিডি) যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় তিনটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। বহুজাতিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান র‌্যান্ড, বিআইডিএস, বিআইজিডি ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এসব গবেষণা করেন। কর্মশালায় র‌্যান্ডের গবেষক কৃষ্ণ কুমার ও শান্তি নটরাজ দুটি এবং বিআইডিএসের গবেষক মিনহাজ মাহমুদ একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত ছাড়াও এসব গবেষণার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুই হাজার শ্রমিকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্প হওয়ায় পোশাকশিল্পের শ্রমনীতি ও কর্মপরিবেশ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। কিন্তু পোশাকশিল্পের বাইরে বাংলাদেশে যে বিরাট একটি অর্থনীতি, সেখানে শ্রমিকেরা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করে, সেটার দিকে সেভাবে নজর দেওয়া হয় না। নীতিগতভাবে শুধু পোশাক খাতের দিকে না তাকিয়ে সব খাতের শ্রমিকদের দিকে তাকাতে হবে। কর্মশালায় উপস্থাপিত প্রথম প্রবন্ধের বিষয়বস্তু ছিল প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে খাতভিত্তিক প্রবৃদ্ধির ভূমিকা। প্রবন্ধে বলা হয়, গত দুই দশকে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি বৃদ্ধির সঙ্গে এ খাতের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক—দুই খাতেই কর্মসংস্থান বেড়েছে। একই সঙ্গে স্ব-উদ্যোগে তৈরি কর্মসংস্থানও বেড়েছে।
অর্থাৎ একটি শিল্প খাতের রপ্তানি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে। দ্বিতীয় প্রবন্ধে বলা হয়, প্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান গত কয়েক বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু তারপরও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিক খাতের কাজের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেশি। অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজের পরিমাণ কেন বাংলাদেশে বেশি, সেটির কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়েছে গবেষণায়। সবশেষ প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলা হয়, বাংলাদেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে যেসব শ্রমিক কাজ করেন, তাঁদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের উদ্যোক্তাদের নিয়মের মধ্যে আনা গেলে তা শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশের বিষয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক খাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে ধরনের শ্রমনীতি মেনে চলা প্রয়োজন, সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই মানা হয় না। সে অর্থে বলা যেতে পারে, বাংলাদেশের পুরো অর্থনীতিই এখনো অপ্রাতিষ্ঠানিক। বিআইডিএসের মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদ ও বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক সুলতান হাফিজ রহমান যৌথভাবে কর্মশালাটি সঞ্চালনা করেন। প্রবন্ধের ওপর নিজেদের মতামত তুলে ধরে বক্তব্য দেন সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ জহির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক সেলিম রায়হান, বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক কাজী আলি তৌফিক, জ্যেষ্ঠ গবেষক নাজনীন আহমেদ প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.