নারকোটিক্সের ‘কালো বিড়াল’ সরে পড়লেন নিরাপদে

‘আপনি যেখানে চান সেখানেই পোস্টিং দেব। কিন্তু তার আগে বলেন, ভালো পোস্টিং পেলে আমার জন্য কী সেবা করতে পারবেন। কত দেবেন, সেটা পরিষ্কার করেন। আমি কিন্তু কোনো রাখঢাক পছন্দ করি না, যা বলি সরাসরি বলি।’ কথাটি সরকারের একজন পদস্থ কর্মকর্তার। তিনি হলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক (ডিজি) খন্দকার রাকিবুর রহমান। শুনতে অবাক মনে হলেও এখানে যোগ দেয়ার কিছু দিনের মধ্যে তিনি বদলি বাণিজ্য বিষয়ে এভাবেই কথা বলতেন অধস্তনদের সঙ্গে। একজন ইন্সপেক্টরকে গুলশান সার্কেলে পোস্টিং দেয়ার কথা বলে তার কাছে এভাবেই ঘুষ চান তিনি। ঘুষের ক্ষেত্রে খুবই পারদর্শী এ কর্মকর্তার অসংখ্য অভিযোগ নিয়ে যুগান্তর অনুসন্ধানী টিমের পক্ষ থেকে এক মাস অনুসন্ধান করা হয়। এতে বেরিয়ে আসে তার ঘুষ লেনদেনের নানা চিত্র। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অডিও ভিজুয়াল ডকুমেন্টও চলে আসে প্রতিবেদকের কাছে। এছাড়া একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে তার ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। প্রতিবেদনের একটি কপি যুগান্তরের হাতে এসেছে। গত ৮ মার্চ ডিজির চেয়ার থেকে আনুষ্ঠানিক বিদায় নেয়ার পর থেকেই অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রকিবের ঘুষ-বাণিজ্য নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেন। এমনকি অনেকে এখন তার দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণসহ নানা ফিরিস্তি তুলে ধরে দুদকে অভিযোগ দেয়ারও পরিকল্পনা করছেন। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ডিজি হিসেবে রাকিবুর রহমান যোগ দেয়ার পর অধিদফতরে ‘মধুর হাঁড়ি’ হিসেবে পরিচিত গুলশান সার্কেলে পোস্টিং পেতে তদবির-দৌড় শুরু করেন অনেকেই।
তবে একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর তদবিরের কারণে কিছুটা এগিয়ে ছিলেন এক ইন্সপেক্টর। মন্ত্রীর সুপারিশ পেয়ে পোস্টিং প্রত্যাশী ইন্সপেক্টরকে নিজ কার্যালয়ে ডেকে পাঠান ডিজি। তিনি তাকে বলেন, ‘ওসব ‘মন্ত্রী-টন্ত্রী দিয়ে ফোনটোন করিয়ে কোনো লাভ হবে না। কত কী দিতে পারবেন, সরাসরি বলেন।’ তবে ঘুষ ও বদলি বাণিজ্যের এসব অভিযোগ মানতে নারাজ খন্দকার রাকিবুর রহমান। তার সাফ কথা, এগুলো বানোয়াট। তিনি একজন আপদমস্তক সৎ লোক। অবশ্য ঘুষ-বাণিজ্যে কিছু অকাট্য তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরলে তিনি একপর্যায়ে বলেন, ‘ভাই আমি তো ওখান থেকে চলে এসেছি। এখন এগুলো ঘাঁটাঘাঁটি না করলে হয় না।’ যার ঘুষ বাণিজ্য ওপেন সিক্রেট : মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ডিজি হিসেবে যোগদানের পর খন্দকার রাকিবুর রহমান অনেকটা অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। আগপাছ না ভেবে তিনি গণহারে বদলি বাণিজ্য শুরু করেন। এভাবে মাত্র দেড় বছরে তিনি ৭৫০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করেন। ফলে মাত্র ১ হাজার ১০০ জনবলের ছোট এই অধিদফতরের সার্বিক কর্মকাণ্ডে দ্রুত স্থবিরতা নেমে আসে। সূত্র বলছে, রাকিবুর রহমান তার ঘুষ-বাণিজ্যের জন্য অভিনব সব আইডিয়া বের করতেন। এজন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভালো পোস্টিংয়ে থাকা কর্মকর্তাদের তিনি মাঝে মাঝেই ফোন করতেন। ফোনে হুমকি দিয়ে তিনি বলতেন, ‘আপনি তো বেশিদিন থাকতে পারবেন না। আপনার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। আপনাকে আমি আর রাখতে পারছি না। তাড়াতাড়ি আমার সঙ্গে দেখা করেন। কী সেবা করতে পারবেন বলে যান।’ ডিজির ফোন পেয়ে তড়িঘড়ি করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ডিজির অফিসে হাজির হতেন। তখন দরজার বাইরে লাল বাতি জ্বালিয়ে দীর্ঘ মিটিংয়ে বসতেন ডিজি। বিশেষ সমঝোতা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তার কর্মস্থলে যেতে পারতেন।
তা না হলে পরদিনই তার বিরুদ্ধে বদলির আদেশ জারি হতো। এভাবে এক কর্মকর্তাকে মাত্র এক বছরের মাথায় তিন দফা বদলির শিকারও হতে হয়। অধিদফতরের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত এক বছরে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিভিন্ন স্থানে বদলি করা হয় তাদের একটা বড় অংশ ডিজি রাকিবের ঘুষ-বাণিজ্যের শিকার হন। উদাহরণ হিসেবে তারা বলছেন, গুলশান সার্কেলে সদ্য পোস্টিংপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টর ওবায়দুল কবির অন্তত তিন দফায় রাকিবের ঘুষ-বাণিজ্যের শিকার হন। প্রথম দফা সূত্রাপুর সার্কেল থেকে তাকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে ময়মনসিংহ ওয়্যারহাউসে পোস্টিং দেয়া হয়। এরপর দ্বিতীয় দফা শ্রীমঙ্গল ওয়্যারহাউসে পোস্টিং দেয়ার নামে ডিজি ২০ লাখ টাকা ঘুষ নেন। বছর না ঘুরতেই ইন্সপেক্টর ওবায়দুল কবিরকে তৃতীয় দফা গুলশান সার্কেলে পোস্টিং দেন রাকিব। অধিদফতরের কমকর্তারা বলেন, গুলশান সার্কেলে পোস্টিং পেতে অনেক ইন্সপেক্টর ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে এক পায়ে রেডি থাকেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অতিরিক্ত পরিচালক যুগান্তরকে বলেন, ঘুষ-বাণিজ্য হালাল করতে একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর পিএসের পকেটেও গেছে ওবায়দুল কবিরের কাছ থেকে আদায় করা ঘুষের টাকার ভাগ। সূত্র জানায়, আবদুল মান্নান নামের একজন ইন্সপেক্টর ফরিদপুর ওয়্যারহাউসে পোস্টিং পেলে অনেকেই তার কাছে জানতে চান কীভাবে পোস্টিং পেলেন। কত খরচ হল ইত্যাদি। মান্নান তার সহকর্মীদের জানান, মাত্র ৮ লাখ টাকা খরচ করে তিনি এ পোস্টিং পেয়েছেন। এত কম টাকায় তার পোস্টিং পাওয়া নিয়ে চারদিকে নানা আলোচনা শুরু হয়।
একপর্যায়ে জানা যায়, ইন্সপেক্টর মান্নান ও ডিজি রাকিব দুজনেরই গ্রামের বাড়ি জামালপুরে। দেশী লোক হওয়ায় তার কাছ থেকে কিছু কম টাকা (ঘুষ) নেয়া হয়েছে। অধিদফতরের একজন অতিরিক্ত পরিচালক যুগান্তরকে বলেন, ইন্সপেক্টর ওসমান কবির অধিদফতরে অদক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনেক পুরনো। কিন্তু ডিজি রাকিব তাকে ভারপ্রাপ্ত সুপার হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে চট্টগ্রাম ওয়্যারহাউসে প্রাইজপোস্টিং দেন। এ পোস্টিং নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠে। একপর্যায়ে জানা যায়, এ পোস্টিংয়ে অন্তত ২০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। এভাবে পোস্টিং বণিজ্যের জন্য ডিজি রাকিব অধিদফতরের কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে বিশ্বস্ত ক্যাশিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করেন। তাদের অন্যতম হলেন গাজীপুরের সদ্য সাবেক সুপার নাসিরুল্ল্যা ভূঁইয়া। অথচ নাসিরুল্ল্যা ভূঁইয়ার চাকরিটিই অবৈধ। তিনি এলডি (নিন্মমান সহকারী) হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ পান। পরে ‘বিশেষ ব্যবস্থায়’ সারপ্লাস দেখিয়ে তিনি নারকোটিক্সে যোগদান করেন। তিনি নিজেও কোটিপতি। রাজধানীর আরামবাগে তার ৬ তলা বাড়ি। রাকিব ডিজি হিসেবে যোগ দেয়ার পর নাসিরুল্ল্যা ভূঁইয়া বেশ ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন। তার ক্ষমতার প্রকাশ ঘটে অধিদফতরের এক পিকনিক আয়োজন থেকে। কারণ রাকিবের যোগদানের কিছুদিন পর গাজীপুরে নারকোটিক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পিকনিকের আয়োজন করে। সেখানে আয়োজিত অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে নাসিরুল্ল্যাহ ভূঁইয়াকে মঞ্চে ডেকে নেন ডিজি রাকিব। তিনি তাকে উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বিশেষভাবে পরিচয় করিয়ে দেন। ডিজি বলেন,
‘নাসিরুল্ল্যা ভূঁইয়া আমার একান্ত পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ আপনজন। আমি তাকে খুবই স্নেহ করি। এরপর থেকেই নাসিরুল্ল্যা ভূঁইয়া প্রকাশ্যে অনেকটা ক্যাশিয়ারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। অধিদফতরের একজন সহকারী পরিচালক যুগান্তরকে বলেন, নাসিরুল্ল্যা ভূঁইয়ার মাধ্যমে কয়েকজন কর্মকর্তা ভালো পোস্টিং পাওয়ার পর অনেকেই তার অফিস ও বাসায় হুমড়ি খেয়ে পড়েন। তার মাধ্যমে কুমিল্লা ওয়্যারহাউসে পোস্টিং পান ইন্সপেক্টর নজরুল ইসলাম। এ পোস্টিংয়ে নাসিরুল্ল্যাহ ভূঁইয়ার মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা লেনদেন হয়। অবশ্য কিছুদিন যেতে না যেতেই নাসিরুল্ল্যা ভূঁইয়ার সঙ্গে রাকিবের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। কারণ ডিজি জানতে পারেন, ভালো পোস্টিংয়ের বিনিময়ে একাধিক কর্মকর্তার কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে নাসিরুল্ল্যা ভূঁইয়া তাকে ঠকিয়েছেন। জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক সুবোধ কুমার বিশ্বাস ও আজিজুল হক ওরফে গাঞ্জা আজিজের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার ক্ষেত্রে নাসিরুল্ল্যাহ ভূঁইয়া তার সঙ্গে চালাকি করেন। এ কারণে নাসিরুল্ল্যা ভূঁইয়াকে নিজের পোস্টিং পেতেও মোটা অংকের ঘুষ দিতে হয়। তাকে ঢাকা ওয়্যারহাউস থেকে গাজীপুর ওয়্যারহাউসে পোস্টিং দেয়ার বিনিময়ে ১৫ লাখ টাকা দিতে হয়। নাসিরুল্ল্যা ভূঁইয়া ছাড়াও ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করেন রাকিবের কথিত মামা ইন্সপেক্টর মফিজ ওরফে বিশ্বাস মফিজুল ইসলাম। তার মাধ্যমে একাধিক কর্মকর্তা প্রাইজ পোস্টিং বাগিয়ে নিতে সক্ষম হন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন- পাবনা ‘ক’ সার্কেলে কর্মরত ইন্সপেক্টর হবিবুর রহমান। তিনি ১০ লাখ টাকায় সেখানে পোস্টিং পান। এছাড়া শ্রীমঙ্গল ওয়্যারহাউসে পোস্টিং পেতে ঢাকা মেট্রো উপ-অঞ্চলে কর্মরত আরেকজন সিনিয়র ইন্সপেক্টর মফিজের মাধ্যমে ডিজিকে ২০ লাখ টাকা ঘুষ দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদফতরের এক সহাকারী পরিচালক জানান, ঢাকা ওয়্যারহাউসের ভারপ্রাপ্ত সুপার সন্ধ্যা মিস্ত্রির পোস্টিং নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড ঘটে। ডিজির মামা বিশ্বাস মফিজুল ইসলাম সিনিয়র সুপার সন্ধ্যা মিস্ত্রিকে টেলিফোন করে বলেন, ‘আপনি ঢাকা ওয়্যারহাউসের বাইরে বদলি হচ্ছেন। যদি এখানেই থাকতে চান তবে ১৫ লাখ টাকা ডিজিকে দিতে হবে। কিন্তু অতিশয় সজ্জন হিসেবে পরিচিত সন্ধ্যা মিস্ত্রি তাকে জানান, কিছুদিন পরই তিনি অবসরে চলে যাবেন। এত টাকা তিনি কোথায় পাবেন। কিন্তু নানা কথার এক পর্যায়ে বিশ্বাস মফিজ তাকে অভিনব এক শর্ত দেন। তিনি তাকে বলেন, ‘ঢাকা ওয়্যারহাউসে ভারপ্রাপ্ত সুপার পদে যিনি থাকেন তিনি মাসে ৪ লাখ টাকা ঘুষ পান। এ টাকা থেকে আপনি মাসে ১ লাখ টাকা পাবেন। বাকি ৩ লাখ আমি নেব। বিনিময়ে আমি নিজের পকেট থেকে ডিজিকে এখন ১৫ লাখ টাকা দিয়ে দিচ্ছি। এ প্রস্তাবে সন্ধ্যা মিস্ত্রি রাজি হচ্ছে না দেখে মফিজ তাকে অনেকটা মোবাইল ফোন কোম্পানির কাস্টমার কেয়ারের ভাষায় বলেন, ‘আমার প্রস্তাবে রাজি থাকলে এক চাপুন। না থাকলে লাইন কেটে দিন।’ সূত্র জানায়, অবসরের আগে বদলি এড়াতে মফিজের এ প্রস্তাবে রাজি না হয়ে সন্ধ্যা মিস্ত্রির কোনো উপায় ছিল না। কারণ এখন ঢাকার বাইরে পোস্টিং হয়ে গেলে তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে বেকায়দায় পড়বেন। অগত্যা তিনি ‘১ চাপ’ দেন। অর্থাৎ ঘুষ লেনদেনের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। এ প্রসঙ্গে সন্ধ্যা মিস্ত্রি তার এক সহকর্মীর কাছে বলেন, একই ডিপার্টমেন্টে চাকরি করে তিনি এমন বৈষম্যের শিকার হবেন, তা কখনও ভাবতে পারেননি। তার নামে ঘুষের টাকা তুলে পকেটে ভরছে বিশ্বাস মফিজুল ইসলাম। রাকিবের এ করিৎকর্মা মামার মাধ্যমে আরও যারা প্রাইজ পোস্টিং পেতে সক্ষম হন তাদের অন্যতম হলেন পরিদর্শক আহসান হাবিব। ৮ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে তিনি কুমিল্লা ‘ক’ সার্কেল থেকে খুলনা ‘ক’ সার্কেলে পোস্টিং পান। ইন্সপেক্টর মোশারফ হোসেনকে ঝিনাইদহ থেকে যশোর ‘ক’ সার্কেলে পোস্টিং দেয়া হয় ৫ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে। সহকারী পরিচালক আসলাম হোসেন চুয়াডাঙ্গায় পোস্টিং পান ৬ লাখের বিনিময়ে। ইন্সপেক্টর লাকিয়া খানমের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে যশোর ওয়্যারহাউসের পোস্টিং দেয়া হয়। খুলনা ওয়্যারহাউসে পোস্টিং নিতে ইন্সপেক্টর শাহরিয়ার শারমিনকে খরচ করতে হয় ৮ লাখ টাকা। সূত্র জানায়, খুলনা অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক আবুল হোসেনকে অতিরিক্ত পরিচালক হিসেবে পোস্টিং দেয়ায় অন্তত ১৫ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের কথা শোনা যায়। কারণ চাকরিবিধি লংঘন করে আবুল হোসেনকে সেখানে পোস্টিং দেন রাকিব। সূত্রমতে, জ্যেষ্ঠতার সিরিয়াল অনুযায়ী সেখানে পোস্টিং পাওয়ার কথা ছিল ৮ নম্বর সিরিয়ালে থাকা ডিডি পরিতোষ কুমার কুণ্ডুর। আবুল হোসেনের সিরিয়াল ছিল ১৮ নম্বর। কিন্তু জ্যেষ্ঠতা ভেঙে ঘুষের বিনিময়ে আবুল হোসেনকে অতিরিক্ত পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয়। সূত্র জানায়, সম্প্রতি যশোর থেকে গুলশান সার্কেলে পোস্টিং পান সিপাই মনিরুজ্জামান। তিনি এজন্য ঘুষ দেন ২ লাখ টাকা।
এছাড়া সিপাই রুহুল আমিন যশোর থেকে কুষ্টিয়ায় পোস্টিং নেন দেড় লাখ টাকা দিয়ে। সিপাই আলতাফ হোসেন দর্শনা পণ্যাগারে যেতে ব্যাপক তদবির করেন। একপর্যায়ে বিশ্বাস মফিজুল ইসলামের মাধ্যমে কুষ্টিয়া থেকে দর্শনায় পোস্টিং পেতে সক্ষম হন তিনি। এজন্য তার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা আদায় করা হয়। সিপাই হাফিজুর রহমান খুলনা থেকে যশোর ‘ক’ সার্কেলে পোস্টিং নেন ২ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে। অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, সব নজির ভেঙে এই প্রথম সিপাই বদলিতেও ঘুষ বাণিজ্য হল। স্বল্প বেতনের কর্মচারী হিসেবে অধিদফতরে সিপাইরা এমনিতেই অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করেন। অথচ সুবিধাজনক জায়গায় পোস্টিং দেয়ার বিনিময়ে তাদের কাছ থেকেও মোটা অংকের ঘুষ আদায় করা হয়েছে। এদিকে এভাবে গণহারে বদলি ও ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খন্দকার রাকিবুর রহমান যুগান্তরকে আরও বলেন, তিনি যোগদানের পর সারা দেশে অধিদফতরের কার্যক্রম বাড়ানো হয়। যখন যোগদান করেন তখন মাত্র ২৬টি জেলায় অধিদফতরের অফিস ছিল। তিনি ৬৪টি জেলায় অফিস স্থাপন করেন। এ কারণে অনেক কর্মকর্তাকে বদলি করতে হয়েছে। তিনি দাবি করেন, অধিদফতরের কিছু কর্মকর্তা তার শক্ত প্রশাসনিক অবস্থানের কারণে সুবিধা করতে না পেরে এখন এসব কুৎসা ছড়াচ্ছে, যা মোটেও সত্য নয়। তারপরও কাজ করতে গিয়ে কিছু ভুলত্রুটি হতেই পারে। সেগুলো নিয়ে লেখালেখি না করলে খুশি হব।

No comments

Powered by Blogger.