হাজারীবাগে ট্যানারি অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ বহাল

রাজধানীর হাজারীবাগে থাকা চলমান সব ট্যানারি কারখানা অবিলম্বে বন্ধ ও গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে দেওয়া আদেশ বহাল রয়েছে। হাইকোর্টের দেওয়া এ আদেশ সংশোধন চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সেলিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন। ৬ মার্চ হাইকোর্টের একই বেঞ্চ অবিলম্বে হাজারীবাগে থাকা চলমান সব ট্যানারি কারখানা বন্ধ করতে ও গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এ আদেশ সংশোধন চেয়ে আগামী ঈদুল আজহা পর্যন্ত সময় চেয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ফিনিশ লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন গত সপ্তাহে হাইকোর্টে আবেদন করে। দুই দিন উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন। ৬ মার্চের আদেশের পর ট্যানারি মালিকদের পক্ষে ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগেও আবেদন করা হয়। পরে তা খারিজ হয়। আদালতে ট্যানারি মালিকদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী শেখ ফজলে নূর তাপস ও মো. মেহেদী হাসান চৌধুরী। বেলার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফিদা এম কামাল। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সাঈদ আহমেদ কবীর। শিল্প সচিবের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রইস উদ্দিন আহমদ। পরে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আজকের আদেশের ফলে আবেদন খারিজ হওয়ায় হাজারীবাগে সব ট্যানারি কারখানা অবিলম্বে বন্ধ ও গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে দেওয়া আদেশ বহাল থাকল। ১৯৯৪ সালে বেলার করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০০১ সালে ‘লাল’ শ্রেণিভুক্ত সব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে এক বছরের মধ্যে পরিবেশ দূষণরোধে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন। এ আদেশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় বেলার করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালের ২৩ জুন হাইকোর্ট এক আদেশে ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাজারীবাগ ট্যানারি শিল্প অন্যত্র স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের জন্য সরকার পক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
বেলার তথ্য অনুসারে, আদালত সর্বশেষ ২০১০ সালের ৩০ অক্টোবর ৬ মাসের জন্য সময় বর্ধিত করেন। পরবর্তীতে শিল্প মন্ত্রণালয় আরও দুই বার ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের নির্মাণ সময় বাড়ানোর আবেদন করলেও আদালত সময় বাড়ানোর কোনো নির্দেশ দেননি। এরপরও হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সরানো না হওয়ায় গত ১৬ জুন হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চ সাভারে না সরানো পর্যন্ত ১৫৪টি ট্যানারি শিল্পকারখানার মালিকদের প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই অর্থ ঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে কি না সময়-সময়ে তা তদারকি করে শিল্প সচিবকে নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়। এর বিরুদ্ধে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন আপিল বিভাগে আবেদন করলে গত ১৮ জুলাই আপিল বিভাগ হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি না সরানো পর্যন্ত মালিকদের রোজ ১০ হাজার টাকা করে জমা দিতে বলেন। এরপর ক্ষতিপূরণ আদায়ের ওই নির্দেশনা সঠিকভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে না জানিয়ে করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট শিল্প সচিব তলব করেন। শিল্পসচিব হাইকোর্টে প্রতিবেদন দেন। আইনজীবীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ওখানে ১৫৪টি কারাখানার গত আগস্ট থেকে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বকে​য়া পড়েছে ৩০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। শুনানি নিয়ে ২ মার্চ হাইকোর্টের অপর একটি বেঞ্চ বকেয়া ৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দুই সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধ করতে ট্যানারি মালিকদের নির্দেশ দেন। এর আগে হাজারীবাগ থেকে ১৫৪টি ট্যানারিকে সাভারের পরিকল্পিত চামড়াশিল্প নগরে সরিয়ে নিতে ২০০৩ সালে একটি প্রকল্প নেয় সরকার। তবে নানা কারণে ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও ট্যানারি সাভারে নেওয়া শেষ করা যায়নি। গত ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ট্যানারিগুলোকে সাভারে যাওয়ার সময় বেঁধে দিয়েছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।এরপর ট্যানারি সরাতে আরও তিন মাস সময় বাড়ানো হয় বলে সংবাদমাধ্যমের খবরে আসে।

No comments

Powered by Blogger.