সাক্কু না সীমা?

বুধবার রাত পোহালেই বৃহস্পতিবার সকালে ভোট। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের দুই লাখ সাত হাজার ভোটার তাঁদের পছন্দের প্রতিনিধি বেছে নেবেন। মেয়র পদে চারজন প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও বিএনপির মনিরুল হক সাক্কুর মধ্যে। নারায়ণগঞ্জের পর কুমিল্লায় ফের নৌকা ও ধানের শীষের লড়াই। নারায়ণগঞ্জর মানুষ নৌকাকে বেছে নিয়েছিলেন। সেখানে আওয়ামী লীগারদের ভাষায় তাঁদের ম্যারাডোনা ছিলেন। এখানে কোনো দলে ম্যারাডোনা বা মেসি নেই। লড়াই হবে সমানে সমান। সে ক্ষেত্রে কুমিল্লাবাসী কাকে বেছে নেবেন? সেখানে যিনি পাঁচ বছর ধরে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন, সেই মনিরুল হক সাক্কু, না কুমিল্লা সিটির প্রথম নারী প্রার্থী সীমা? রায়ের জন্য আমাদের কাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। নির্বাচনের আগে সবখানেই মোটামুটি উদ্বেগ-উত্তেজনা থাকে। প্রথম উদ্বেগ হলো নির্বাচনটি সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হবে কি না? ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন কি না? কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের এটি প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন। অনেকের মতে, এটি নির্বাচন কমিশনের জন্য যেমন প্রথম পরীক্ষা, তেমনি আগামী জাতীয় নির্বাচন কেমন হবে, তারও পূর্বাভাস। অন্য অনেক নির্বাচনের মতো এই নির্বাচন নিয়েও কম নাটকীয়তা হয়নি। প্রথম দিকে বিএনপি নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাকে দলীয় লোক বলে মানতেই চায়নি। কিন্তু কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের প্রাক্কালে তাদের কথাবার্তায় আস্থার মনোভাবই প্রকাশিত হচ্ছে। সাধারণত, নির্বাচনের আগে বিরোধী দল নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধ নানা অভিযোগ উত্থাপন করে থাকে আর সরকারি দল সেটি নাকচ করে দেয়। কিন্তু কুমিল্লায় তার ব্যতিক্রমটিই লক্ষ করলাম। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধিদল সিইসি কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেছে এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখার কথা জানিয়েছে। অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলও তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতার নামে আওয়ামী লীগের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করেছে বলে দাবি করেছে। তবে এইচ টি ইমাম তা সত্ত্বেও কমিশনকে সহায়তার করার কথা বলেছেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে আওয়ামী লীগের ওপর নির্বাচন কমিশন নিষ্ঠুর আচরণ করবে—এটি কি বিশ্বাসযোগ্য? তাঁর এই মন্তব্য কিসের ইঙ্গিত, সে নিয়েও রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা চলছে। অনেকে এটিকে প্রচ্ছন্ন হুমকি বলেও মনে করেন।
তবে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার কথা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে তাঁরা নির্বাচন কমিশনের কাজে সন্তুষ্ট নন। কমিশনের কাজ তার ওপর অর্পিত দায়িত্বটি পালন করা। কাউকে খুশি বা অখুশি করা নয়। যাক, দুই দলের আগাম মন্তব্য নিয়ে কুমিল্লার ভোটারদের চিন্তাভাবনার সময় আছে বলে মনে হয় না। তাঁরা ইতিমধ্যে মনস্থির করে ফেলেছেন, কে কোথায় ভোট দেবেন। এখন প্রশ্ন হলো, সেই কাজটি ভোটাররা নির্বিঘ্নে করতে পারবেন কি না। নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গ তাঁদের এই নিশ্চয়তা দিতে পারবেন কি না যে তাঁরা প্রত্যেকে পছন্দসই প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে বাসায় ফিরে আসতে পারবেন। নির্বাচনের আগে-পরে কিংবা নির্বাচনের সময় তাঁদের কেউ ভয়ভীতি দেখাবে না। আজ বুধবার প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—দুই দলেই উৎকণ্ঠা আছে। আওয়ামী লীগের উৎকণ্ঠা দলের অনৈক্য ও স্থানীয় প্রভাবশালী এক নেতার অবস্থান নড়চড় হয় কি না, তা নিয়ে। আর বিএনপির উৎকণ্ঠা জাল ভোট, ভোটের দিন অদৃশ্যে প্রশাসনের ভূমিকা কী হয়, তা নিয়ে। দুই পক্ষের শঙ্কা ও উদ্বেগ দূর করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনেরই। আর রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর দায়িত্ব হলো ভোটের পরিবেশটি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ রাখা। কুমিল্লার ভোটের লড়াইয়ে যেই প্রার্থীই জয়ী হোন না কেন, নির্বাচনটি যেন পরাজিত না হয়।

No comments

Powered by Blogger.