দল গুছিয়ে দ্রুত রাজপথে নামার পরামর্শ

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জনসম্পৃক্ত ইস্যু নিয়ে রাজপথে নামার পরামর্শ দিয়েছেন কয়েকজন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী। অফিস সময় এগিয়ে আনা, নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ আরও বাড়ানোসহ দল গুছিয়ে দ্রুত জনগণের মাঝে যাওয়ার আহ্বানও জানান তারা। রোববার রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তারা এমন পরামর্শ দেন। এ সময় খালেদা জিয়া তাদের জানান, জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে শিগগিরই রাজপথে নামার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য জানায়। রোববার রাতে পাঁচ বুদ্ধিজীবী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, প্রোভিসি আফম ইউসুফ হায়দার, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাবির অধ্যাপক ড. মাহবুবউল্লাহ ও সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ। ঘণ্টাব্যাপী আলাপকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, কয়েক মাস আগে জামায়াত নিয়ে এমাজউদ্দীন আহমদের বক্তব্য, খালেদা জিয়ার কাছে জাফরুল্লাহর খোলা চিঠির বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় বিএনপির হাইকমান্ডের ওপর কিছুটা মনোক্ষুন্ন হন তারা। অনেকটা অভিমান করে প্রায় ছয় মাস ধরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেন। অভিমান ভাঙতে সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তাদের ডেকে কথা বলার সিদ্ধান্ত নেন খালেদা জিয়া। তাদের মান-অভিমান ভাঙাতে রোববার রাতে গুলশানে চা-চক্রের আমন্ত্রণ জানান তিনি। খালেদা জিয়ার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সবাই গুলশানে যান। বিএনপি চেয়ারপারসন তাদের অভিমানের বিষয়টি কৌশলে উত্থাপন করেন। কেমন আছেন বলে কুশল বিনিময়ের পরই জানতে চান, ‘আপনারা আগের মতো কেন আসেন না, খোঁজখবর নেন না।’ এ সময় তারা অনেকটা অভিমানের সুরে বলেন, ‘প্রয়োজন মনে করলে ডাকলে অবশ্যই আসব।’ বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ ও যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিযোগ, খালেদা জিয়ার মামলাসহ সাম্প্রতিক নানা বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের বিষয়ে এক বুদ্ধিজীবী বলেন, তথ্য-প্রমাণসহ তার (প্রধানমন্ত্রীর) অভিযোগের জবাব দেয়া উচিত। প্রয়োজনে সংবাদ সম্মেলন করা যায় কিনা সে ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসনকে ভেবে দেখার পরামর্শ দেন। এ সময় খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগের ব্যাপারে কিছু তথ্যপ্রমাণ তাদের দেখান। ’৯২ সালে ভারত সফরকালে পানি নিয়ে ওই দেশের সরকারের সঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে এর প্রমাণস্বরূপ সে সময় প্রকাশিত দুই দেশের যৌথ ইশতেহারের কপি তাদের কাছে দেন।
সূত্র জানায়, বিএনপির ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দেন তারা। সংগঠন শক্তিশালী করতে দ্রুত পুনর্গঠন কাজ শেষ করার তাগিদ দেন। কথিত সংস্কারপন্থীদের দ্রুত ফিরিয়ে এনে দলকে ঐক্যবদ্ধ করা প্রয়োজন বলেও মত দেন বিএনপি মনোভাবাপন্ন এ বুদ্ধিজীবীরা। বিএনপি চেয়ারপারসনের অফিস সময় আরও এগিয়ে আনা, একজন মহিলা বিশেষ সহকারী নিয়োগ এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে আরও যোগাযোগ বাড়ানো যায় কিনা সে ব্যাপারে ভেবে দেখার পরামর্শ দেন একজন বুদ্ধিজীবী। জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা নিয়ে উদ্বিগ্ন কিনা কৌশলে এমনটাও জানতে চান তারা। জবাবে খালেদা জিয়া তাদের জানিয়ে দেন, মামলা নিয়ে তিনি মোটেও চিন্তিত নন। এ সময় খালেদা জিয়া বলেন, দল গোছানোর কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। যারা নিষ্ক্রিয়, তাদের সক্রিয় করার উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। সবকিছু গুছিয়ে দ্রুতই জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান খালেদা জিয়া। জানতে চাইলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতেই মূলত সেখানে যাওয়া। আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, চেয়ারপারসনের মামলাসহ সার্বিক বিষয় চলে আসে। আমরা দ্রুত তাকে জনগণের কাছে যাওয়ার কথা বলেছি। দ্রুতই বের হবেন বলে তিনি আমাদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ আমাদের দেখান। ভারত সফরকালে যৌথ ইশতেহার, শেখ হাসিনার আগে জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, তথ্য-প্রমাণের পরও প্রধানমন্ত্রী কি করে এসব অভিযোগ করেন তা জানতে চান। সবকিছু মিলে মানসিকভাবে খালেদা জিয়াকে বেশ ফুরফুরেই মনে হয়েছে বলে জানান জাফরুল্লাহ।

No comments

Powered by Blogger.