তুরস্কের বিরুদ্ধে একাট্টা ইউরোপ

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগানকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। ‘সুলতান’ এরদোগানের মোকাবেলায় এখন ঐক্যবদ্ধভাবে আক্রমণের পথ ধরেছেন তারা। ইউরোপীয় দেশগুলোতে তুরস্ক সরকারের সমাবেশ করার চেষ্টা নিয়ে ক্রমবর্ধমান বিরোধ এখন চরমে পৌঁছেছে। এরদোগানের সমালোচনা করে যাচ্ছে নেদারল্যান্ডস ও জার্মানি। এদের সঙ্গে নতুন করে যোগ দিয়েছেন ফ্রান্স, ডেনমার্ক, সুইডেন, অস্ট্রিয়াসহ কয়েকটি দেশের নেতা। খবর বিবিসি ও এএফপির। তুরস্কের আগামী মাসের গণভোটের পক্ষে সমাবেশ করতে না দেয়ায় তুর্কি প্রেসিডেন্ট জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডসকে নাৎসিদের অবশিষ্টাংশ এবং ফ্যাসিস্ট বলে মন্তব্য করেছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে বলেছেন, ‘এমন মন্তব্য মেনে নেয়া যায় না।’ ডাচদের নাৎসিবাদী বলায় রোববার এরদোগানের কাছ থেকে ক্ষমাও দাবি করেছেন তিনি।
ডাচ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এ দেশ নাৎসিদের বোমা হামলার শিকার হয়েছে। ফলে তুরস্কের ওই মন্তব্য কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।’ তুরস্ক একই পথে চলতে থাকলে নেদারল্যান্ডস পাল্টা জবাব দেয়ার কথা ভাববে বলে জানান তিনি। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু প্রবাসী তুর্কিদের উদ্দেশে বক্তৃতা করতে রটারডামে যেতে চেয়েছিলেন। ডাচ কর্তৃপক্ষ তাকে সে দেশে প্রবেশ করতে দেয়নি। এছাড়া দেশটির পরিবারমন্ত্রী ফাতমা বাতুল সায়ান কায়া জনসভায় বক্তৃতার জন্য সড়কপথে রটারডামে পৌঁছলে ডাচ কর্তৃপক্ষ তাকে তুর্কি কনস্যুলেটে প্রবেশে বাধা দেয়। পুলিশি প্রহরায় তাকে জার্মানির সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় আঙ্কারায় ডাচ দূতাবাস ও ইস্তাম্বুলের ডাচ কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়া হয়। শনিবার এরদোগান হুশিয়ার করে বলেন, নেদারল্যান্ডসকে এ আচরণের চরম মূল্য দিতে হবে। তখন ডাচ প্রধানমন্ত্রী সুর নরম করে বলেছিলেন, আমরা কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত চাই না। আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে। একই সঙ্গে তিনি তুরস্কের কাছে ক্ষমা চাইবেন না বলেও জানিয়ে দেন। রোববার জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘তুরস্কের কাণ্ডজ্ঞান ফিরে আসা উচিত।’ জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও জার্মানিতে তুরস্কের রাজনৈতিক প্রচারাভিযানের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, ‘জার্মানিতে তুরস্কের প্রচার চালানোর কোনো প্রয়োজন নেই।’ এদিকে জার্মানি-নেদারল্যান্ডসের সূত্র ধরে এরদোগানের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক পিছিয়েছে ডেনমার্কও। ড্যানিশ প্রধানমন্ত্রী লার্স লোকে রাসমুসেন বলেছেন, তুরস্কে গণতান্ত্রিক নীতি ব্যাপক চাপের মুখে আছে বলে তিনি উদ্বিগ্ন।
বৈঠক পিছিয়ে দেয়ার বিষয়টি নিয়ে রাসমুসেন বলেন, তুরস্ক সম্প্রতি হল্যান্ডের সমালোচনা করে যেসব কথা বলেছে, এর পর বৈঠকের বিষয়টিকে আর আলাদা করে দেখা যায় না। অন্যদিকে ফ্রান্সের এক মন্ত্রীও বলেছেন, তুরস্ক তাদের সঙ্গে আরও সহযোগিতার হাত বাড়ানোর ভিত্তিমূলই বিনষ্ট করেছে। এছাড়া গণভোটের প্রচারণাকে কেন্দ্র করে তুরস্ক এবং সুইডেনের মধ্যেও তিক্ততা তৈরি হয়েছে। তুরস্কের কৃষিমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন এরদোগানপন্থী একটি নির্ধারিত মিছিল-সমাবেশ বাতিল করেছে স্টকহোম। সুইডেনের কয়েকজন নেতা তুরস্কের প্রচারণাকে উস্কানিমূলক আখ্যা দিয়েছেন। পার্লামেন্টারি পদ্ধতির পরিবর্তে তুরস্কে প্রেসিডেন্ট শাসিত সরকার প্রবর্তনের লক্ষ্যে আগামী ১৬ এপ্রিল গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটে হ্যাঁ ভোট জয়ী হলে তুর্কি প্রেসিডেন্ট মন্ত্রী-বিচারপতি নিয়োগ, বাজেট প্রণয়ন ও নির্বাহী আদেশ জারির একচ্ছত্র এখতিয়ার ভোগ করবেন। তুরস্কের প্রায় ৫৫ লাখ নাগরিক দেশের বাইরে রয়েছেন। এরদোগানের সমর্থকরা গণভোটে প্রবাসীদের রায় নিজেদের পক্ষে টানতে ব্যাপক জনসংযোগ শুরু করেছে। এ কারণেই জার্মানিসহ অস্ট্রিয়া এবং নেদারল্যান্ডস যেখানে তুর্কিদের সংখ্যা বেশি সেসব দেশে একাধিক প্রচার সমাবেশের পরিকল্পনা করেছে তুরস্ক। কিন্তু তুরস্ককে ‘না’ বলে দিয়েছে এ তিনটি দেশই। নিরাপত্তা উদ্বেগজনিত কারণ দেখিয়ে তারা তুরস্কের প্রচার সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে।

No comments

Powered by Blogger.