টাইগারদের সামনে এবার প্রোটিয়া চ্যালেঞ্জ by ইশতিয়াক পারভেজ

একটু একটু করে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। এরই মধ্যে পাকিস্তান ও ভারতকে মাটিতে নামিয়েছে টাইগাররা। প্রতিপক্ষ এবার প্রতিবেশী কোন দেশ নয়। ১৮ হাজার ১৫০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ভারত মহাসাগর ছেড়ে বঙ্গোপসাগরের পাড়ে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকা দল। প্রতিকূল পরিবেশে দাঁড়িয়েও বাংলাদেশকে ছুড়ে দিচ্ছে কঠিন চ্যালেঞ্জ। টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে ও টেস্ট সিরিজ সবই জিতে নিতে বদ্ধপরিকর  প্রোটিয়াবাহিনী। তবে এবার তাদের কণ্ঠেও যেন নেই সেই আগের হুংকার। জিতে যাবো বলেও ভাবতে হচ্ছে বারংবার। কারণ সামনে যে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। ২ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়েই আজ শুরু হচ্ছে টাইগারদের দক্ষিণ আফ্রিকা মিশন। তবে ভারত-পাকিস্তানের মতো সহজ হবে না। টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ে প্রোটিয়ারা ছয়ে আর বাংলাদেশ নয়ে। জয়-পরাজয়ের পার্থক্যও দুইদেশের সীমানার পার্থেক্যের মতো বিশাল। এই পর্যন্ত  ৭৬ টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ অফ্রিকার জয় ৪৪টিতে। অন্যদিকে ৪২ ম্যাচে টাইগারদের জয়ের সংখ্যা মাত্র ১২টি। দুদল এই পর্যন্তু দুই বারই মুখোমুখি হয়েছে। যথারীতি হেরেছে টাইগাররাই। অধিনায়ক মাশরাফির সামনে চ্যালেঞ্জ জয়ের ধারা ধরে রাখা। তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার শক্তি সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। তবে আমি মনে করি, যেহেতু আমরা টিম হিসেবে নামবো, তাই আমাদের শক্তি সম্পর্কে আমাদের চিন্তা করাই ভালো। ওদের সঙ্গে খেলা সব সময় চ্যালেঞ্জিং কারণ ওরা নিজেদের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। কিন্তু আমরা আমাদের খেলা নিয়ে চিন্তা করছি। যেভাবে শেষ ক’টা সিরিজ খেলে এসেছি সেই আত্মবিশ্বাস ধরে রেখে ভাল খেলার চেষ্টা করবো।’
এই সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার বাংলাদেশের মাটিতে পা হলেও চোখ ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। টাইগারদের বিপক্ষেই তারা বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু করতে যাচ্ছে। তাই সেটি সেরা প্রস্তুতিই হবে। জয়ের পাশাপাশি এই কন্ডিশনে বোলার ও ব্যাটসম্যানদের মোকাবিলার মধ্যেই থাকতে তাদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের প্রস্তুতি। অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি বলেন, ‘আমাদের জন্য নতুন মওসুমের শুরু। অনেক খেলোয়াড়ই তেমন ক্রিকেট খেলেনি। কিছু খেলোয়াড় অবশ্য আইপিএল খেলেছে। কিন্তু অনেক বেশি ক্রিকেট না খেলার কারণে তারা বরং এখন অনেক ফুরফুরে অবস্থায় শুরু করতে পারবে। এ কারণে টি-২০ দিয়ে শুরু হওয়াটা চমৎকার ব্যাপার। এর মাধ্যমে আমরা টি-২০ বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি শুরু করছি। ওয়ানডে অবশ্যই জরুরি। এবি (ডি ভিলিয়ার্স) এবং হাশিম (আমলা) থাকতেও পারেন আবার নাও পারেন। এ কারণে এখন থেকেই তাদের বিকল্প হিসেবে কারা তৈরি হন সেটাও আমরা দেখে নিতে পারবো।’
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টির ইতিহাস বদলাতে চান টাইগার দলপতি। ২০০৭ কেপটাউন  ও ২০০৮ এ জোহানেসবার্গে বাংলাদেশ হেরেছে। এবার দেশের মাটিতে সেই ইতিহাস পরিবর্তন করতে চায় মাশরাফি। সদ্য মিরপুরে পাকিস্তানকে টি-টোয়েন্টিতে ৬ উইকেটে হারিয়েছে মাশরাফি বাহিনী। তাই ভরসা ওই দলের ওপরই। ওপেনিং তামিম ইকবালের সঙ্গে সৌম্য সরকার এরপর আরেক তরুণ লিটন কুমার দাস। শুরুতেই অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের শক্তি পারবেতো রুখে দিতে প্রোটিয়াদের নিখুঁত বোলিং আক্রমণ? এরপরই দলের হাল ধরার জন্য আছেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহীম ও সাকিব আল হাসান। দলে একমাত্র সাকিব যিনি দুনিয়া জুড়ে খেলে বেড়ান টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। তাই আস্থা ও ভরসার জায়গাটা এখানেই। বল ও ব্যাট হাতে তিনি হতে পারেন প্রতিপক্ষের কাছে আতঙ্ক। এরপরই দুই ফিনিশার সাব্বির রহমান ও নাসির হোসেন। তাদের পিছনে ঢাল হয়ে নামবেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। এরপরই কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ। তবে প্রোটিয়াদের স্পিনে ভড়কে দিতে হয়তো দলে থাকবে না তৃতীয় পেসার হিসেবে রুবেল হোসেন। তার পরিবর্তে দেখা যেতে পারে একজন স্পিনার। আর স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসেবে থাকছেন আরাফাত সানি। তবে রুবেল, জুবায়ের হোসেন লিখন নাকি সোহাগ গাজী? তবে জুবায়ের অথবা রুবেলকেই দেখা যেতে পারে। আবার চমক দেখাতে অফ স্পিনার সোহাগ গাজীও মাঠে নামতে পারেন তুরুপের তাস হয়ে। মূলত দক্ষিণ আফ্রিকা দলের ভয় বাংলাদেশের অচেনা তরুণরাই। যাদের এখনও তারা দেখেননি। একই ভয় বাংলাদেশ অধিনায়কেরও। বিশ্বকাপের পর আর কোন সিরিজ না খেলা দলটি এখন ফুরফরে। কুইন্টন ডি কক, রাইলি রুসোদের সঙ্গে এবি ডি ভিলিয়ার্স ব্যাট হাতে শুরুতেই তাণ্ডব চালাতে প্রস্তুত। আর অভিজ্ঞ অধিনায়ক ডু প্লেসি, ডুমিনি আর ডেভিড মিলারতো আছেনই। এরপর  অ্যাবট, ফাঙ্গিসো, রাদাবা, ডেভিড ভিসারা সুযোগ পেলেই টাইগার ব্যাটসম্যানদের রানের চাকা সামলাতে প্রস্তুত। তবে বহুদিন পর মিরপুরের উইকেটও দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য হবে বড় চ্যালেঞ্জ।

No comments

Powered by Blogger.