নায়ক রাজ রাজ্জাকের মৃত্যু (!) অনলাইন বিড়ম্বনা by জুয়েল রাজ

আপডেটঃ ০৩ জুলাই, ২০১৫ গত তিনদিন আগে সকাল থেকে ফেসবুক জুড়ে নায়ক রাজ রাজ্জাকের মৃত্যু সংবাদ। এর মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন অনলাইনের লিঙ্কও শেয়ার দিয়েছেন নায়ক রাজ রাজ্জকের মৃত্যু সংবাদের। অনেকে ইন্নালিল্লহে ওয়া ইন্নাইলাইহে রাজিউন লিখে নানা রকম অনুভূতি প্রকাশ করে স্ট্যাটাস লিখেছেন। এর পর অবিশ্বাসের আর কোন অবকাশ থাকেনি নায়ক রাজ রাজ্জাকের মৃত্যু নিয়ে। একজন জীবিত মানুষ মৃত হয়ে গেলেন সবার কাছে। বাধ্য হয়ে বিকালে রাজ্জাকের পরিবার সংবাদ সম্মেলন করে সবাইকে বলেছেন তিনি জীবিত আছেন শঙ্কামুক্ত আছেন।
প্রযুক্তির যুগে মানুষ বহুলাংশে ইন্টারনেটের উপর নীর্ভরশীল। অনেকেই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এবং ঘুম থেকে জেগে দুচোখ খুলেই হাত বাড়ান নিত্যসঙ্গী স্মার্ট ফোনের দিকে। তারপর শুরু হয় দিন। প্রয়োজনীয় প্রায় সব তথ্য উপাত্ত এখন গুগল থেকে পেয়ে যাচ্ছেন। ইউটিউব তো লজিং মাষ্টারের মতো অবস্থা। হেন বিষয় নেই সেখানে আপনি পাবেন না।
প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই সময়ে  অনলাইন পোর্টালের জয়জয়কার চারদিকে আর এর পরিমান বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী। ইতিমধ্যে ফেইস বুকে নানা রকম উস্কানীর কারণে সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে।
লাইক নিয়ে বহু অনাকাংকিত ঘটনার আমাদের চারপাশে ঘটে চলছে।পাঠক মাত্রই আশা করি এই ঘটনার সাথে পরিচিত। অনলাইন যেমন অনেক বন্ধুর জন্ম দিয়েছে তেমনি বহু বন্ধুকে ও শত্রু বানিয়ে দিয়েছে।
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অবস্থা হচ্ছে নিউজ পোর্টালগুলোর ব্যাঙের ছাতার মতো নিউজ পোর্টালকে ব্যাক্তিগত ব্লগ বানিয়ে ফেলেছেন। পোর্টালে অশ্লীল বিভিন্ন মনগড়া সংবাদ পরিবেশন করে লেখা থাকে ভিডিওসহ। ইউটিউব থেকে নানারকম প্রাপ্তবয়ষ্ক ছবির অংশ বিশেষ জুড়ে দেয়া হচ্ছে। আকর্ষনীয় শিরোনাম দেখে  সাধারণ পাঠকও কৌতুহল মেটাতে ক্লিক করছেন সে সব সংবাদে। অনেকেই হচ্ছেন বিব্রত।
অনলাইন সংবাদ পত্রে মনগড়া সংবাদ পরিবেশন করে  রাজনীতিবিদ, নায়ক নায়িকা সহ সমাজের নানা পেশায় জড়িতদের চরিত্র হননের এক ভয়ংকর অস্ত্র এইসব নিউজ পোর্টাল। এলক্সা র‍্যাংকিয়ের প্রতিযোগীতায় বেশী পরিমানে ক্লিক এর আশায় এই সমস্ত ভূয়া সংবাদ পরিবেশন করছে।
অনলাইন পোর্টালগূলো দেখলে মনে হবে দেশের সব ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,ধর্মীয় স্কলার সহ পেশাজীবিরা পেশা বাদ দিয়ে সাংবাদিকতায় যোগ দিয়ে দিয়েছেন। কিভাবে মোটা হবেন, চিকনা হবেন, ধর্মীয় রীতি মেনে স্ত্রী সহবাস করবেন  দাঁত , চুল, সুন্দর ত্বক, প্রেমিকা কে খুশি করা, পরকীয়ার কারণ, পুরুষ কে বশ করা এই সমস্থ অদ্ভুত শিরোনামের সংবাদ।কিছু কিছু অনলাইনের সিস্টেম আবার এমন অটো শেয়ার হয়ে যায়। অনেকে না বুঝে ক্লিক করে সেই বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হন। অনলাইন আমাদের সমাজের জন্য এখনো নতুন একটা ধারণা। অনেকই এর নিয়ম নীতি এখনো রপ্ত করতে পারেন নি। তাই শুরু হয় বিব্রতকর  অবস্থা কাটাতে দৌড়াদৌড়ি করেন অনেকেই। নিজের অনেক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও আছে এই ব্যাপারে। সিনিয়র অনেক এসেছেন নিজের ফেইসবুক ঠিকঠাক করে নিতে।
সম্প্রতি সময়ে লন্ডনে ভূয়া কিছু বাংলা নিউজ পোর্টাল একই ধরনের কাজ করছে। তবে তাঁদের উদ্দেশ্য সম্পুর্ন রাজনৈতিক। ভুল ঠিকানায় ভুল নাম ধাম দিয়ে চালানো হচ্ছে এসব পোর্টাল। অভিযোগ আছে বিলেতের বেশ কয়েকজন তরুণ সাংবাদিক  নেপথ্যে থেকে এসব রাজনৈতিক নিউজ পোর্টালগুলো পরিচালনা করেন। রাজনৈতিক নেতাদের  আজ্ঞাবহ হয়ে নিজের চেহারা আড়াল রেখে এই কাজটা করে থাকেন। কেউ কেউ বিভিন্ন আন্ডার গ্রাউন্ড টিভিও নাকি চালাচ্ছেন লন্ডনে। এবং সেটা সব রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রেই সমান প্রযোজ্য। অনেক নেতাই নাকি টাকা দিয়ে এডমিন বানিয়ে নিজের পেইজ ও ফেইসবুক একাউন্ট চালিয়ে যাচ্ছেন। অনলাইন অনেকের আবার রুটিরুজির ও ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
লন্ডনেও সেই প্রবণতা এখন  চোখে পড়ার মতো। লন্ডনের কিছু নিউজ পোর্টাল  স্থানীয় নেতাদের নামে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে ব্যাক্তিগত ভাবে হেয় করার চেষ্ঠা করছেন। খোঁজ খবর নিয়ে দেখা যায় তাঁদের অনলাইনে দেয়া নাম ঠিকানা সব ভুয়া। সচেতন মানুষ যারা তাঁরা হয়তো বিষয়টি এড়িয়ে যাবেন। কিন্তু মোবাইল ফোন  বিপ্লবের কারণে ফেইসবুক, হোয়াটস আপ, সহ নানারকম যোগাযোগ মাধ্যম  পৌঁছে গেছে এখন রান্নাঘর থেকে ফসলের মাঠে। যাদের কাছে এই নিউজ পোর্টালোটি  সংবাদপত্র। তাঁর কাছে এর প্রতিটা অক্ষর সত্য।
ব্যাক্তিগত  কোন্দল এর কারনে অনেককে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন থেকে   থেকে বহিষ্কার বলে সংবাদ অনলাইনে প্রচার  করে হেয় করার চেষ্ঠা করা হয়েছে।বিগত কিছুদিন আগে লন্ডনের এমন একটি ঘটনার জন্য বাংলাদেশ প্রেস নামে বাংলাদেশের একটি অনলাইন পোর্টালোকে আইনি নোটিশ দেয়ার পরে ক্ষমা চাওয়ার ঘটনা ও ঘটেছে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত ইফতার মাহফিলে  সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতা চাই। গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না, তবে গণমাধ্যমকে নীতিমালায় চলতে হবে।
কিন্তু ভূয়া অনলাইন পোর্টালের ক্ষেত্রে নীতিমালা নির্ধারন করবে কে?
সাংবাদিকতার নামে এই সমস্ত মিথ্যাচার সাংবাদিকদের নামে  মিথ্যা কে সত্য বানানোর নামে, মানুষের মনে যে ভুল ধারণা এর থেকে সাংবাদিকদেরই বের হয়ে আসতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.