ঋণদাতারা যা করছে তা হচ্ছে সন্ত্রাসবাদ -আজকের গণভোটের প্রাক্কালে গ্রিসের অর্থমন্ত্রী

মধ্য এথেন্সের একটি সংবাদপত্রের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে
শিরোনাম দেখছেন কয়েকজন রাজধানীবাসী। প্রায় সব
পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘না’ ও ‘হ্যাঁ’ লেখা শিরোনাম
অর্থনৈতিক সংকট থেকে রেহাই পেতে ঋণদাতাদের কঠোর শর্তসংবলিত পুনরুদ্ধার প্রস্তাব মেনে নেওয়া হবে কি না—এ নিয়ে আজ রোববার গ্রিসে গণভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ব্যাংক বন্ধসহ সরকারি কড়াকড়িতে খাদ্যের পাশাপাশি ওষুধের ঘাটতি এবং পর্যটকের সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এই ভোট হচ্ছে। ব্যাংকগুলো চলার মতো অর্থ থাকবে কি না, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে।
অর্থমন্ত্রী ইয়ানিস ভারুফাকিস গতকাল ঋণদাতাদের সমালোচনা করে বলেন, গ্রিসের সঙ্গে যা হচ্ছে তা সন্ত্রাসবাদ। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ঋণদাতাদের ত্রয়ী চায় ‘হ্যাঁ’ ভোট জিতুক, কারণ তারা এতে গ্রিক জনগণকে অপমান করতে পারবে। খবর গার্ডিয়ান ও বিবিসির।
গ্রিসের ব্যাংকগুলো বলছে, তাদের হাতে এখন এক শ কোটি ইউরো আছে। অর্থাৎ, এক কোটি ১০ লাখ মানুষের মাথাপিছু অর্থের পরিমাণ ৯০ ইউরো।
গণভোটের ফলাফল কী হবে তা নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ‘হ্যাঁ’ ও ‘না’ পক্ষের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। গত শুক্রবারের সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, হ্যাঁ ভোটের পক্ষে সমর্থন ৪৪ শতাংশ। না ভোটের পক্ষে সমর্থন আছে ৪৩ শতাংশের।
ঋণদাতাদের কঠোর শর্ত মেনে নিতে নারাজ গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস গত সপ্তাহে ৫ জুলাইয়ের গণভোটের ঘোষণা দেন। বিক্রয়কর বাড়ানো, পেনশনে কাটছাঁট কৃচ্ছ্রসাধনের একগুচ্ছ প্রস্তাবে অসম্মতি জানিয়ে আসছিল সিপ্রাস সরকার। এরই মধ্যে গত ৩০ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ ১৫০ কোটি ইউরো ফেরতের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।
হ্যাঁ ও না এর তফাত: গ্রিকরা হ্যাঁ ভোট দিলে ঋণদাতারা জরুরি তারল্য সহায়তার (ইমার্জেন্সি লিকুইডিটি অ্যাসিস্ট্যান্স বা ইএলএ) সীমা সামান্য একটু বাড়াতে পারে। এর ফলে ব্যাংকগুলো যথেষ্ট আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে না পেলেও আমানতকারীদের দৈনিক অর্থ উত্তোলনের সীমা এখনকার ৬০ ইউরো থেকে সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। বিদেশে অর্থ পাঠানোর ওপর যে পূর্ণাঙ্গ নিষেধাজ্ঞা বজায় রয়েছে তা-ও একটু শিথিল হতে পারে। এতে কয়েক দিন ধরে গ্রিক অর্থনীতি যে সম্পূর্ণ অচলাবস্থার মধ্যে রয়েছে তার কিছু উন্নতিও ঘটতে পারে
গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাস কার্যত তাঁর রাজনৈতিক জীবন রক্ষায় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। শুক্রবার রাতে বিশাল এক সমাবেশে সিপ্রাস, ‘প্রতারণার সঙ্গে বিজয়ী হতে’ না-এর পক্ষে ভোট দিতে আহ্বান জানান। শুধু না-এর পক্ষেই নয়, হ্যাঁ-এর পক্ষেও বড় কয়েকটি সমাবেশ হয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, হ্যাঁ-এর চেয়ে না-এর পক্ষের সমাবেশে লোক সমাগম অনেক বেশি হয়েছে। গ্রিসজুড়ে এমন ১০টি বড় সমাবেশ হয়েছে। হ্যাঁ-এর পক্ষের সমাবেশে বলা হয়েছে, না-এর পক্ষ জেতার অর্থ হলো ইউরোজোন থেকে বের হয়ে যেতে হবে গ্রিসকে। এ কথা প্রত্যাখ্যান করে সিপ্রাস বলেন, ‘ওদের আমরা ইউরোপ ধ্বংস করতে দেব না।’

No comments

Powered by Blogger.