ঘুষ দিন, সেবা নিন by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক)। ৭০ বছরের পুরনো এই হাসপাতালটিতে রোগীরা সেবা নিতে এসে প্রতিনিয়তই দালালদের দৌরাত্ম্যের শিকার হচ্ছেন। রোগীরা তাদের কাছে জিম্মি। দালালদের কাছে টাকাই মুখ্য, রোগী নয়। এমনকি মুমূর্ষু রোগীও তাদের অর্থের কাছে পাত্তা পায় না। যে কোন রোগীই তাদের কাছে ডাল-ভাত। তাই হাসপাতালে রোগীদের অর্থের বিনিময়ে অনেক সেবাই নিতে হয়। টাকা দিলে সিট, না দিলে ফ্লোর। শয্যাপ্রতি ১০০ থেকে ৩০০ টাকা দিতে হয় রোগীকে। অন্যথায় সিট বা শয্যা পাওয়া খুবই ভাগ্যের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সদ্যোজাত শিশুর খোঁজখবর নিতে ৫০ থেকে ৩০০ টাকাসহ বিভিন্ন দামে তাদের কাছ থেকে সুযোগ কিনতে হয় বলে রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
তারা অভিযোগ করেন, জরুরি বিভাগ দিয়ে রোগী কোনো ওয়ার্ডে নিতে হলেই দালাল চক্রের লোককে  ট্রলি ব্যবহারে জন্য ১০০ থেকে ৩০০ টাকা দিতে হয়। রোগীকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যেতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা দিতে হয় রোগীকে। দ্রুত রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে ৫০ থেকে ৩০০ টাকা। দ্রুত এক্স-রে রিপোর্ট পেতে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। নবজাতক রিলিজ নেয়ার সময় ১০০ থেকে এক হাজার টাকা। সিরিয়াল ভেঙে এমআরআই করাতে ৫০ থেকে এক হাজার টাকা। ক্যাথেটার পরাতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। ইকো করাতে ১০০০ টাকা। ব্যান্ডেজের সেলাই কাটতেও দিতে হয় টাকা। অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা ও গেট পাসের জন্য দালালদের ঘুষ দিতে হয় ৫০ টাকা করে ।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, জরুরি বিভাগে বহিরাগত মোসলেম, লাইলী, জীবন নেছা এবং আলট্রাসনোগ্রাম কক্ষের সিরাজের বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। রোগীরা  টাকা না দিলে এসব কর্মচারী রোগীদের চরম হয়রানি করেন। এদের টাকা দিলেই দ্রুত সেবা মিলে। অন্যথায় যতই মুমূর্মু রোগী হোক না কেন, তাদের কাছে পাত্তা নেই। সূত্র  আরও জানায়, হাসপাতালে কিছু বহিরাগত (প্রাইভেট) আয়াও রয়েছে। এদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তারা প্রভাবশালীদের ইশারায় চলে। এরাই হাসপাতাল নষ্টের মূলহোতা। বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত তারা।
এদিকে হাসপাতালের ডাক্তাররা নির্ধারিত সময়ে হাসপাতালে উপস্থিত হন না বলে অভিযোগ করেন রোগীরা। তারা রোগীদের উন্নত চিকিৎসার কথা বলে নিজেদের চেম্বারে বা ক্লিনিকে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এছাড়া মেডিসিন প্রতিনিধিদের সাক্ষাতের নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা থাকলেও তারা সবসময়ই ডাক্তারদের কক্ষে প্রবেশ করতে পারেন বলেও তারা অভিযোগ করা হয়। এছাড়া নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেয়া, সময় মতো নার্স এবং ওয়ার্ড বয়দের ডেকে না পাওয়াসহ রোগীদের সঙ্গে নার্স ও ওয়ার্ডবয়দের খারাপ ব্যবহারের অভিযোগও উঠে আসে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধিরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ঘুরাফেরা করতে দেখা গেছে। তারা দ্রুতই রোগীর পরীক্ষার-নিরীক্ষার কাগজপত্রগুলো হাত করে নেয়। আর রোগীর স্বজনকে বলতে বা পরামর্শ দিতে দেখা যায়, এখানে (হাসপাতালে) পরীক্ষার করালে অনেক সময় লাগবে। আপনরা বাইরে থেকে এই পরীক্ষাগুলো দ্রুত করালে অনেক সুবিধা পাবেন।
আমরা (ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধিরা) দ্রুতই আপনার পরীক্ষার-নিরীক্ষার ফলাফল হাতে পৌঁছে দিবো। এতে গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলো তাদের কথায় বিশ্বাস করে ফাঁদে পড়েন। দালালরা হাসপাতালের প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে হাসপাতালের বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
কেইস স্টাডি: গত মাসে হাসপাতালের ১০০ ওয়ার্ডের বয় স্বপন এক রোগীকে জরুরি বিভাগ থেকে ওয়ার্ডে আনতে ট্রলি ব্যবহার বাবত ৩০০ টাকা দাবি করেন। কিন্তু রোগীর স্বজনরা বলেন, ভাই আমরা গরিব। তাই ১০০ টাকা দিলাম। টাকা কম দেখে স্বপন ক্রোধের সঙ্গে বলতে থাকেন মাত্র ১০০ টাকা! ওই সময়ে ঘটনা স্থলে উপস্থিত হাসাপাতালের আরেক কর্মচারী স্বপনকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘ওর (রোগীর) বাবার কাছে তুই টাকা রেখেছিল যে ৩০০ টাকা দিবি করছিস।’
গত বছর আগস্ট মাসে আব্বাস নামের এক রোগী বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে রেফার হয়ে ঢামেকে আসেন। ওই রোগী জিবিএস মুমূর্মু ছিলেন। রোগীর বোন সাঈদা আক্তার অভিযোগ করেন, জরুরি বিভাগ থেকে তার ভাইকে নতুন ভবনের ছয় তলায় ৬০১ ওয়ার্ডে রেফার করেন ডাক্তাররা। প্রথমে ওই ভবনের গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ফ্লোরে রেখে চিকিৎসা শুরু করেন। আর বলতে থাকেন, সিট খালী নেই। ফ্লোরেই থাকতে হবে। কোনো রোগী চলে গেলে বা ফাঁকা হলে সিটে পাবেন। অল্প কিছুক্ষণ পর ওই ওয়ার্ডের এক নার্স এসে বললেন, আপনারা ওয়ার্ড বয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে ওয়ার্ড বয়দের সঙ্গে কথা বললে, তারা জানান ৪০০ টাকা দিলে এখনই সিট বা শয্যা ব্যবস্থা করে দেয়া যাবে। পরে ওই রোগীর সঙ্গে আসা তার মামা সবুজ দরকষাকষি করে ৩০০ টাকা দিয়ে আধা ঘণ্টার মধ্যেই ফ্লোর থেকে সিটে তুলেন রোগীকে। তবে, অল্প কয়েকদিনের মধ্যে ওই রোগী মারা যান বলে তার মামা উল্লেখ করেন।
ঠাণ্ডাজনিত কারণে চলতি বছরের ৪ঠা জুন ঢামেকের বর্হিবিভাগে ডাক্তার দেখাতে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বাসিন্দা সুমি আক্তার। সুমি আক্তারের স্বামী জিয়াউদ্দিন বাবুল অভিয়োগ করে বলেন, হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক তার স্ত্রীকে তিন ধরনের ওষুধ লিখেছেন ব্যবস্থাপত্রে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১৪টি গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেটের মধ্যে মাত্র ৪টি দিয়েছে। আর বাকি দুই ধরনের এন্টিবায়োটিক ১৪টি ও ১০টি ট্যাবলেটের একটিও দেয়নি। তিনি জানান, এই ওষুধগুলোর প্রতিটি ট্যাবলেটের দাম ৫০ টাকা। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, হাসপাতাল থেকে এতো ওষুধ কোথায় যায়? হাসপাতাল থেকে পাবলিকের ওষুধ সবই কি চুরি হয় ? তাহলে আমরা সাধারণ মানুষ যাবো কোথায় ?
জুন মাসের শেষ সপ্তাহে ৩১৩ ওয়ার্ডের রোগী আবদুর রব শেখের ইকো টেস্ট করার নির্দেশ দেন ডাক্তার। সেই মোতাবেক রোগীর আত্মীয় হাসপাতালের নতুন ভবনের তৃতীয় তলায় এই টেস্ট করাতে যান। রোগীর স্ত্রী অভিযোগ করেন, হাসপাতালের দালালরা রোগীর এই টেস্ট করাতে তার কাছে ১০০০ টাকা দাবি করে। দালালরা বলেছে, এই টাকা দিলে দ্রুত পাঁচ মিনিটের মধ্যে পরীক্ষা হবে। তিনি তাদেরকে (দালালদের) বলেছেন, ভাই আমরা গরিব, টাকা দিতে পারবো না। এই রোগী ২রা জুলাই রিলিজ নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর চলে গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস (এমআইএস) বিভাগের (স্বাস্থ্য বুলেটিন) ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে নারী, পুরুষ ও শিশু মিলে ২৬১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। বহির্বিভাগ দিয়ে ৩ হাজার ৩৫৩ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। গড়ে মারা গেছেন ২৪ জন। হাসপাতাল সূত্র জানা গেছে, জরুরি বিভাগ দিয়ে এক হাজার থেকে ১২শ’ রোগী চিকিৎসা নিয়ে ফেরা যান। হাসপাতালে নিয়মিত ৩ হাজার ৪শ’ থেকে ৩ হাজার ৫শ’ রোগী থাকছেন।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি ঢামেককে ২৬০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। যদিও হাসপাতালের শয্যা উন্নীত হয়েছে কিন্তু জনবল বাড়েনি। পুরনো কাঠামো অনুযায়ী জনবল আছে ৩ হাজার ২১১টি। তবে ৭৮২টি পদ শূন্য রয়েছে। ডাক্তারের সংখ্যা ৫২৫ জন। জানা গেছে, হাসপাতালে ১৩২৯ নার্সের মধ্যে কর্মরত আছেন ৮৭৯ জন। তৃতীয় শ্রেণীর ৩৪৪টি পদের মধ্যে খালি আছে ১৩০টি এবং চতুর্থ শ্রেণীর ১০১৩ পদের মধ্যে ২০০টি পদ শূন্য রয়েছে।
সুযোগ-সুবিধা: হাসপাতালে ৭০টি ওয়ার্ড রয়েছে। বিভাগ আছে ৩০টি। প্রতি বছর হাসপাতালের জন্য নির্ধারিত ৬২৩টি ওষুধের আইটেম কেনার কথা থাকলেও দরপত্রের মাধ্যমে প্রায় ৫০০ কেনা হয় । এ হাসপাতালে রোগীকে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকা দামের ওষুধ দেয়া হয় বলে প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সিরিয়াস ইনফেকশনের জন্য এন্টিবায়োটিক ম্যারোপেনা ১ এমজি দেয়া হয়। সিটি এমআরআই, আলট্রাসনোগ্রাম, ইআরসিপি, এনড্রোসকপি,  ইকো, ডায়ালাইসিসসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখানে করা হয়। তবে, যেসব টেস্ট সব সময় প্রয়োজন হয় না সেগুলো এই হাসপাতালে করা হয় না বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও জানান, আইসিইউ থেকে ২০টি এবং সিসিইউতে ২৪টি শয্যা রয়েছে। বার্ন ইউনিটে নিওরোসার্জারি, মাক্রো সার্জারি অর্থোপেডিকে অপারেশন করা হয় এই হাসপাতালে। এনজিও প্লাসটি করা এই হাসপাতালে। ২৪ ঘণ্টা এম্বুলেন্স সুবিধা দেয়া হয়। চারবেলা রোগীকে খাবার সরবরাহ করা হয়। রুটিন অনুযায়ী সকালের নাস্তায় দেয়া হয় পাউরুটি, ডিম, কলা ও জেলি; দুপুরে ভাত, মাছ, সবজি, মাংস; বিকালে চা, বিস্কুট এবং রাতে ভাত, মাংস ও সবজি দেয়া হয়।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. খাজা আবদুল গফুর মানবজমিনকে জানান, ভর্তিযোগ্য সব রোগীকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সুযোগ-সুবিধা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোগীরা প্রায় সব ধরনের সুবিধাই ভোগ করছে হাসপাতালে। তারা হাসপাতাল থেকে গড়ে ৯০ শতাংশ ওষুধ পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ ডাক্তার একজন রোগীকে ১০টি ওষুধ দেয়ার নির্দেশ দিলে রোগী কমপক্ষে ৯টি ওষুধ পান বলে তিনি দাবি করেন। কখনও ১০টি ওষুধও পেয়ে থাকেন। আমরা ১৯৭৪ সালের লোকবল দিয়ে কাজ করছি। প্রতিদিন হাসপাতালে ৪ হাজারের ওপরে রোগীর সমাগম হয়। ওই লোকবল দিয়ে হাসপাতালের কাজ করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান হাসপাতালে দালাল ও ঘুষ প্রসঙ্গে মানবজমিনকে তার দপ্তরে বলেন, ‘সমস্যা আছে। সমাধানের চেষ্টাও চলছে। সচেতন আছি। পদক্ষেপ নিয়েছি। আশা করি উত্তরণ করা সম্ভব হবে।’
ইতিহাস: ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটি ১৯৪৬ সালে স্থাপিত হয়। ছাত্র সংখ্যা ১,৫৫০ জন। আয়তন ২৫ একর। এটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। ৫ বছর মেয়াদি এমবিবিএস কোর্সে প্রতি বছর  ১৮০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের পাশে রয়েছে শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৫৭ সালে ভারতবর্ষের ক্ষমতা দখলের প্রায় একশ’ বছর পর ১৮৫৩ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। কলকাতায় মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠারও একশ’ বছরে এ অঞ্চলে কোন মেডিক্যাল কলেজ স্থাপিত হয়নি। মধ্যবর্তী এ দীর্ঘ সময়ে কিছু মেডিক্যাল স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।
উইকিপিডিয়া সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মিটফোর্ড হাসপাতালের সঙ্গে মিটফোর্ড মেডিক্যাল স্কুল (যা বর্তমানে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ), ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও সিলেট মেডিক্যাল স্কুল। তবে, পূর্ববঙ্গে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ নিতে নিতে চলে আসে ১৯৩৯ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার বছরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাউন্সিল তদানীন্তন বৃটিশ সরকারের কাছে ঢাকায় একটি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের প্রস্তাব পেশ করে। কিন্তু যুদ্ধের ডামাডোলে হারিয়ে যাওয়া প্রস্তাবটি ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষে আলোর মুখ দেখে। বৃটিশ সরকার উপমহাদেশের ঢাকা, করাচি ও মাদ্রাজে (বর্তমানে চেন্নাই) তিনটি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। এ উপলক্ষে ঢাকার তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. মেজর ডব্লিউ জে ভারজিন এবং অত্র অঞ্চলের প্রথিতযশা নাগরিকদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। তাদের প্রস্তাবনার ওপর ভিত্তি করেই ১০ই জুলাই ১৯৪৬ তারিখে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ চালু হয়। ওই বর্ষেই শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
শুরুতেই ডব্লিউ জে ভারজিনের ওপরেই ন্যস্ত হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পরিচালনার গুরুদায়িত্ব। শুরুতে এনাটমি ও ফিজিওলজি ডিপার্টমেন্ট না থাকায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীদের মিটফোর্ড মেডিক্যাল স্কুলে ক্লাস করতে হতো। একমাস পর এনাটমি বিভাগের অধ্যাপক পশুপতি বসু এবং ফিজিওলজি বিভাগে অধ্যাপক হীরালাল সাহা শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর হাসপাতালে ২২ নং ওয়ার্ডে ক্লাস শুরু হয়। ১৯৫৫ সালে কলেজ ভবন স্থাপনের পর সেই অভাব পূরণ হয়।
প্রথম থেকে একই কর্তৃপক্ষের অধীনে থাকলেও ১৯৭৫ সালে প্রশাসনিক সুবিধার্থে কলেজ ও হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ পৃথকীকরণ করা হয়। কলেজের দায়িত্বভার অর্পিত হয় অধ্যক্ষের ওপর এবং হাসপাতাল পরিচালনার ভার পরিচালকের ওপর।
১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ও বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ষাটের দশকের বিভিন্ন আন্দোলন রেখেছে অনন্য অবদান। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ডাক্তাররা এরশাদ সরকার ঘোষিত গণবিরোধী স্বাস্থ্যনীতির বিরুদ্ধে বিএমএর ব্যানারে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

1 comment:

  1. জরুরি বিভাগ দিয়ে রোগী কোনো ওয়ার্ডে নিতে হলেই দালাল চক্রের লোককে ট্রলি ব্যবহারে জন্য ১০০ থেকে ৩০০ টাকা দিতে হয়। রোগীকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যেতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা দিতে হয় রোগীকে। দ্রুত রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে ৫০ থেকে ৩০০ টাকা। দ্রুত এক্স-রে রিপোর্ট পেতে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। নবজাতক রিলিজ নেয়ার সময় ১০০ থেকে এক হাজার টাকা। সিরিয়াল ভেঙে এমআরআই করাতে ৫০ থেকে এক হাজার টাকা। ক্যাথেটার পরাতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। ইকো করাতে ১০০০ টাকা। ব্যান্ডেজের সেলাই কাটতেও দিতে হয় টাকা। অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা ও গেট পাসের জন্য দালালদের ঘুষ দিতে হয় ৫০ টাকা করে ।

    ReplyDelete

Powered by Blogger.