গুড গভর্নেন্সের অভাবে ফান্ড ফিরিয়ে নিচ্ছে দাতারা: বিএনপি

সরকারের ‘স্বেচ্ছাচারিতা ও অসহযোগিতায়’ বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন শক্তিশালীকরণের জন্য ইউএনডিপির নেয়া প্রকল্পের আর্থিক ফান্ড ফেরত নিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ৫ই জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচন এবং এরপর স্থানীয় নির্বাচনের ব্যাপক কারচুপি ও সহিংসতায় এদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নিয়ে আগ্রহ হারিয়েছে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এর অংশ হিসেবেই ইউএনডিপি তাদের প্রকল্পের অর্থ ফেরত নিয়ে যাচ্ছে। ‘গুড গভর্নেন্স’-এর অভাবে উন্নয়ন সহযোগীরা তাদের দেয়া সহযোগিতার অর্থ ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছে দলটি। গতকাল নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ভোটাররা যাতে স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে ভোট দিতে পারে এবং নির্বাচন কমিশন তাদের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন ও বিধি অনুযায়ী শক্তি প্রয়োগ করতে পারেন-এই বিষয়গুলো নিয়ে ইউএনডিপি ইসিকে (নির্বাচন কমিশন) প্রশিক্ষণ দিচ্ছেলেন। কিন্তু ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে ইউএনডিপিসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। ড. রিপন বলেন, এরপর ইউএনডিপি নির্বাচন ব্যবস্থা ত্রুটিগুলো শনাক্ত করার জন্য তারা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার ও নির্বাচন কমিশন কোন ধরনের সহযোগিতা না করার কারনে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে প্রকল্পের ফান্ড তুলে নিচ্ছে ইউএনডিপি। নির্বাচন কমিশনকে সরকারের ‘আজ্ঞাবহ সেবাদাসকারী প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, সিটি নির্বাচনের শুধু ভয়াবহ কারচুপিই নয়, তাতে যে পরিমাণ স্বেচ্ছাচারিতা হয়েছে, সেখানে নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ওই নির্বাচনের কারচুপি ও সহিংসতার প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এর নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছিলো ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন স্ব-উদ্যোগে কোন তদন্তের ব্যবস্থা করেনি। সরকারও কোন সহযোগিতা করেনি। তিনি বলেন, এই কমিশন সরকারের নির্লজ্জ প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে। তাদের দ্বারা ভবিষ্যতে কোন ধরনের নিরপেক্ষ নির্বাচন করার সম্ভব নয়, এর কোন সম্ভাবনাও দেখছি না। তারা সেই সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছে। বর্তমান কমিশনাররা পদত্যাগ করে ভবিষ্যতে একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের পথ সুগম করে দেবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বিএনপির এই মুখপাত্র। তিনি বলেন, আগেই দাবি করেছিলোম, তারা (নির্বাচন কমিশনার) পদত্যাগ করুক। কারণ সার্চ কমিটি এই ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আবিষ্কার করেছে। আবিষ্কারের যে নমুনা দেখতে পেলাম, তাতে সার্চ কমিটির সক্ষমতা ও ন্যায়বোধ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সরকারের কাছে দাবি থাকবে, ভবিষ্যতে একতরফা দলীয় লোকদের নির্বাচন কমিশনে বসানো চলবে না। নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনা করে কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির আয়োজিত ইফতার মাহফিলে ছাত্রলীগ হামলা করছে অভিযোগ করে রিপন বলেন, নরসিংদীতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খানের ইফতার পার্টিতে ছাত্রলীগ হামলা করেছে। আমরা মনে করি না, এই হামলার নেপথ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কোনো যোগাযোগ আছে। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান রিপন।
তিনি বলেন, সরকারকে বলতে চাই, আপনাদের ঠেঙ্গারি বাহিনীকে (ছাত্রলীগ) সামলান। এভাবে হামলা হতে থাকলে আমাদের কর্মীরা কতোদিন বসে থাকবে? সরকার বিএনপির সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার দিচ্ছে না। রিপন অভিযোগ করেন, পবিত্র রমজান মাসেও সরকার মানবিক হচ্ছে না। সে কারণে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়া সত্ত্বেও দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তি পাচ্ছেন না। যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডাক্তার যেমন রোগীকে সতর্ক করে, তেমনি বিএনপি সরকারকে সতর্ক করছে। সরকার এখন রোগী হয়ে গেছে। সরকার যদি সচেতন না হয় তাহলে তারা বিপর্যয়ে পড়তে বাধ্য হবে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা এড. মাসুদ আহমেদ তালুকদার, এড. সানাউল্লাহ মিয়া, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, শামা ওবায়েদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.