ফ্যাশনের আনন্দধারা by আশরাফ উল্লাহ

ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড–প্রথম আলো ঈদ ফ্যাশন প্রতিযোগিতা
অনুষ্ঠিত হয় গত শনিবার। অনুষ্ঠানে বাহারি পোশাকে
র‍্যাম্প মাতান মডেলরা l সৌরভ দাশ
দুটি মিল।
প্রথম আলো ঈদ ফ্যাশন প্রতিযোগিতার ১৭ বছর। বলা যায় টগবগে তারুণ্য। অপর দিকে, শুরু থেকেই তারুণ্যের জয়জয়কার। প্রতিবারই একই রীতি। এবারও ব্যতিক্রম নয়। তরুণেরাই অগ্রগামী।
ধরুন ইকবাল হোসেনের কথা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এই তরুণ এবার জিতেছেন দুটি পুরস্কার। শিশুদের পোশাকে প্রথম ও সালোয়ার–কামিজে তৃতীয়। ইকবালের বুটিক হাউসের নাম ফোঁড়। নামেই চমক। তাঁর কাছে এই স্বীকৃতি এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। বললেন, ‘আমি ফোঁড়ে স্বপ্ন বুনি। আজ স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে গেলাম এক ধাপ।’ শুধুই কি ইকবাল? কাজের স্বীকৃতি পেয়ে উচ্ছ্বসিত সাজিয়া আফরিন, আবদুল্লাহ ইবনে সৈয়দ, আমেনা হক খান, জয়তুন নাহার, নাসরিন ফাতেমারা। তাঁরাও জিতেছেন পুরস্কার।
সেরাদের সেরা জত্রিতা বুটিকসের উম্মে কুলসুম সুলতানা ঠিক তরুণদের কাতারে না পড়লেও তাঁর উচ্ছ্বাসও কম নয়। চারটি পুরস্কার হাতে নিয়ে তিনিও আপ্লুত। মঞ্চ থেকে নেমে আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন অন্য ডিজাইনারদের সঙ্গে। তাঁর বুটিক হাউস বান্দরবানে। ২০০৯ সাল থেকে প্রতিযোগিতায় আসছেন। পুরস্কারও জিতেছেন। কিন্তু অধরা ছিল সেরাদের সেরার মুকুট। এবার তা হাতের মুঠোয়।
উম্মে কুলসুম সুলতানা বললেন, ‘নিজের কাজের প্রতি আত্মবিশ্বাস ছিল। ফলও পেয়েছি হাতে হাতে। খুব ভালো লাগছে।’
নতুন ডিজাইনাররা পরখ করেন যোগ্যতা, পুরোনোরা ঝালাই করেন ভাবনা। আর দর্শকেরা দেখেন হাল ফ্যাশনের ট্রেন্ড। ফ্যাশনে চট্টগ্রামের একমাত্র প্ল্যাটফরমই যে এটি।
এবার অনুষ্ঠানে। সন্ধ্যা নামতেই পাঁচ তারকা হোটেল র্যা ডিসন ব্লুর মোহনা মিলনায়তন গমগম করছিল দর্শকে। কেউ দিচ্ছেন কফিতে চুমুক। কেউ ব্যস্ত সেলফি তোলায়। সাড়ে সাতটায় আয়োজনের পর্দা উঠল রবীন্দ্রনাথের গানে—‘মম চিত্তে নিতি নৃত্যে’। ঝলমলে মঞ্চে আলো ছড়াল এক ঝাঁক নৃত্যশিল্পী। সমবেত নৃত্যে মাতিয়ে তোলেন আসর।
এরপর ক্যাটওয়াক। পোশাকে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে গেলেন মডেলরা—যা ছড়িয়ে গেল দর্শকদের মধ্যেও। তাই তো প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের আহ্বানে দর্শক সারি থেকে মঞ্চে উঠে আসা শিক্ষাবিদ সাফিয়া গাজী রহমানের কণ্ঠেও উৎসবের আমেজ। বললেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে ঈদ এসে গেছে।’
এর মধ্যে শুরু হয়ে গেল বাদ্যযন্ত্রের টুংটাং আওয়াজ। মঞ্চে এলেন কুমার বিশ্বজিৎ। ঘড়ির কাঁটা তখন নয়টা পেরিয়ে। উঠেই বললেন, ‘অনারা গম (ভালো) আছননি।’ দর্শক সারি থেকে সমস্বরে চিৎকার ‘ভালা আছি’। গান শুরু করলেন ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’ দিয়ে। তাঁর সঙ্গে গলা মেলালেন দর্শকেরাও। গান শেষে বললেন, ‘গম লাগেরনি।’ তখন তুমুল করতালিতে ফেটে পড়ে মিলনায়তন। একে একে চারটি গান করেন। কুমার বিশ্বজিতের গানের সঙ্গে আসর আরও জমিয়ে তোলে প্রখ্যাত বাদ্যযন্ত্রশিল্পী মিঠুন চক্রবর্তীর ঢোলের বাদন।
অবশেষে পুরস্কারের পালা। বিচারকদের চূড়ান্ত বিচারে ১২টি বিভাগে স্বীকৃতি পান ২৫ জন ডিজাইনার। তাঁদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা, সহপৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুফ হাবিব ও শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ। এবার ক্লিক ক্লিক...। সবার মুখে হাসি, উচ্ছ্বাস।

No comments

Powered by Blogger.