‘ক্যাপটেন কুলে’র মাথা গরমে অবাক ভারতীয় মিডিয়া

মুস্তাফিজকে এভাবেই ধাক্কা দিলেন ধোনি! ছবি: সংগৃহীত
কোথায় মহেন্দ্র সিং ধোনি আর কোথায় মুস্তাফিজুর রহমান! বয়সে, অভিজ্ঞতায়, তারকাখ্যাতি... কোনো দিক দিয়েই তুলনা চলে না। ধোনি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আয় করা ক্রীড়া তারকাদের একজন। তাঁর নাম ওঠে ফোর্বসে। তাঁকে চেনেন খোদ বারাক ওবামা। ধোনি ১২৫ কোটি মানুষের নয়নের মণি। ধোনি জনপ্রিয় বাংলাদেশেও। ‘ছিলেন’ লিখতেই হচ্ছে, কাল ছোট্ট একটা ঘটনা বিরাট পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়ে গেল। শ্রদ্ধার জায়গাটি হারালেন ভারতের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক।
শুধু বাংলাদেশ? ছি-ছিক্কার উঠছে ক্রিকেট বিশ্বেই। এ কী করলেন ধোনি। মাত্রই প্রথম ওয়ানডে খেলতে নামা, এখনো ২০-এ পা না দেওয়া একজন তরুণ ক্রিকেটারকে এভাবে ধাক্কা মারবেন! মুস্তাফিজ হয়তো ভুলই করেছেন, কিন্তু বয়সে-অভিজ্ঞতায় এগিয়ে থাকা ধোনি সামান্য ঔদার্য্যটুকু দেখাতে পারলেন না? না হলে কীসের তিনি ‘ক্যাপটেন কুল’? না হলে ক্রিকেট কোন হিসেবে ভদ্রলোকের খেলা?
ধোনির ওই ঘটনার পর কাল অনলাইনে বেশ বাহাস হচ্ছিল। পক্ষে-বিপক্ষে চাপান-উতোর। এরই ফাঁকে ক্রিকইনফোর ধারাভাষ্যে একজনের মন্তব্যের পাল্টা জবাবে আড্রিয়ান মেরেডিথ ক্রিকেটের সবচেয়ে খ্যাপাটে চরিত্রদের একজনের উদাহরণ টেনে লিখেছেন, ‘আজকের এবং দশ বছর আগেকার মধ্যে পার্থক্য হলো, আজ যদি অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস মাতাল হয়ে মাঠে নামত, তবু বোধ হয় কেউ অতটা অবাক হতো না।’
স্বাভাবিকভাবে ভারতীয় সমর্থকদের একটা বড় অংশই ধোনির পক্ষে কথা বলেছেন। তবে তাঁদেরই অনেকে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে ধোনির সমালোচনা করছেন। ধোনির এমন আচরণের সমালোচনা করেছে দেশটির সবচেয়ে বড় পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়া। সমালোচনা করা হয়েছে দেশটির সবচেয়ে বড় বাংলা পত্রিকা আনন্দবাজারেও।

‘ক্যাপটেন কুল ধোনি পথরোধ করা বাংলা বোলারকে সজোরে ধাক্কা মারলেন’ শিরোনামে আলাদা একটি প্রতিবেদনই করেছেন টাইমস অব ইন্ডিয়ায়। তাতে তিনি লিখেছেন, ‘ধোনি হয়তো বলতে পারেন, মুস্তাফিজ ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায়, তাঁর পথরোধ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা গেছে, ধোনি সরে যাওয়ার চেষ্টা তো করেননি, উল্টো কাঁধ দিয়ে সজোরে ধাক্কা মেরেছেন।’
ধোনির দীর্ঘ ক্রিকেট ক্যারিয়ারে এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। বরং বরাবরই তিনি ক্রিকেটীয় চেতনার কারণে আলাদাভাবে প্রশংসিতই হয়েছেন। সেটিও উল্লেখ করে টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধোনির যে অবস্থান, সেটি বিবেচনায় নিলে, এটা অবশ্যই খুবই অখেলোয়াড়োচিত একটি আচরণ। যে অভিযোগে ভারত অধিনায়ক তাঁর বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে আগে কখনো অভিযুক্ত হননি।’
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাঠের দুই আম্পায়ার বিষয়টি ম্যাচ রেফারির কাছে তোলেন কি না, সেটাই এখন দেখার। তবে ধোনি এর জন্য শাস্তি পান আর না-ই পান; ক্ষণিকের এই অভব্যতার জন্য ধোনি বিশ্বজুড়েই হাজার হাজার ভক্ত এরই মধ্যে হারিয়ে ফেলেছেন।’
আনন্দবাজার-এর ম্যাচ প্রতিবেদনে রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায় ঘটনাটি উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘ভারত অধিনায়ক এ দিন যা করলেন তা তাঁকে সাধারণত করতে দেখা যায় না। মুস্তাফিজুরকে ভারত অধিনায়ক ধাক্কা মেরে বসলেন...রান নিতে যাওয়ার সময় ধোনির কাঁধ মুস্তাফিজুরকে এমনভাবে গুঁতিয়ে দিল যে, উনিশের পেসারকে মাঠের বাইরে চলে যেতে হলো সঙ্গে সঙ্গে। প্রত্যুত্তরটাও পেলেন ভারত অধিনায়ক। মুস্তাফিজুর ফিরে এসে ভারতকেই ম্যাচ থেকে ধাক্কা মেরে বার করে দিলেন।’
কাল শুধু ভারত হারেনি। হেরেছেন ধোনি। হেরে গেছে তাঁর ভাবমূর্তি। কাল শুধু বাংলাদেশ জেতেনি, জিতেছে সাতক্ষীরার এক অখ্যাত তরুণ। এই লেখার প্রথম বাক্যে আবার ফিরে যান। কোথায় ধোনি আর কোথায় মুস্তাফিজ? উত্তর: ধোনি এমন কাণ্ডের পরও মাঠের আম্পায়ারকে নালিশ করতে গিয়েছিলেন। আর প্রচারের আলোয় অনভ্যস্ত সহজ-সরল মুস্তাফিজকে যেতে হয়েছিল ড্রেসিংরুমে। কিন্তু ১২ ওভার পর বোলিং মার্কে ফিরে, ৫ বলে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে তিনি ধোনিকে যেন মনে করিয়ে দিলেন, লড়াইটা ব্যাট আর বলের। শরীরের ধাক্কাধাক্কির নয়!

No comments

Powered by Blogger.