ধোনিকে কেন আগে নামতে বলল না শাস্ত্রী

জঘন্য পারফরম্যান্স, না কি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস। কাকে দায়ী করব এই হারের জন্য বুঝতে পারছি না। তবে বাংলাদেশ দেখিয়ে দিল, কী ভাবে ভারতের মতো তারকাখচিত দলকেও রীতিমতো নাকানিচোবানি খাইয়ে হারানো যায়। কয়েক সপ্তাহ আগে ঘরের মাঠেই পাকিস্তানকে ওয়ান ডে আর টি-টোয়েন্টিতে হারানোর আত্মবিশ্বাসটাই যেন বৃহস্পতিবার মীরপুরে তামিম ইকবালদের পারফরম্যান্সে ফুটে উঠল।
ওই ঘটনার পরই ভারতের আরও সাবধান হওয়া উচিত ছিল। ওদের মনে রাখা দরকার ছিল ঘরের মাঠে মাশরফিরা বিপজ্জনক হয়ে উঠতেই পারে। কিন্তু ভারতের পারফরম্যান্স দেখে তো মনেই হল না যে, ওরা কোনও সিরিয়াস প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলছে। আগাগোড়া ভাবখানা এমন, যে এখন যা হচ্ছে হোক, পরে ম্যানেজ করে নেওয়া যাবে। এই ‘পরে ম্যানেজ’ করার প্রবণতাই ডুবিয়ে দিল ভারতকে।
শিখর ধবন-রোহিত শর্মারা ভারতকে ৯৫-০-য় পৌঁছে দেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ভারতের স্কোরবোর্ডে দেখা গেল ১১৫-৪! বিরাট কোহলি অযথা দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো অফ স্টাম্পের বাইরের একটা বল পেটাতে গিয়ে উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরত চলে গেল। ওর একটু পরেই রোহিত শর্মা। তখনই কিন্তু নামতে পারত ধোনি। দলের ব্যাটিংয়ের এমন বেহাল অবস্থা যেখানে, সেখানে ক্যাপ্টেন আগে ভাগে নেমে দলের হাল ধরবে না কেন? বাংলাদেশের বোলাররা দুর্দান্ত বল করছে বলে হাল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকব! ধোনি আগে উইকেটে এলে রাহানের সঙ্গে বড় পার্টনারশিপ গড়ার অনেকটা সময় পেত।
ধোনি যখন ক্রিজে এল, তখন উল্টোদিকে রায়না। তখনও এই আশায় বসে ছিলাম যে ওরা দু’জনে মিলে হাল ধরে নেবে। ওই সময়ে খেলায় ফিরে আসার সেরা ফর্মুলা হল উইকেটে টিকে থেকে বিপক্ষের আত্মবিশ্বাসী বোলারদের হতাশ করে তোলা। তার পর ব্যাটে ঝড় তোলা। ধোনি ও রায়নার মতো দুই ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে এই চাওয়াটা বোধহয় বাড়াবাড়ি নয়। ওরা যে সেটা পারবে না, এটা ভাবাও কঠিন। কিন্তু সত্যিই পারল না। সাকিবের অনবদ্য বলে আউট হল ধোনি। রায়না প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা মুস্তাফিজুরের বলে ‘প্লেইড অন’। তখনই ভারতের লড়াই প্রায় শেষ।
এ রকম পরিস্থিতিতে ড্রেসিংরুমে থাকা কোচের একটা ভূমিকা অবশ্যই থাকে। এ ক্ষেত্রে টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রীরও নিশ্চয়ই একই ভূমিকা ছিল। বিশেষ করে দলে যেখানে কোনও চিফ কোচ নেই। শাস্ত্রীরই বলা উচিত ছিল, ক্যাপ্টেনকে পাঁচে নামতে।
ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে-তে বাংলাদেশের তোলা সর্বোচ্চ এটাই। যার পিছনে বাংলাদেশের দুই ওপেনারের কৃতিত্ব যেমন রয়েছে, তেমন ভারতের বোলারদের ব্যর্থতাও কম নয়। কিন্তু তামিম ইকবাল আর সৌম্য সরকারের মতো ব্যাটিং ভারতের তারকা ব্যাটসম্যানরা করতে পারল না কেন, এটাই আমার কাছে বিস্ময়ের। মীরপুরের যা উইকেট দেখলাম, তাতে ৩০৮ তাড়া করে জেতাটা এমন কিছু কঠিন কাজ নয়। কিন্তু কেউ যদি মাঠে নামার আগেই ভেবে বসে থাকে, আমরা জিতে গিয়েছি, তা হলে তো সর্বনাশ। বিপক্ষকে খাটো করে দেখার মাশুলই দিতে হল ধোনিদের। 
মাশুল অবশ্য শুরু থেকেই দিতে হয়েছে। প্রথমে মোহিত, ভূবনেশ্বরের আর উমেশের ব্যর্থতার মাশুল দিতে হল। তিন পেসারে খেলাটাই বোধহয় ভুল হয়েছে। মোহিতের জায়গায় অক্ষর পটেলকে খেলালে বোধহয় সেটা আরও কাজে দিত। রায়না-অশ্বিনদের বোলিং দেখে সে রকমই মনে হল। বাংলাদেশের ইনিংসের একশো রান উঠল ৭৯ বলে! পেসাররা বেদম মার খাচ্ছে দেখে রায়নাকে বোলিংয়ে আনার ধোনির সিদ্ধান্তটা একদম ঠিক। ওই সময় আর একটা স্পিনার হাতে থাকলে কাজে দিত। পেসারদের যা ইকনমি রেট! বিশেষ করে মোহিত। প্রায় সাড়ে এগারো। সেখানে রায়না ১০ ওভারে রান দিয়েছে ৪০। ও না থাকলে সাড়ে তিনশো তুলত বাংলাদেশ।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

No comments

Powered by Blogger.