বাংলাদেশের জয় বিস্ময়কর কিছু নয়, বললেন গাভাস্কার

আবারও বাংলাদেশকে প্রশংসায় ভাসালেন গাভাস্কার। ফাইল ছবি
আগের ২৯ লড়াইয়ে বাংলাদেশ জিতেছিল মাত্র তিনবার। সেই বাংলাদেশ কাল ভারতকে হারাল ৭৯ রানের বিশাল ব্যবধানে। একেবারে হেসেখেলে। ভারতের এই অসহায় আত্মসমর্পণে হয়তো দেশটির অনেকেই অবাক। কিন্তু সুনীল গাভাস্কার বলছেন, বাংলাদেশের এই জয়ে তিনি অন্তত অবাক নন। এটি তাদের ধারাবাহিকতারই প্রতিচ্ছবি।
‘বাংলাদেশের কাছে ভারতের লজ্জাজনক হার’ শিরোনামে ভারতের শীর্ষ সংবাদ চ্যানেল এনডিটিভি একটি বিশ্লেষণধর্মী অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছিল। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেন ভারতীয় ক্রিকেট কিংবদন্তি গাভাস্কার। সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, এমন নয় বাংলাদেশ হুট করে ভালো খেলতে শুরু করেছে। টেস্টে এখনো ধারাবাহিক হতে না পারলেও ওয়ানডেতে পোশাকের মতোই ঝলমলে তাদের পারফরম্যান্স।
‘লিটল মাস্টার’ বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে যদি ওদের খেলা আপনি দেখে থাকেন, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ওরা কিন্তু দারুণ খেলছে। তারা আগের তুলনায় অনেক বেশি সীমিত ওভারের ম্যাচ খেলছে। তারা যত বেশি খেলবে, ততই উন্নতি করবে। গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স তো অবিশ্বাস্য ছিল। প্রথম ওয়ানতে তাদের জয় আমার কাছে অপ্রত্যাশিত কিছু মনে হয়নি।’
কালকের জয়ের পর বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উল্লাস, গ্যালারিতে দর্শকদের ‘মওকা মওকা’ কোরাস স্লোগানের উদাহরণ টেনে উপস্থাপক জানতে চান, এটি কি বাংলাদেশের কাছে বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালের প্রতিশোধ ছিল কিনা। বিশেষ করে বিশ্বকাপের ওই ম্যাচটি বাংলাদেশের সমর্থকদের জন্য তিক্ত অভিজ্ঞতা ছিল। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়েও তারা ছিল ক্ষুব্ধ।
উত্তরে গাভাস্কার বলেন, ‘হয়তো সমর্থকদের মধ্যে এমন একটা ভাবনা কাজ করেছে। তবে আমি মনে করি না বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা এমনটা ভেবেছে। দেখুন বিশ্বকাপের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ ছিল। সেখানে আম্পায়ারের কিছু সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের বিপক্ষে গিয়েছিল। তখন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেছিল, খেলায় এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই পারে। ব্যাপারটি এমন নয় আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের ঘটনা শুধু বাংলাদেশের বেলায় ঘটছে কিংবা অস্ট্রেলিয়ার বেলায় ঘটছে না। আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বড় কোনো ঘটনা নয়। সেটাকে বড় কোনো ঘটনা বানানো ম্যাচ হারার একটা অজুহাত হতে পারে। ভারতেরও আজকের (গতকাল) পরাজয়ের কোনো অজুহাত নেই। ওরা বড় ব্যবধানেই হেরেছে।’
উপস্থাপক আবার জানতে চান, বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেটে এখন নতুন একটা মাত্রা চলে এসেছে কিনা। গত বিশ্বকাপে রুবেল-কোহলির মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এবার রোহিত শর্মার বাক্য বিনিময়, মুস্তাফিজের সঙ্গে ধোনির সেই ধাক্কার ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন উপস্থাপক।
গাভাস্কার বলেন, ‘হ্যাঁ, এটা হচ্ছে। দুটো দলই, দুই দলের খেলোয়াড়েরাই মনে করে তারা জিততে পারে। টেস্ট ম্যাচে এই উত্তাপটা ছিল না। কারণ বাংলাদেশ টেস্টে আত্মবিশ্বাসী নয়। কিন্তু ওয়ানডেতে তারা সামান্য ছাড় দিতেও নারাজ। আর আপনার মধ্যে যখন এমন ভাবনা কাজ করবে, আপনি এমনটাই খেলবেন।’
বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটে বদলে যাওয়ার পেছনে বড় কারণ হিসেবে বিপিএলের অবদান আছে বলে মনে করেন গাভাস্কার, ‘ওদের ওয়ানডেতে ভালো করা আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। এর পেছনে বিপিএলের অনেক বড় অবদান আছে। আমি জানি এই টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টটা বেশ কয়েক বছর ধরেই হচ্ছে না। কিন্তু এই টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। বিদেশি খেলোয়াড়দের সঙ্গে একই ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করেছে। অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেছে। তাদের কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করেছে। চাপের মুখে কীভাবে খেলতে হয় বুঝতে শিখেছে।’

No comments

Powered by Blogger.