ক্ষোভ আর হতাশায় বিভাজন জাপা by মনোয়ার জাহান চৌধুরী

ক্ষোভ হতাশা আর প্রতিবাদ; এ তিন শব্দে বিভাজন সিলেট জাতীয় পার্টিতে। সিলেট জেলা জাপার আহবায়ক কমিটি গঠনের পরই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। প্রকাশ্যে গঠিত কমিটি বিরোধী বলয় তৈরি হয়। এ কমিটিতে স্থান পাওয়া সিনিয়র এক নেতা পদবী ব্যবহারেও স্বচ্ছন্দ করেননি। বরং তিনি হয়ে ওঠেছেন প্রতিবাদী। এমন উদাহরণ তৈরি হয় জেলা জাপার আহবায়ক কমিটি গঠনের পরই। এমনকি বর্তমান নেতৃত্বের প্রতিও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন পদবঞ্চিতরা। তারা দাবি করেন, যাদেরকে নেতৃত্বে আনা হয়েছে তারা শহর ভিত্তিক রাজনীতিতে মানানসই নয়। শহরে মিছিল করতে চাইলে তাদের ডাকে কেউ সাড়া দেবে না বলেও দাবি করেন তারা। এছাড়া দলকে ঢেলে সাজাতে হলে শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপে সমন্বয়রে মাধ্যমে কমিটি গঠনের পক্ষে মত দেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট জাপা নেতারা। আহবায়ক কমিটির শীর্ষ পদেও পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত তাদের।
চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি আবদুল্লাহ সিদ্দিকীকে আহবায়ক করে ৭১ সদস্যের কমিটি অনুমোদন করেন দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। আর কমিটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্রোহ দেখা দেয়। তখন অভিযোগ ওঠে কেন্দ্রে ভুল বুঝিয়ে কমিটি মেয়াদ থাকাকালীন অবস্থায়ই আহবায়ক কমিটি গঠিত হয়েছে। তাই প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন অভিযোগকারীরা। আর কমিটির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে শোকজ নোটিশও পান সিলেট জাপার দুই নেতা। তারপরও থেমে থাকেনি দ্বন্দ্ব।
এদিকে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলা, বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর, গোলাপগঞ্জ উপজেলা ও পৌর এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলা জাতীয় পার্টির কমিটি গঠন করে দিয়েছে জেলার আহবায়ক কমিটি। সম্মেলনের মাধ্যমেই ওই শাখাগুলো কমিটি গঠন করা হয়। আর অন্যগুলোর সম্মেলনও রমজান মাসের পর সম্পন্ন হয়ে যাবে। জেলা জাপার আহবায়ক আবদুল্লাহ সিদ্দিকি মানবকণ্ঠকে এমন তথ্যই জানালেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, তৃণমূলই জাপার মূল শক্তি। তৃণমূল যদি শক্তিশালী না হয় দলও মজবুত হবে না। তাই দলকে তৃণমূলে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া চলছে, চলবে।
এ সব গঠিত কমিটি অনেকেই মেনে নেননি, এমন প্রশ্নে আবদুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, কারো মানা না মানায় যায় আসে না। দলকে শক্তিশালী ও সুসংহত করতে বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছে। অন্যগুলোও রমজান মাসের পর হয়ে যাবে।
অপরদিকে আহবায়ক কমিটির গঠন করে দেয়া বিভিন্ন শাখার কমিটির বিরুদ্ধেও মুখ খুলতে শুরু করেছেন অনেকেই। তাদের অভিযোগ ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং যারা রাজপথে আন্দোলন জমাতে পারবে তাদেরকে কমিটিতে আনা হয়নি। বরং যারা জেলা নেতৃবৃন্দের পছন্দের লোক তাদেরকেই কমিটিকে স্থান দেয়া হয়েছে।
সিলেট জেলা জাপার সাবেক সাধারণ সম্পাদক (বর্তমান যুগ্ম আহবায়ক) আবদুস শহীদ লস্কর বশির মানবকণ্ঠকে বলেন, গ্রামাঞ্চলে ২ হাজার কর্মী দিয়ে মিছিল করে দলের অবস্থান জানান দেয়া যায় না। শহরে এর মজবুত ভিত্তি থাকতে হয়। বর্তমান আহবায়ক কমিটির সে অবস্থান নেই। তিনি চ্যালেঞ্জ করে বলেন, বর্তমান আহবায়ক কমিটির পদধারীরা একশ’ কর্মী নিয়েও সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার পয়েন্টে মিছিল করতে পারবে না। কারণ তাদের ডাকে কেউ সাড়া দেবে না। বশির লস্ক জেলা জাপার বর্তমান আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক হলেও এ পদ ব্যবহারে তিনি স্বচ্ছন্দ করেন না।
বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠন প্রসঙ্গে বশির লস্কর বলেন, যতটুকু জানি এসব কমিটিতে ত্যাগীদের এবং সংগঠকদের মূল্যায়ন করা হয়নি। এক তরফাভাবে কমিটি হচ্ছে। এতে করে বিভাজন খুবই স্পষ্ট। তিনি দাবি রাখেন, দলকে ঢেলে সাজাতে হলে দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে সমন্বয়ের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা যেতে পারে। এছাড়া তিনি জেলা জাপার শীর্ষ পদে পরিবর্তন আনারও ইঙ্গিত দেন।

No comments

Powered by Blogger.