আদভানির বিস্ফোরক মন্তব্যে ভারতজুড়ে প্রবল বিতর্ক, ফের জরুরি অবস্থার পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে

লালকৃষ্ণ আদভানি
 ভারত ফের জরুরি অবস্থা জারির মতো পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে। বিশেষ করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে পারে এমন শক্তি শক্তিশালী হয়েছে বলে ভারতের প্রবীণ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানির বিস্ফোরক মন্তব্যে ভারতজুড়ে প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা আদভানির মন্তব্যে সহমত জানিয়েছেন। ভারতে জরুরি অবস্থা জারির ৪০ বছর পূর্তির ঠিক আগে একটি সংবাদপত্রে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিজেপির মার্গদর্শকমণ্ডলের অন্যতম সদস্য এই প্রবীণ নেতার মন্তব্যকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। বিজেপির প্রবীণ নেতা জানিয়েছেন, গণতন্ত্রকে যারা ধ্বংস করতে পারে, যারা সাংবিধানিক ও আইনি বিধিনিষেধ মানে না, এমন শক্তি ফের সক্রিয় হয়েছে। আগামী ২৫শে জুন ভারতে জরুরি অবস্থা জারির ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক প্রশ্নের উত্তরে আদভানি বলেছেন, গত ৪০ বছরে এমন কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি যাতে মৌলিক অধিকারগুলো সুরক্ষিত থাকে। পাশাপাশি অবশ্য তিনি জানিয়েছেন, এখন জরুরি অবস্থা জারি করা যে কারও পক্ষেই সহজ হবে না। ভারতে যখন বিজেপি ক্ষমতায় তখন একথা বললেন কেন বাজপেয়ী সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী তা নিয়েই দেশজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিজেপিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আদভানির সম্পর্ক মোটেই ভাল নয়। আদভানি অবশ্য বলেছেন, একবারও আমি বলছি না যে দেশের দায়িত্ব সামলানোর জন্য বর্তমান সরকার পরিণত নয়। তবে আমি হলফ করে এটাও বলতে পারছি না যে আরও একবার ভারতকে জরুরি অবস্থার সম্মুখীন হতে হবে না। অন্যদিকে তিনি এও বলেছেন, আমাদের দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় এমন কোন ইতিবাচক লক্ষণ আমি দেখতে পাচ্ছি না, যার ওপর ভরসা করে বলতে পারি সুদক্ষ নেতার হাতে এই দেশের কার্যভার রয়েছে। গণতন্ত্রের প্রতি সর্বাঙ্গীণ অঙ্গীকারের অভাব যে বেশ বিদ্যমান সেকথাও জানাতে দ্বিধা করেননি আদভানি। তিনি জানিয়েছেন, ১৯৭৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যখন জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন তখন সাংবিধানিক রক্ষাকবচ থাকা সত্ত্বেও তা করা হয়েছিল। আর এখন এই ২০১৫ সালে এসে সেসব রক্ষাকবচ পর্যাপ্ত নয় বলেই তিনি মনে করেন। আদভানি ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য করে জানিয়েছেন, জরুরি অবস্থা জারি করার ক্ষেত্রে শাসকদের ভাবতে হবে যে ইন্দিরা গান্ধীর দল পরের সেই নির্বাচনে গো-হারা হেরেছিল। আদভানির এসব বিস্ফোরক মন্তব্য নিয়ে বিজেপি নেতারা সাফাই দিতে মাঠে নেমে পড়েছেন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের তাত্ত্বিক নেতা এম জি বৈদ্য জানিয়েছেন, আদভানি তার কথার মধ্য দিয়ে মোদিকে বার্তা দিয়েছেন এমন মনে করার কোন কারণ নেই। আদভানি একজন অভিজ্ঞ নেতা। তিনি প্রয়োজন হলেই মোদির সঙ্গে কথা বলতে পারেন। বিজেপির মুখপাত্র এম জে আকবরও বলেছেন, কোন ব্যক্তির উদ্দেশ্যে আদভানি কিছু বলেননি। তিনি প্রতিষ্ঠান নিয়েই মন্তব্য করেছেন। সেই সঙ্গে আকবর জানিয়েছেন, ভারতের গণতন্ত্র এখন যথেষ্ট শক্তিশালী। তাই জরুরি অবস্থা জারির দিন আজ আর নেই। তবে কংগ্রেসের মুখপাত্র টম ভাড়াক্কান বলেছেন, মোদির নেতৃত্বেই জরুরি অবস্থা জারি হতে পারে বলেই প্রবীণ নেতা মন্তব্য করেছেন। তিনি আরও বলেন, আদভানি সবসময়ই সোচ্চার। তার যা বলার সেটাই তিনি বলেছেন। আদভানির মন্তব্য তুলে ধরে কংগ্রেস মুখপাত্র দাবি করেছেন, দেশের পরিস্থিতি জরুরি অবস্থার ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে প্রবীণ বিজেপি নেতা সঠিক কথাই বলেছেন। সমাজবাদী পার্টির নেতা নরেশ আগরওয়াল বলেছেন, প্রবীণ নেতা আদভানি যে শঙ্কার কথা বলেছেন, সরকারের উচিত সেটিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা। আম আদমি পার্টির নেতা আশুতোষ মনে করেন, আদভানির বিবৃতি স্পষ্ট করেছে যে, বিজেপি সরকার ও তার নেতৃত্বের প্রতি তার কোন আস্থাই নেই। আশুতোষ বলেছেন, আদভানি সঠিকভাবেই দেখতে পেয়েছেন, মোদির নেতৃত্ব এবং তার সরকার প্রতিদিনই গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে।

No comments

Powered by Blogger.