সেপ্টেম্বরে শুরু টেলি ট্রানজিট

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ভারতের সঙ্গে শুরু হতে যাচ্ছে টেলি ট্রানজিট। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের ১০ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ যাচ্ছে ভারতের ত্রিপুরায়। এ থেকে আগামী এক বছরে বাংলাদেশের আয় হবে ৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ভারত বাংলাদেশ থেকে ব্যান্ডউইথ কিনবে এ খবর পুরনো। ৬ই জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের পর এ ইস্যুটি নতুন গতি পেয়েছে। এর আগে ব্যান্ডউইথের দাম, রপ্তানির প্রক্রিয়া, রুট এই তিন ইস্যুতে দুই দেশের সংশ্লিষ্টরা টানা ২ বছর বৈঠকের পর বৈঠক করেন। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে বেশ বেগ পেতে হয়। গত বছরের ১২ই মে এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। শেষ পর্যন্ত মোদির সফর সমাধান বয়ে আনে ব্যান্ডউইথ রপ্তানিতে। এরই মধ্যে ব্যান্ডউইথ নিয়ে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)-এর সঙ্গে চুক্তি করেছে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (বিএসএনএল)। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর মধ্যে ইন্টারনেট সেবা বাড়াতেই ব্যান্ডউইথ কিনছে ভারত। চুক্তি অনুযায়ী ইন্টারনেট সংযোগের জন্য বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে ত্রিপুরার আগরতলা পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল ব্যান্ডউইথ সেবা দেবে বিএসএনএল। অপরদিকে ইন্টারন্যাশনাল পোর্ট (আইপি) ট্রানজিট সেবা দেবে বিএসসিসিএল। প্রাথমিকভাবে এই সেবার টিরেসট্রিয়াল রুট নির্ধারিত হয়েছে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম-কুমিল্লা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে আখাউড়া পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্যায়ে এই রুট হবে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম-কুমিল্লা-ঢাকা-নরসিংদী-ভৈরব-আখাউড়া পর্যন্ত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আখাউড়া পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল (ওএফসি) বসানোর কাজ করবে বিএসসিসিএল। অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল লং ডিস্ট্যান্স (আইএলডি) গেটওয়ে স্থাপন করবে ভারতীয় সংস্থাটি। বিএসসিসিএল এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী প্রথমে এক বছর ব্যান্ডউইথ রপ্তানি করবে বাংলাদেশ। পরে দুই দেশের সম্মতি থাকলে আরও ২ বছর এর মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে। এছাড়া, প্রথম বছর পর ব্যান্ডউইথের মূল্য নিয়ে দর কষাকষি করতে পারবে দুই দেশ। ব্যান্ডউইথ বলতে একটি নেটওয়ার্ক বা মডেম কানেকশনের মাধ্যমে পাঠানো ডাটার পরিমাণ বোঝায়। এটি সাধারণত ‘বাইটস পার সেকেন্ড’ বা বিপিএস দিয়ে পরিমাপ করা হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে দুইশ’ জিবিপিএস ক্ষমতাসম্পন্ন সাবমেরিন ক্যাবল রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩০ জিবিপিএস বাংলাদেশ ব্যবহার করে। বাকি ১৭০ জিবিপিএস অব্যবহৃত। সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি সাবমেরিন ক্যাবল স্থায়ী হয় ২০ থেকে ২৫ বছর। বাংলাদেশের এ ক্যাবলটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৬ সাল থেকে। ভারত ছাড়াও বাংলাদেশের ব্যান্ডউইথ যাচ্ছে ইউরোপের দেশ ইতালিতে। বিএসসিসিএল এরই মধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে চূড়ান্ত অনুমতি পেতে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। অনুমোদন পাওয়া গেলে বাংলাদেশের ব্যান্ডউইথ সক্ষমতার প্রায় অর্ধেক ইতালির স্পার্কেলস কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হবে। বিএসসিএল জানিয়েছে, এ জন্য প্রতিবছর ক্যাবল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ইতালির স্পার্কেলস ৪৮ লাখ টাকা পরিশোধ করবে। বিএসসিসিএল আন্তর্জাতিক সাবমেরিন ক্যাবল কনসোর্টিয়াম সিমিউয়ি-৪ এর সদস্য। ক্যাবলটির সংযোগ ফ্রান্স থেকে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত। এ কারণে যে কোন কোম্পানির পক্ষে এ রুটে ক্যাবল সংযোগ নেয়া সহজ। এরই ভিত্তিতে ইতালির প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের সাবমেরিন ক্যাবল নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে।

No comments

Powered by Blogger.