শৌচাগারে ক্লিনিক

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সৈয়দপুর
কমিউনিটি ক্লিনিকের অসম্পূর্ণ পাকা ভবন। ইনসেটে
শাহ সুন্দর উচ্চবিদ্যালয়ের শৌচাগারকক্ষের ভেতরে
কমিউনিটি ক্লিনিকের আসবাব l প্রথম আলো
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের শাহ সুন্দর উচ্চবিদ্যালয়ে শৌচাগারের কক্ষের একটি অংশে চলছে কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম। এতে রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসে দুর্গন্ধের কারণে কষ্ট পাচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য সরকারিভাবে ভবন নির্মাণ করেছে। কিন্তু ঠিকাদার কাজ শেষ না করে চলে যাওয়ায় ভবনটি আর হস্তান্তর করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এ কারণেই বিদ্যালয়ের কক্ষে চলছে ক্লিনিকের কার্যক্রম। এর নাম সৈয়দপুর কমিউনিটি ক্লিনিক।
সরেজমিনে গত শনিবার দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বসার কক্ষের পাশে ছোট একটি কক্ষের সামনে ‘টয়লেট’ ও ‘সৈয়দপুর কমিউনিটি ক্লিনিক’ লেখা আলাদা দুটি কাগজ সাঁটানো। কক্ষের ভেতরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি শৌচাগার। সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। টয়লেটের ভেতরে দুজন শিক্ষার্থী ঢুকেছে। সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে আরও তিন-চারজন শিক্ষার্থী। এর সামনের সাত-আট ফুট ফাঁকা অংশে একটি টেবিল, দুটি চেয়ার ও একটি আলমারি রাখা। ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্যসেবাকর্মী (কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার-সিএইচসিপি) এক নারীকে দাঁড় করিয়ে রক্তচাপ মাপছেন। শিক্ষকদের কক্ষের বাইরে বারান্দায় পেতে রাখা একটি বেঞ্চে সাত-আটজন রোগী বসে আছে।
সিএইচসিপি আমিনুল ইসলাম জানান, সৈয়দপুর, শ্রীপুর, বনগাঁও, করেরগাঁও, পুরন্দরপুর, গাজীপুর বস্তি ও গাজীপুর চা-বাগানের লোকজন এখানে সেবা নেয়। প্রতিদিন ৫০-৬০ জন রোগী সেখানে আসে। কিন্তু ভেতরে জায়গা একেবারেই কম। নিরাপদ ব্যবস্থা না থাকায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের আলমারিতে ওষুধ রাখা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ক্লিনিকের বিভিন্ন সমস্যা তিনি একাধিকবার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না।
সৈয়দপুর গ্রামের রোগী রাবেয়া বেগম বলেন, এখানে এলে দুর্গন্ধ পাওয়া যায়। এখানে সেবা নেওয়ার কোনো পরিবেশ নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির একাধিক ছাত্রী জানায়, অনেক সময় শৌচাগারের সামনে ক্লিনিকে আসা লোকজন দাঁড়িয়ে থাকেন। তখন সেখানে যেতে তাদের সংকোচ লাগে।
স্বাস্থ্য বিভাগ ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ক্লিনিক স্থাপনের জন্য শাহ সুন্দর উচ্চবিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক প্রণয় কুমার পাল ও করেরগাঁওয়ের লুৎফুর রহমান চৌধুরী পাঁচ শতক জমি দান করেন। ২০০০ সালে ক্লিনিকের পাকা ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। একপর্যায়ে কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন চলে যান। এ অবস্থায় প্রণয় কুমার পালের বাড়িতে কিছুদিন ক্লিনিকের কার্যক্রম চলে। ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে বিদ্যালয়ের টয়লেট কক্ষে ক্লিনিকের কার্যক্রম শুরু করা হয়।
শাহ সুন্দর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল কাইয়ূম বলেন, ‘২০১১ সালে কমিউনিটি ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির লোকজন তিন মাসের জন্য ক্লিনিকের জন্য একটি কক্ষ চান। তখন অতিরিক্ত কক্ষ না থাকায় শৌচাগার কক্ষের ফাঁকা জায়গা ব্যবহারের জন্য তাঁদের অনুমতি দেওয়া হয়। এখনো ক্লিনিক পরিচালনা কমিটি কোনো বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারেনি।
ক্লিনিক পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টা কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহজাহান কবীর চৌধুরী বলেন, ক্লিনিকের বর্তমান অবস্থা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। স্থানীয়ভাবে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না, সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে।

No comments

Powered by Blogger.