ইয়াবা নিয়ন্ত্রণে ৫০ প্রভাবশালী by সরওয়ার আলম শাহীন

পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে প্রায় প্রতিদিনই আসছে ইয়াবা। মিয়ানমারের কারখানায় তৈরি ইয়াবা ব্যবসায় ওপেন সিক্রেটভাবেই জড়িয়ে পড়েছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি। ওই বিজিপির সহায়তায় মিয়ানমারের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও এদেশীয় ৫০ জনের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট মূলত ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রক। আর এসব ইয়াবা পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক ও সমুদ্র লাগোয়া মেরিন ড্রাইভ সড়কসহ বিমান ও নৌপথ। এদেশীয় ৫০ জনের সিন্ডিকেটের মধ্যে অনেকেই রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আর তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ২ শতাধিক পাইকারি বিক্রেতা। এসব বিক্রেতা নিয়ন্ত্রণ করছে ২ সহস্রাধিক খুচরা বিক্রেতাকে। আর এসব মাদক বিক্রেতার সঙ্গে গভীর সখ্য রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তার। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ব্যাপক হারে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ হচ্ছে প্রতিদিন। এসব রোহিঙ্গার বাংলাদেশ সীমান্তে আটকপূর্বক মানবিক সহায়তা দিয়ে পুশব্যাক করা হলেও পুশব্যাককৃত রোহিঙ্গারা পুশব্যাক হচ্ছে না। তারা সীমান্তে নিয়োজিত দালাল ও মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বিজিপির সহায়তায় বাংলাদেশে ঠিকই প্রবেশ করছে। একদিকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকা, অন্যদিকে ইয়াবা অনুপ্রবেশসহ সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধ। এ নিয়ে বিজিবি রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তবুও বিজিবির টহল দলকে ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে আসা কোটি কোটি টাকার ইয়াবা প্রথমে সীমান্ত পয়েন্টগুলো দিয়ে টেকনাফে প্রবেশ করে এবং পরে তা বিভিন্ন পাইকারি বিত্রেুতার হাতে চলে যায়। পাইকারি বিত্রেুতাদের কাছ থেকে উখিয়া, টেকনাফের ২ সহস্‌্রাধিক খুচরা বিক্রেতা এসব মাদক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্নভাবে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে দিচ্ছে।  আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে প্রায় প্রতিদিন  ইয়াবাসহ মাদক আটক হলেও ২ সহস্রাধিক খুচরা বিক্রেতার মাঝে গুটি কয়েক আটক হওয়ায় প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন  স্থানে অনায়াসে চালান হচ্ছে কোটি কোটি টাকার মাদক। আর চিহ্নিত এসব মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে টেকনাফ ও উখিয়া থানা পুলিশের কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সখ্য রয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। মোটর বাইক ছাড়াও ইদানীং অনেক নামিদামি গাড়িতে করেও পাচার হচ্ছে ইয়াবা। কোন কোন গাড়িতে প্রেস ও বিভিন্ন এনজিওর সাইনবোর্ড  সাঁটানো থাকে। প্রেস ও বিভিন্ন এনজিও স্টিকার ব্যবহার করে ভুয়া পরিচয়পত্র বানিয়ে অনেকে এ চক্রের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে। উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাজে লাগিয়ে একাধিক নামসর্বস্ব এনজিও রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সেবার নামে চালিয়ে যাচ্ছে ইয়াবা ব্যবসা ও পাচার। একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। তা ছাড়া আগে থেকেই স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা, গরিব-অসহায় শতাধিক রোহিঙ্গা নারী ও তরুণী সংঘবদ্ধভাবে এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। দীর্ঘদিন ধরে খুচরা ইয়াবা বিক্রির টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প। অনুসন্ধানে জানা গেছে, উখিয়া উপজেলা কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ বহিরাগত ছোট ছোট ঝুপড়ি ঘরে কুতুপালং ক্যাম্প পুলিশের উপস্থিতিতে চলছে মাদক বেচাকেনা। এখানে মূলত বিদেশী মদ, হেরোইন, গাঁজা, ইয়াবা ও ফেনসিডিল বেচাকেনা হয়। সোনারপাড়া, কোটবাজার  ও  হ্নীলা থেকে বিকালের পর থেকে সারারাত কুতুপালং এলাকায় কয়েক শ মোটরসাইকেলে আসে উঠতি বয়সের যুবকরা। ১১টি স্পটে দিনে-রাতে সমানভাবে গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা ও মদ বিক্রি হয়। এর আশপাশে উপস্থিত থাকে ক্যাম্প পুলিশ। জানা গেছে, এ ক্যাম্পসহ বহিরাগত বস্তির রোহিঙ্গাদের মধ্যে ২০০ জনের বেশি লোক মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মাদক বেচাকেনার মধ্যে বেশির ভাগই নারী। মাদক অধিদফতরের কর্তা এবং কুতুপালং ক্যাম্প পুলিশ তাদের কাছ থেকে নিয়মিত টাকা পায় বলে নির্বিঘ্নেই চলে এ ব্যবসা। মাঝেমধ্যে কারও সঙ্গে টাকা লেনদেন নিয়ে ঝামেলা হলেই শুধু তাকে আটক করা হয়। পরে তাদের বেশির ভাগকেই আবার মোটা টাকার বিনিময়ে ছেড়েও দেয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুতুপালং ক্যাম্পের একজন মাদক ব্যবসায়ী জানান, কুতুপালং ক্যাম্প এলাকায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বাংলা মদ, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজা। প্রতিদিন গড়ে ৭ থেকে ১০ কেজি গাঁজা বিক্রি হয়। খুচরা পর্যায়ে ১০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকায় গাঁজার পুরিয়া পাওয়া যায়। ইয়াবার কয়েকটি ক্যাটাগরির মধ্যে এখানে বিক্রি হয় চম্পা। প্রতি পিস ২০০ টাকা দরে দিনে ১০০ থেকে ৩০০ ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি হয়। হেরোইন বিক্রি হয় দিনে ৫০ থেকে ১০০ পুরিয়া। প্রতি পুরিয়ার দাম ৭০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। আর এসব মাদকের ক্রেতা হিসেবে উঠতি বয়সের তরুণের সংখ্যাই বেশি বলে উক্ত মাদক বিত্রেুতা জানান। এ ব্যাপারে উখিয়া সার্কেলর এএসপি জসিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, প্রায় প্রতিদিনই মাদক আটক করা হচ্ছে। মাদকের ব্যাপারে কোন ছাড় দেয়া হবে না। সে যতবড় প্রভাবশালী হউক না কেন তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

No comments

Powered by Blogger.