মানব পাচারের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সনীতি

মানব পাচারের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সনীতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অবৈধভাবে মানব পাচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থান নিয়েছে। সাম্প্রতিককালে অবৈধভাবে মানব পাচার আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাচারকৃত বাংলাদেশী নাগরিকদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনাসহ মানব পাচার রোধে এ অঞ্চলের দেশগুলো যাতে সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে, সেজন্যও আমাদের সর্বাত্মক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সংসদে লিখিত প্রশ্নোত্তরে তিনি একথা জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি আরও জানান, গত বছরের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন-পূর্ববর্তী সময় এবং চলতি বছরের ৫ই জানুয়ারি-পরবর্তী সময়ে অবরোধ-হরতালের নামে বিএনপি-জামায়াতের ভয়াল নাশকতা, সহিংসতা ও মানুষ পুড়িয়ে হত্যার বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। সরকার যে কোন সহিংসতার ঘটনা প্রতিরোধে বদ্ধপরিকর। জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান ও সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পেট্রলবোমায় মানুষ পুড়িয়ে মারাসহ নানা ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে কিংবা যারা এর হুকুমদাতা, তাদের সবার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, মানব পাচার প্রতিরোধে জেলা-উপজেলা-ইউনিয়নপর্যায়ে কাউন্টার ট্রাফিকিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমনে ২০১২ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন’ আইন করা হয়েছে। আইনে মানব পাচারের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, মানব পাচার একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। মানব পাচারকারীরা আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে জড়িত। এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরও উন্নততর ও অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদানে ‘জাতীয় পরিকল্পনা ২০১২-১৪’ প্রণীত ও বাস্তবায়িত হয়েছে। মানব পাচার প্রতিরোধে ‘জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৫-১৭’-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে, যা শিগগিরই প্রকাশিত হবে। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানব পাচার প্রতিরোধ-সংক্রান্ত কমিটির সভা প্রতি মাসে অনুষ্ঠিত হয়। মানব পাচার বিশেষ করে নারী ও শিশু পাচার-সংক্রান্ত বিচারাধীন মামলার অগ্রগতি মনিটর করার বিষয় কমিটিতে পর্যালোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমপ্রতি বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে অবৈধভাবে মানব পাচার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় কোস্টগার্ডের কার্যক্রমও আরও বিস্তৃত হয়েছে। কোস্টগার্ডের টহল বাড়ানো হয়েছে।
দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে বিএনপি-জামায়াত: আওয়ামী লীগ ও ওয়ার্কার্স পার্টির চারজন সংসদ সদস্যের পৃথক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংসতায় ক্ষয়ক্ষতি এবং নিহতদের পরিবারসহ আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে সরকারি পদক্ষেপের বিবরণ তুলে ধরে বলেন, ইস্যুবিহীন আন্দোলন করে তারা কেবল দেশের সম্পদের ক্ষতিই করেনি, তাদের এসব কর্মকাণ্ডে দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৈদেশিক বিনিয়োগ অনেকাংশে নিরুৎসাহিত হয়েছে। এসব নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও অরাজকতার বিরুদ্ধে সারা দেশে অসংখ্য মামলা হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরলস প্রচেষ্টা ও দৃঢ়তায় বিএনপি-জামায়াত জোটের সব অপপ্রয়াস প্রতিহত করে জনজীবনে নিরাপত্তা ও স্বস্তি বজায় রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি। জনগণও আমাদের পাশে ছিল। তারা অনৈতিক অবরোধ ও হরতাল মানেনি। অপরাধীদের ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করে আমাদের সহায়তা করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরসহ বৈদেশিক সম্পর্কোন্নয়নে সরকারের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নতুন মাত্রা লাভ করেছে। এ ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা ও উন্নয়নের নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়েছে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃসংযোগ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা হলে অপেক্ষাকৃত স্বল্পোন্নত অঞ্চলের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত সমৃদ্ধিশালী অঞ্চলের অর্থনৈতিক একীভূত করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, বৈদেশিক সম্পর্কোন্নয়নে সরকার গৃহীত পদক্ষেপগুলোর কারণে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক, শান্তিপ্রিয়, প্রগতিশীল ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হয়েছে। এতে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ও অবস্থান উন্নত ও সুদৃঢ় হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.