রংপুরে জেলা প্রশাসক সিভিল সার্জনসহ ৭১ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ by জাভেদ ইকবাল

রংপুর জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের বাসভবন, জেলখানা হাসপাতালসহ ৭১ ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। ভূমিকম্পে ফাটল দেখা দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে ঢাকায় সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাদের পরামর্শে জেলা প্রশাসক দ্বিতীয় তলার বাসভবন ছেড়ে দিয়ে নিচতলায় এসে বসবাস করছেন। প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, রংপুর বিভাগে দুটি জেলায় ভূমিকম্পে ৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকার ওপরে। এতে করে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবনের বাইরে খোলা মাঠে রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়া ভূমিকম্পে আরও অনেক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা এখনও তাদের ক্ষতির তালিকায় আসেনি। প্রাথমিক শিক্ষা রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী জানা যায়, ২৫, ২৬ ও ২৭শে এপ্রিল এবং ১২ই মে ভূমিকম্পে রংপুর জেলার ৪২টি এবং গাইবান্ধা জেলায় ২৫টি বিদ্যালয় ভবনের ছাদ, দেওয়াল এবং ইটের গাঁথুনিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভূমিকম্পের রংপুর জেলা প্রশাসক ফরিদ আহাম্মদের বাসভনের ছাদ এবং দেওয়ালে ফাটল দেখা দেয়। এছাড়া সিভিল সার্জন এবং বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের বাসভবন এবং জেলাখানার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বাহাদুর আলী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এসব ভবন ঝুুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করেন। যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে তাই এসব ভবনে কাউকে না থাকারও পরামর্শ দেন। এরপর জেলা প্রশাসক তার বাসভবনের দ্বিতীয় তলা ছেড়ে নিচতলায় বসবাস করছেন। জেলা প্রশাসক ফরিদ আহাম্মদ জানান, ঝুঁকি নিয়েই নিচতলায় বসবাস করছি। বিষয়টি ঢাকায় জানানো হয়েছে। অপরদিকে, রংপুর জেলা প্রাথমিক অফিসার এম খলিলুর রহমান জানান, রংপুরে ৪২টি বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে গংগাচড়া উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে, চেংমারী মান্দ্রাই, মান্দ্রাইন, খলেয়া গঞ্জিপুর, উত্তর কিশামত গনেশ, কুতুব, আলে কিশামত দক্ষিণপাড়া, কিশামত কুতুব, পূর্ব খলেয়া, পাইকান জুম্মাপাড়া এবং পশ্চিম খাপড়িখাল। তারাগঞ্জ উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয় হচ্ছে মধুরামপুর, কুর্শা দর্জিপাড়া, ইমামগঞ্জহাট, বরাতি, সয়ার ধোলাইঘাট, চিলাপাক, কাংলাচড়া, বুড়িহাট এবং সয়ার দামোপুর চাকলার পাড়। পীরগঞ্জ উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে রাজে শিবপুর, কাঞ্চনপুর, কুমেদপুর, শেরপুর, ফরিদপুর, ঘোষপুর এবং রসুলপুর, মাদারপুর, মকিমপুর-১, ঘোনা চতরা, হিজলা গাড়ি, পল্লী মঙ্গল, দশমৌজা, বড় ফলিয়া, বড় মজিদপুর এবং আবদুল্লাপুর। পীরগাছা উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয় হচ্ছে হরিরামপুর হাজী এলাহী বকস এবং চৌধুরানী ১ নং। বদরগঞ্জ উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয় হচ্ছে কালিজানি, ঘাটবিল, দামোদরপুর পোদ্দারপাড়া, দক্ষিণ বাওচন্ডী এবং ধর্মপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার একেএম আমিরুল ইসালাম স্বাক্ষরিত পত্রে ২৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ক্ষতিগ্র্রস্ত বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে জামাদারেরর চর, ভাটির চর, কাঠগড়া, বামন ডাঙ্গা বালিকা এবং জামালের হাট। সদর উপজেলার পশ্চিপাড়া, দাড়িয়ারপুর, পূর্ব গোবিন্দপুর, বাদিয়াখালী, ভগবানপুর, ফুলছড়ি, আবদুল্লাহ মেমোরিয়াল, আট গড়গড়িয়া এবং শাহবাজের পাড়া। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলো হলো বিশুবাড়ি, বালুয়া, গুমানিগঞ্জ, উত্তর ছয়ঘড়িয়া, উত্তর সিংগা, উত্তর পোগাইল নয়াপাড়া, আখিরা, কৌচাকৃষ্ণপুর, ক্রোড়গাছা সুইচ গেট এবং কাজলা। প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত এসব বিদ্যালয়ের ক্ষতির পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা হবে। চেংমারী মাদ্রাইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছালমা বেগম, আতিকা জানান ও রুবেল মিয়া জানায় ভূমিকম্পে তাদের বিদ্যালয় ভবনের ছাদ অনেকটা খসে পড়েছে। দেয়ালেও ধরেছে ফাটল। তাই তারা ভয়ে বিদ্যালয় ক্লাসরুমের ভেতরে যাচ্ছে না। বাইরে বসে ক্লাস করছে। মাদ্রাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফিফা, লতিফা বেগম, হামিদ মিয়া জানায়, আমরা ভয়ে ক্লাস রুমের ভেতরে প্রবেশ করি না, যদি ছাদ ভেঙে মাথায় পড়ে। তাই রোদে কষ্ট হলেও গাছতলায় ও মাঠে ক্লাস করছি আমরা। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মাদ্রাইন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, ভূমিকম্পে বিদ্যালয়টির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যালয় ভবনটি দেবে গেছে। অনেক স্থানে ছাদ খুলে পড়েছে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কক্ষের বাইরে ক্লাস করতে হচ্ছে। যে কোন সময় ভবনটি ধসে পড়তে পারে। তিনি দ্রুত বিদ্যালয়টি মেরামতের দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ তালুকদার জানান, এখন পর্যন্ত শুধু রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় ভূমিকম্পে প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের ক্ষতির বিষয়টি তারা পেরেছেন। বিষয়টি তারা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অবহিত করেছেন। এ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে সভাও হয়েছে বলে তিনি জানান। খুব দ্রুত বিদ্যালয় ভবন মেরামতের জন্য ক্ষতিপূরণের অর্থ পাওয়া যাবে।

No comments

Powered by Blogger.